
ছবি: সংগৃহীত
মুজিবনগর সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য মো. মনসুর আলী ও এএইচএম কামারুজ্জামানসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিলের গুজব ছড়ানো সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। বুধবার (৪ জুন) দুপুরে প্রেস উইংয়ের পক্ষ থেকে ‘সিএ প্রেস উইং ফ্যাক্টস’ শিরোনামে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে এই সংবাদগুলোকে ‘সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন, মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
প্রেস উইংয়ের বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়, কয়েকটি জাতীয় দৈনিক—যেমন সমকাল, যুগান্তর, কালের কণ্ঠ, এবং ইত্তেফাক—সম্প্রতি এমন একটি সংবাদ প্রকাশ করেছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে, মুজিবনগর সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বসহ শতাধিক নেতার মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল করা হয়েছে। এ দাবিকে নাকচ করে প্রেস উইং বলেছে, "এই সংবাদগুলো কোনো বাস্তব তথ্যের ভিত্তিতে নয়, বরং গুজব ছড়িয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা মাত্র।"
প্রেস উইং আরও জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম এই ইস্যুতে পরিষ্কার করে বলেন, “মুজিবনগর সরকারে যারা দায়িত্বে ছিলেন—রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী এবং অন্য শীর্ষ নেতৃত্ব—তারা সবাই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত এবং থাকবেন। তারা সরাসরি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন এবং যুদ্ধ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।”
তবে তিনি স্পষ্ট করেন, মুজিবনগর সরকারের অধীন যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনিক দায়িত্বে ছিলেন, তাদেরকে ‘সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই শ্রেণিকরণ কোনো অবমূল্যায়ন নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস ও ভূমিকাকে আরও সুসংহতভাবে সংজ্ঞায়িত করার একটি প্রচেষ্টা।
ফারুক ই আজম বলেন, “জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) অধ্যাদেশ অনুযায়ী স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কর্মী, প্রবাসী কূটনীতিক এবং অন্যান্য যেসব ব্যক্তি সরাসরি অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেননি, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করেছেন—তাদেরকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা হয়েছে। এর মানে এই নয় যে তাদের মর্যাদা বা সম্মানে কোনো কাটছাঁট করা হয়েছে। বরং মুক্তিযোদ্ধা এবং সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা—দুই শ্রেণিরই রাষ্ট্রীয় সম্মান, মর্যাদা, সুযোগ-সুবিধা সমান থাকবে।”
তিনি আরও বলেন, “১৯৭২ সালে সংবিধানে যে সংজ্ঞায় মুক্তিযোদ্ধা চিহ্নিত করা হয়েছিল, সেটাই মূল ভিত্তি হিসেবে ধরা হয়েছে। এরপর ২০১৮ ও ২০২২ সালে এই সংজ্ঞা আরও সুস্পষ্ট ও আধুনিক বাস্তবতার আলোকে পরিমার্জন করা হয়। এই পরিবর্তনের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করা এবং প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্য সম্মান নিশ্চিত করা।”
ফারুক ই আজম জানান, কোনো অবস্থাতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বা মুজিবনগর সরকারের শীর্ষ নেতৃবৃন্দের মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতি বাতিল হয়নি এবং এই ধরনের সংবাদ এক ধরনের ‘উস্কানিমূলক অপপ্রচার’।
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়, যাতে কেউ বিভ্রান্তিমূলক বা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদের ফাঁদে পা না দেন এবং যেকোনো সংবেদনশীল বিষয়ে যাচাই-বাছাই ছাড়া মতামত প্রকাশ না করেন। একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমগুলোকেও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে তথ্য যাচাই করে সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানানো হয়।
উল্লেখ্য, দেশের ইতিহাসে অন্যতম শ্রেষ্ঠ অর্জন মুক্তিযুদ্ধকে ঘিরে রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিসরে দীর্ঘদিন ধরেই বিভ্রান্তিকর প্রচার চালিয়ে আসছে একটি বিশেষ মহল। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে বিতর্কিত করা ও জাতীয় ঐকমত্য বিনষ্ট করার অপচেষ্টা চলমান থাকায় সরকার বিভিন্ন সময় নানা ব্যাখ্যা ও আইনগত সংজ্ঞা দিয়ে এ ধরনের গুজব ও বিভ্রান্তি রোধের চেষ্টা করে আসছে। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইংয়ের এই বিবৃতি সেই ধারাবাহিক উদ্যোগের অংশ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ