
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান আন্দোলন ঘিরে আজ রোববার (২৯ জুন) আন্দোলনকারী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের বৈঠক হচ্ছে না বলে নিশ্চিত করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়। এর মধ্য দিয়ে রাজস্ব খাতের চলমান অচলাবস্থার নিরসনে প্রত্যাশিত আলোচনা প্রক্রিয়া আপাতত অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
রোববার দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের অর্থ মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আন্দোলনকারীরা যদি শাটডাউন কর্মসূচি চালিয়ে যেতে চান, তারা তা করতেই পারেন। আজ তাদের সঙ্গে কোনো বৈঠক হচ্ছে না। বিষয়টি উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে, এবং এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হবে।”
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, আজকের উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, এনবিআরের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আজ বৈঠকে না বসার। এমনকি আগামী ১ জুলাই নির্ধারিত আলোচনা সভাটিও আদৌ হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে পরে জানানো হবে।
তবে বিপরীত তথ্য এসেছে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ সূত্র থেকে। এনবিআর সংস্কার পরিষদের আন্দোলনকারী সদস্যদের বরাতে জানা গেছে, আজ বিকেল ৪টায় অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। এতে আন্দোলন স্থগিত না হলেও আলোচনার পথ উন্মুক্ত থাকবে বলে তাদের আশা।
এনবিআরের আন্দোলন বর্তমানে দ্বিতীয় দিনে গড়িয়েছে। সকাল ৯টা থেকেই কর ভবন, কাস্টমস হাউজ ও কর অঞ্চলগুলো থেকে শত শত কর্মকর্তা-কর্মচারী রাজধানীর সেগুনবাগিচাস্থ রাজস্ব ভবনের সামনে জড়ো হন। প্রধান ফটকের সামনে তাদের অবস্থান কর্মসূচি এখনো চলমান রয়েছে। রাজস্ব প্রশাসনের এমন শাটডাউন কর্মসূচিতে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজস্ব আদায় কার্যক্রম প্রায় পুরোপুরি স্থবির হয়ে গেছে।
এ সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে রাজস্ব ভবনের সামনে মোতায়েন রয়েছে বিপুল সংখ্যক পুলিশ সদস্য ও র্যাব। তবে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি বলে জানিয়েছে ডিএমপি।
আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, সব পক্ষের সম্মতিতে রাজস্ব প্রশাসনে বাস্তবভিত্তিক ও টেকসই সংস্কার আনতেই তাদের এই কর্মসূচি। তাঁরা চাইছেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে রাজনীতিমুক্ত ও স্বাধীনভাবে পরিচালনার জন্য বিদ্যমান কাঠামো সংস্কার করা হোক।
এনবিআর সংস্কার পরিষদের ব্যানারে চলমান এই আন্দোলনের অন্যতম দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— রাজস্ব বোর্ডের প্রশাসনিক স্বায়ত্তশাসন নিশ্চিত করা, এনবিআর চেয়ারম্যানের পদে অভ্যন্তরীণ কর প্রশাসনের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া, অস্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ করা, এবং চলমান ডিজিটাল কর ব্যবস্থায় সকল স্তরের কর্মীদের সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে আধুনিকায়ন নিশ্চিত করা।
বিগত কয়েকদিন ধরে এই আন্দোলনের কারণে করদাতা ও সেবাগ্রহীতাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। আয়ের কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক), আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত শুল্ক— সব কার্যক্রমেই ধীরগতির ছাপ পড়েছে। ফলে অর্থনৈতিক লেনদেন ও বাণিজ্যিক কার্যক্রমে স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।
বিশেষ করে বন্দরে পণ্য ছাড়করণের ক্ষেত্রে দেখা দিয়েছে জট। অনেক আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক বলছেন, সময়মতো চালান ছাড় না হওয়ায় তাদের বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
তবে এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক ফ্লাইটে যাত্রীসেবা, কাস্টমস ক্লিয়ারেন্স এবং সীমিত জরুরি করসেবা এই শাটডাউনের আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
নানা দিক থেকে এই আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী মহলে। জাতীয় রাজস্ব খাতে দীর্ঘ সময় শাটডাউন চলতে থাকলে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা করছেন তারা। বিশেষ করে ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট বাস্তবায়নে যে পরিমাণ রাজস্ব প্রয়োজন, তা অর্জনের পথে বড় ধাক্কা হতে পারে এই অচলাবস্থা।
এদিকে আন্দোলনকারীরা বলছেন, এই সংকটের সমাধান করতে হলে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সদিচ্ছা ও কার্যকর পদক্ষেপ দরকার। শুধু বৈঠকের আশ্বাস নয়, দ্রুত একটি গ্রহণযোগ্য রূপরেখা তারা দেখতে চান, যেখানে সকল পক্ষের মতামত প্রতিফলিত হবে।
সর্বশেষ, আজকের দিন শেষে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক আদৌ হয় কি না, সেটিই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে। আলোচনা না হলে আন্দোলন আরও তীব্র রূপ নিতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
পরিস্থিতির দিকে নজর রাখছে প্রশাসন, ব্যবসায়ী সংগঠন ও করপোরেট খাত— কারণ রাজস্ব খাতের স্থবিরতা অচিরেই পুরো অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক ছাপ ফেলতে পারে।
বাংলাবার্তা/এসজে