
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বহুল আলোচিত একটি বিষয় হচ্ছে মূল্যস্ফীতি। সাম্প্রতিক মাসগুলোতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও সার্বিক জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির কারণে জনসাধারণের মাঝে উদ্বেগ বাড়লেও, এখন দৃশ্যপট ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করেছে। অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহীত নীতি-কৌশলের সুফল পেতে শুরু করেছে দেশ। সোমবার (৭ জুলাই) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে জানান, সরকারের কার্যকর ও সুচিন্তিত কৌশলের ফলে দেশের মূল্যস্ফীতি দ্রুত কমছে, এবং আগামীতে এটি আরও হ্রাস পাবে বলেও তিনি আশাবাদ প্রকাশ করেন।
প্রেস সচিব তার পোস্টে জুন ২০২৫ মাসের হালনাগাদ পরিসংখ্যান তুলে ধরেন। তিনি জানান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) প্রকাশিত উপাত্ত অনুযায়ী, জুন মাসে দেশের পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে ৮.৪৮ শতাংশে। গত বছরের আগস্টে এই হার ছিল ১০.৫ শতাংশের কাছাকাছি। অর্থাৎ গত ১০ মাসে প্রায় ২ শতাংশ-পয়েন্ট কমেছে মূল্যস্ফীতির হার, যা এক গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যস্ফীতি উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। জুন ২০২৫ মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি কমে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৯ শতাংশে, যা গত দুই বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। অর্থাৎ খাদ্যদ্রব্যের দাম স্থিতিশীল হচ্ছে, যা নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য অত্যন্ত স্বস্তিদায়ক খবর।
প্রেস সচিব আরও বলেন, খাদ্য-বহির্ভূত (নন-ফুড) খাতে মূল্যস্ফীতি কমারও লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার ভাষায়, “খাদ্য-বহির্ভূত মূল্যস্ফীতিও হ্রাস পেতে শুরু করেছে এবং আগামীতে তা খুব দ্রুত আরও হ্রাস পাবে।”
অর্থনীতিবিদ ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের সূত্র মতে, অন্তর্বর্তী সরকার মূল্যস্ফীতির লাগাম টানতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে: অতিরিক্ত মুদ্রা সরবরাহ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আর্থিক নীতি; আমদানি নির্ভর পণ্যে শুল্ক ও কর হ্রাস; ভর্তুকি ও প্রণোদনার মাধ্যমে কৃষিপণ্য উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ; সরকার নিয়ন্ত্রিত ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) মাধ্যমে স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীকে ন্যায্যমূল্যে পণ্য সরবরাহ।
এই নীতিগুলোর সম্মিলিত প্রভাবে বাজারে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে ভারসাম্য ফিরছে, যা মূল্যস্ফীতি কমাতে সহায়ক হয়েছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম তার পোস্টে স্পষ্ট করে বলেছেন, “বর্তমান সরকারের নীতিকৌশল জনমুখী এবং বাস্তবধর্মী। আমরা শুধু মূল্যস্ফীতি কমানোর দিকে মনোযোগ দিচ্ছি না, বরং অর্থনীতির সামগ্রিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতেও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”
তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আগামী মাসগুলোতে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপগুলো আরও বেশি কার্যকর হবে এবং মূল্যস্ফীতির হার ধাপে ধাপে কমে জনগণের উপর চাপ হ্রাস পাবে।”
মূল্যস্ফীতি কমার এই ঘোষণাকে সাধুবাদ জানিয়েছে সাধারণ জনগণ ও ব্যবসায়ী মহল। ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো বলছে, “মূল্যস্ফীতি কমলে বিনিয়োগের পরিবেশ আরও অনুকূল হবে এবং ভোক্তাদের ব্যয়ক্ষমতা বাড়বে।” বিশেষ করে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত শ্রেণির নাগরিকদের জন্য এটি এক স্বস্তির খবর।
অর্থনীতিবিদদের মতে, যদিও ৮.৪৮ শতাংশ মূল্যস্ফীতি এখনো কাঙ্ক্ষিত নয়, তবে এটি আগের তুলনায় অনেক স্থিতিশীল। তারা পরামর্শ দিয়েছেন, খাদ্য ও জ্বালানি বাজারে মনিটরিং আরও জোরদার করে এই হারকে ৬ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ খাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে মূল্যস্ফীতির হার কমে আসা। সরকার যদি একইভাবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা, কৃষি উৎপাদন, মুদ্রানীতি এবং সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলো চালিয়ে যেতে পারে, তবে অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি ও জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে তা ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলেই আশা করা যায়। প্রেস সচিবের দেওয়া এই তথ্য সেই সম্ভাবনারই বাস্তব ভিত্তি তুলে ধরছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ