
ছবি: সংগৃহীত
ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের মাধ্যমে রেড অ্যালার্ট জারির প্রক্রিয়া শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) আনুষ্ঠানিকভাবে পুলিশ সদর দপ্তরে একটি চিঠি পাঠিয়েছে দুদক। এ চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পের প্লট জালিয়াতির মামলায় আসামি হাসিনা ও জয় বর্তমানে বিদেশে অবস্থান করছেন এবং তারা ন্যায়বিচার থেকে পালিয়ে গেছেন। আদালত ইতোমধ্যে তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন। তাই ইন্টারপোলের রেড অ্যালার্ট জারি করে তাদের অবস্থান শনাক্ত ও দেশে ফিরিয়ে আনা জরুরি।
দুদকের অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনা এবং তার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেআইনিভাবে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে একাধিক প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। তারা প্রভাব খাটিয়ে অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন করেছেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এই ঘটনার অনুসন্ধান শুরু হয় ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসে। দীর্ঘ তদন্ত শেষে দুর্নীতি দমন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে মামলা দায়ের করে এবং তা আদালতে উপস্থাপন করা হয়। মামলায় হাসিনা ও জয়কে প্রধান আসামি করা হয়।
মামলার অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করে আদালত উভয় আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। কিন্তু তারা দেশের বাইরে অবস্থান করায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষে সরাসরি গ্রেপ্তার সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের সহায়তা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দুদকের পক্ষ থেকে পুলিশের মহাপরিদর্শককে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, আসামিদের অবস্থান চিহ্নিত করতে ইন্টারপোলের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি। এজন্য রেড অ্যালার্ট জারি করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
এই ঘটনার পর রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শেখ হাসিনা ও তার পুত্র জয়ের বিরুদ্ধে এ ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশি রাজনীতিতে এক অভূতপূর্ব দৃষ্টান্ত। কেউ কেউ এটিকে ন্যায়বিচারের অগ্রগতি হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকে এটিকে রাজনৈতিক প্রতিশোধের বহিঃপ্রকাশ বলে দাবি করছেন। বিশেষত, তাদের বিদেশে অবস্থানকে কেন্দ্র করে নানা জল্পনা-কল্পনা তৈরি হয়েছে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, ইন্টারপোলের সহযোগিতায় আসামিদের দেশে ফিরিয়ে আনা কতটা বাস্তবসম্মত হবে।
দুদকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চিঠি পাঠানোর পর এখন পুলিশের আন্তর্জাতিক শাখা বিষয়টি ইন্টারপোলের সদর দপ্তরে পাঠাবে। ইন্টারপোল যদি রেড অ্যালার্ট জারি করে, তবে বিশ্বের যেকোনো দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাদের অবস্থান শনাক্ত করতে পারবে এবং গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশ সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য থাকবে। তবে পুরো প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ হতে পারে এবং এতে রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক জটিলতাও জড়িত হতে পারে।
দুদকের একজন কর্মকর্তা বলেন, “এটি একটি উচ্চপ্রোফাইল মামলা। ন্যায়বিচারের স্বার্থে আমরা চাই আসামিদের দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার নিশ্চিত করতে। এজন্য ইন্টারপোলের সহযোগিতা অপরিহার্য।”
এই প্রক্রিয়ায় আগামী দিনগুলোতে কী ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া আসে, তা নিয়ে সবার দৃষ্টি এখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ