
ছবি: সংগৃহীত
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখছেন এবং তিনি পদত্যাগ করছেন না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
শনিবার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকের পর উপদেষ্টা পরিষদের বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই বৈঠক শেষে সংবাদকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা। তিনি স্পষ্ট করে বলেন, "আমরা আমাদের দায়িত্ব শেষ না করে কোথাও যাচ্ছি না।"
তিনি জানান, দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে শুরু হওয়া উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে অগ্রগতির ক্ষেত্রে যে বাধাগুলো সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলো চিহ্নিত করা এবং সমস্যার সমাধান খুঁজে বের করাই ছিল আলোচনার প্রধান লক্ষ্য।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পদত্যাগ করবেন এমন কোনো ঘোষণা দেননি। বরং তিনি পরিষ্কার করে বলেছেন, আমরা যে দায়িত্ব নিয়েছি তা সহজ নয় এবং সামনে নানা প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে আমরা সেই বাধাগুলো অতিক্রম করেই আমাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাব।”
পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “আমরা মনে করি, দেশের ভবিষ্যৎ এই দায়িত্বের সঠিক বাস্তবায়নের ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করছে। সেই কারণে আমরা এটি ছেড়ে যেতে পারি না। আমরা দেখছি, কোথা থেকে কী ধরনের বাধা আসছে, আমাদের অগ্রযাত্রায় কোথায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে এবং কীভাবে তা মোকাবিলা করা যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা শুধু সরকার পরিচালনার জন্য আসিনি, বরং গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে সৃষ্ট একটি জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে আমাদের ওপর যে দায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে, সেটিকে সম্মানের সঙ্গে পালন করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য আমাদের শুধু রাজনৈতিক দলগুলোর নয়, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, বেসামরিক প্রতিষ্ঠান এবং জনগণের সক্রিয় সহযোগিতা দরকার।”
ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ এই সময় উপস্থিত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহ্বান জানান যে, "আপনারা আমাদের একা ভাববেন না। গণঅভ্যুত্থান শুধু রাজনীতির ব্যাপার নয়, এটি একটি জাতীয় চেতনার বহিঃপ্রকাশ। সুতরাং এই সরকারকে সফল করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।”
তিনি আরও যোগ করেন, “উপদেষ্টারা কেউ স্বপ্রণোদিত হয়ে এখানে আসেননি। তারা কারো চাপ বা লোভে এখানে আসেননি। তবে জাতির এই সংকটময় মুহূর্তে তাদের ওপর একটি বিশেষ দায়িত্ব বর্তেছে। সেই দায়িত্ব তাঁরা জাতীয় স্বার্থে পালন করে যাবেন।”
সাংবাদিকদের প্রশ্ন ছিল, এই বৈঠকে আগামী জাতীয় নির্বাচনের কোনো রূপরেখা নিয়ে আলোচনা হয়েছে কি না। জবাবে পরিকল্পনা উপদেষ্টা সরাসরি কিছু না বললেও, ইঙ্গিতপূর্ণভাবে বলেন, "আমাদের লক্ষ্য হলো ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্যকর ও টেকসই ভিত্তি তৈরি করা। যেটি নির্বাচন ছাড়াও প্রশাসনিক ও নীতিগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তের ভিত্তি স্থাপন করবে।”
উল্লেখ্য, বিগত কয়েকদিন ধরেই নানা গুঞ্জন ছিল যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস পদত্যাগ করতে যাচ্ছেন। বিশেষ করে এনবিআর বিভাজন ঘিরে প্রশাসনের একটি অংশের অসন্তোষ, বিভিন্ন পেশাদার সংগঠনের আন্দোলন, আইনজীবীদের একাংশের খোলা চিঠি এবং কিছু আন্তর্জাতিক মহলের মন্তব্য—এসব কারণে রাজনৈতিক মহলে এমন জল্পনা তৈরি হয়।
তবে শনিবারের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর পরিকল্পনা উপদেষ্টার এই বক্তব্যে সেই জল্পনার অবসান ঘটেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
তাঁদের মতে, সরকারের ওপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে এ ধরনের স্পষ্ট বার্তা প্রয়োজন ছিল। এতে একটি স্থিতিশীল বার্তা গেছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার সংকটকে পিছনে ফেলে সামনে এগিয়ে যেতে চায় এবং দায়িত্ব এড়িয়ে যাওয়া তাদের উদ্দেশ্য নয়।
সরকারি কর্মকর্তাদের অনেকেই মনে করছেন, উপদেষ্টাদের এই অবস্থান দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। পাশাপাশি চলমান রাজস্ব প্রশাসন সংস্কারসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সরকার এখন আরও বিবেচনার সঙ্গে এগোবে।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্তর্বর্তী সরকারের যে কোনো ধরনের নড়বড়ে অবস্থান রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা তৈরি করতে পারে। তাই উপদেষ্টা পরিষদের এই বার্তা জনমনে আস্থা ফিরিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
এনবিআর ইস্যুতে আন্দোলনরত কর্মকর্তাদের দাবির প্রেক্ষিতে সরকার অধ্যাদেশ কার্যকর না করে আলোচনার মাধ্যমে পর্যালোচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা প্রশাসনের ভেতরে একটি ইতিবাচক বার্তা দিয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় উপদেষ্টাদের দায়িত্ব পালন অব্যাহত রাখার ঘোষণা রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ