
ছবি: সংগৃহীত
মার্কিন সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সরাসরি হুমকির জবাবে এক কঠোর বার্তা দিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি। তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘যুদ্ধ শুরু হয়েছে।’ মঙ্গলবার (১৭ জুন) এক্স (সাবেক টুইটার)–এ পোস্ট করে ট্রাম্পের বক্তব্যের জবাবে এই প্রতিক্রিয়া জানান তিনি।
খামেনি এক বিস্ফোরক বার্তায় লিখেছেন, “মর্যাদাবান হায়দারের নামে, যুদ্ধ শুরু হলো।” এই ঘোষণায় শুধু যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে নয়, বরং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধের মানসিক প্রস্তুতিরই আভাস দিয়েছেন তিনি। তার এই পোস্ট মুহূর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনার নতুন ঢেউ তোলে।
এর আগে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কয়েকটি উস্কানিমূলক পোস্ট দেন এক্সে। সেখানে তিনি ইঙ্গিতপূর্ণভাবে লেখেন, “আমরা জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন। তিনি খুব সহজ লক্ষ্যবস্তু।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমরা তাকে এখনই বের করে আনছি না, অন্তত এই মুহূর্তে নয়।” পাশাপাশি ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর সামরিক হুঁশিয়ারিও দেন তিনি। তার ভাষায়, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। আনকন্ডিশনাল সারেন্ডার!” অর্থাৎ তিনি ইরানের প্রতি নিঃশর্ত আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান, যা কার্যত যুদ্ধ ঘোষণার শামিল বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এই মন্তব্যের পরপরই ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রতিক্রিয়া আসে। তিনি স্পষ্ট বলেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। জায়ানবাদীদের কোনো দয়া দেখানো হবে না।”
ট্রাম্পের সরাসরি হুমকি এবং খামেনির ‘যুদ্ধ ঘোষণামূলক’ বার্তার ফলে ইতোমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যের ভূ-রাজনীতিতে বড় ধরনের অস্থিরতা শুরু হয়েছে। ইরান আগেই জানিয়েছিল, তারা ইসরায়েলের সাম্প্রতিক বিমান হামলার প্রতিশোধ নেবে। কিন্তু এবার ট্রাম্প ইরানের শীর্ষ নেতার ঠিকানা জানার দাবি করে যেভাবে তাকে টার্গেট করার হুমকি দিলেন, তা বিষয়টিকে কূটনৈতিক মাত্রা ছাড়িয়ে সামরিক সংঘাতের পথে ঠেলে দিচ্ছে।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, যদি যুক্তরাষ্ট্র সত্যিই ইরানের আকাশসীমা দখলে নিয়ে নেয় এবং দেশটির শীর্ষ নেতাদের টার্গেট করে, তাহলে তা সরাসরি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের মধ্যে পড়ে। পাশাপাশি, ইরানও যদি ইসরায়েল বা মার্কিন স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালায়, তাহলে তৃতীয় পক্ষ—যেমন রাশিয়া, চীন কিংবা হিজবুল্লাহ ও হামাসের মতো গোষ্ঠীগুলোর সরাসরি জড়ানোর আশঙ্কা তৈরি হবে।
চীন ইতোমধ্যে ট্রাম্পের এই বক্তব্যের কড়া সমালোচনা করেছে। বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, মধ্যপ্রাচ্যে এমনিতেই উত্তেজনা চরমে, সেখানে একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদের এমন বক্তব্য ‘আগুনে ঘি ঢালার’ মতো।
চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বলেন, “আমরা দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। যুদ্ধ উসকে দিয়ে কেউই লাভবান হবে না।”
খামেনি তাঁর বার্তায় শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, ইসরায়েলকে সরাসরি আক্রমণ করেন ভাষাগতভাবে। তিনি লেখেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়া হবে।” ইসরায়েলের সাম্প্রতিক গাজা ও লেবাননে হামলার পর থেকেই ইরান কঠোর প্রতিক্রিয়ার হুমকি দিয়ে আসছিল।
তবে এবার ট্রাম্পের ব্যক্তিগত আক্রমণ এবং ‘লুকিয়ে থাকা’ বলে খোঁচা দেওয়ার পর খামেনি যেন ‘ধৈর্যের সীমা ছাড়িয়ে গেলেন’ বলেই আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের বিশ্লেষণ।
ট্রাম্প অবশ্য পরিষ্কার করে বলেছেন, তিনি চান না আমেরিকান বেসামরিক বা সেনাদের ক্ষেপণাস্ত্রের লক্ষ্য হতে হোক। তবে তিনি এ-ও বলেন, “আমাদের ধৈর্য ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে।” এটা এক ধরনের আল্টিমেটাম হিসেবেই ব্যাখ্যা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
পরিস্থিতি এখন ভয়াবহ এক মোড় নিতে চলেছে। দুই রাষ্ট্রের শীর্ষ নেতার এ ধরনের প্রকাশ্য হুমকি বিনিময়ের নজির সাম্প্রতিক ইতিহাসে বিরল। এখন প্রশ্ন হলো—এই উত্তপ্ত বার্তা বিনিময় কূটনৈতিক পরিসরে সীমাবদ্ধ থাকবে, নাকি বাস্তব যুদ্ধের রূপ নেবে?
জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও ওআইসি এখনো এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে শঙ্কার মেঘ জমতে শুরু করেছে। একে অনেকেই নতুন আরেকটি মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধের পূর্বাভাস বলেই দেখছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ