
ছবি: সংগৃহীত
সীমান্ত ঘিরে কোনো ভয় বা উদ্বেগের কারণ নেই বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কৃষি ও স্বরাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, “আমাদের সীমান্ত সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ। কোনো ধরনের নিরাপত্তা ঘাটতি নেই। ফলে সীমান্ত এলাকায় কৃষি কার্যক্রম নির্বিঘ্নে চলবে এবং কৃষকরা নিশ্চিন্তে ধান কাটতে পারবেন।”
বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুরে দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার মোকলেছপুর ইউনিয়নের ঢেলপীর ব্লকে উচ্চফলনশীল ‘বোরো ব্রি ধান-৮৮’ কাটার উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে তিনি ধান কাটার কাজে সরাসরি অংশ নেন এবং স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন।
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের প্রায় ৪০ শতাংশ মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। অতীতে যখন দেশের জনসংখ্যা ছিল ৭ কোটির মতো, তখন কৃষিজমির পরিমাণ ছিল তুলনামূলক অনেক বেশি। কিন্তু বর্তমানে আমাদের জনসংখ্যা ১৮ কোটির কাছাকাছি হওয়ায় কৃষিজমি ক্রমাগত কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষা করতে হলে আমাদের অবশ্যই উন্নত জাত ও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি কাজে লাগাতে হবে।”
কৃষির বর্তমান উন্নয়ন প্রসঙ্গে উপদেষ্টা বলেন, “আমাদের বিজ্ঞানীরা এবং কৃষকরা যে কঠোর পরিশ্রম করে চলেছেন, তাতে দেশের ধান উৎপাদনে ধারাবাহিক অগ্রগতি হচ্ছে। ব্রি ধান-৮৮ এর মতো উন্নত জাত ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হচ্ছে। কৃষকদের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে, আর সরকারও সরাসরি মাঠে নেমে সহায়তা করছে।”
তিনি আরও বলেন, “কৃষিজমি রক্ষার জন্য আমরা শিগগিরই একটি নতুন আইন করার চিন্তা করছি। ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ও কৃষিজমি সংরক্ষণ আইনের খসড়া প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এতে করে কৃষিজমিতে ইটভাটা, শিল্প-কারখানা বা আবাসিক প্রকল্পের মতো অননুমোদিত কার্যক্রম বন্ধ করা সহজ হবে। আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে—কৃষিজমিকে রক্ষা করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।”
তিনি জানান, নতুন নীতিমালায় ইটভাটা স্থাপন, কৃষিজমিতে অননুমোদিত স্থাপনা নির্মাণ, এবং ভূমির অপব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। “এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা নতুনভাবে ভাবছি, যাতে ভবিষ্যতে কৃষির ক্ষতি না হয়।”
উপদেষ্টার এই সফরে সঙ্গী ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব তরিকুল ইসলাম, রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহীদুল ইসলাম, রংপুর রেঞ্জের ডিআইজি আমিনুল ইসলাম, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মজিদ আলী এবং রংপুর বিভাগের ৮ জেলার বিভিন্ন প্রশাসনিক ও কৃষি বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
এসময় স্থানীয় কৃষকরা তাদের সমস্যার কথা তুলে ধরেন এবং বোরো ধান কাটার মৌসুমে শ্রমিক সংকট ও যান্ত্রিক সহায়তার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনার সুযোগ পান। কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে আরও দ্রুত ও সহজভাবে কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহ এবং সেচে বিদ্যুতের নিশ্চয়তা দাবি করেন। উপদেষ্টা এসব দাবি গুরুত্বসহকারে বিবেচনার আশ্বাস দেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে সরকার যদি কৃষিজমি রক্ষায় কঠোর নীতি গ্রহণ করে এবং উন্নত জাতের ধান ও যান্ত্রিক সহায়তা আরও বিস্তৃত করে, তাহলে দেশে খাদ্য উৎপাদন বহুগুণে বাড়বে এবং খাদ্য আমদানি নির্ভরতা কমবে।
এই সফরকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা যায় এবং তারা সরকারের এমন সরাসরি মাঠ পর্যায়ের সম্পৃক্ততা ও সহযোগিতাকে সাধুবাদ জানান।
বাংলাবার্তা/এমএইচ