
ছবি: সংগৃহীত
গ্রীষ্মের তীব্র গরম এবং তাপপ্রবাহের সময়ে শিশুদের সুস্থ রাখা এক বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় অনেক বাবা-মায়ের কাছে। বিশেষ করে সদ্যোজাত ও এক বছরের কম বয়সি শিশুদের যত্নে গোসল করানো নিয়ে দেখা দেয় বিভ্রান্তি—প্রতিদিন গোসল করানো কি ঠিক? আবার নিয়মিত গোসল না করালে শিশুর শরীর খারাপ হয়ে যাবে কি না, এমন প্রশ্নও ঘুরপাক খায়। অন্যদিকে, এক বছর বা তার বেশি বয়সি শিশুদের ক্ষেত্রে আরও একটি প্রশ্ন উঠে আসে—এই প্রচণ্ড গরমে শিশুকে ঠান্ডা পানিতে গোসল করানো উচিত, না ঈষদোষ্ণ পানিতে? এসব প্রশ্নের যথাযথ উত্তর জানা না থাকলে শিশুর শরীর এবং ত্বক দুটোই ঝুঁকিতে পড়তে পারে।
এই প্রসঙ্গে শিশুরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, গরমের সময় শিশুদের নিয়মিত গোসল করানো যেতে পারে, তবে এর জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকানুন মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। কারণ শিশুর ত্বক বড়দের চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ বেশি স্পর্শকাতর এবং কোমল হয়, ফলে সামান্য অবহেলাতেও ত্বকে সমস্যা দেখা দিতে পারে।
গোসলের সময় নির্ধারণ করা জরুরি
গোসল করানোর সবচেয়ে উপযুক্ত সময় সকাল। সকালে শরীর স্বাভাবিক তাপমাত্রায় থাকে, এবং সূর্য যত উপরের দিকে উঠতে থাকে, ততই চারপাশের তাপমাত্রা বেড়ে যায়, ফলে দুপুর বা বিকেল বেলায় গোসল করালে শিশুর ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতিদিন একই সময়ে গোসল করানোর অভ্যাস গড়ে তুললে শিশুর শরীরের ঘড়ি (Biological Clock) একটি ছন্দে অভ্যস্ত হয়ে যায়, যা পরোক্ষভাবে শিশুর সুস্বাস্থ্যের সহায়ক।
ঈষদোষ্ণ পানিই শিশুর জন্য সঠিক
অনেক অভিভাবকই গরমের দিনে রাতভর পানি রেখে সকালে সেই ঠান্ডা পানি দিয়ে শিশুকে গোসল করান। তবে এটা অত্যন্ত ক্ষতিকর। হঠাৎ ঠান্ডা পানির সংস্পর্শে এলেই শিশুর শরীরে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে, এমনকি জ্বর পর্যন্ত হতে পারে। তাই সবচেয়ে ভালো হয় যদি ঈষদোষ্ণ পানি ব্যবহার করা হয়। এই পানি যেন খুব বেশি গরম না হয়, আবার ঠান্ডাও না হয়, সে দিকেও খেয়াল রাখতে হবে।
গোসলের সময় হবে সংক্ষিপ্ত
অনেক বাবা-মা ভাবেন প্রচণ্ড গরমে দীর্ঘ সময় ধরে শিশুকে পানি দিয়ে ধুয়ে রাখা ভাল। কিন্তু তা শিশুর জন্য নিরাপদ নয়। পাঁচ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের গোসলের সময়সীমা ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখাই উত্তম। দীর্ঘক্ষণ পানিতে থাকলে শিশুর ত্বক রুক্ষ হয়ে যেতে পারে এবং শীতল পানির সংস্পর্শে বেশি সময় থাকলে শরীরে ঠান্ডা লাগার আশঙ্কা বাড়ে।
গোসলের পর শরীর পুরোপুরি মুছে নিতে হবে, যাতে শিশুর শরীরে কোনো ভেজাভাব না থাকে। এরপর নরম ময়েশ্চারাইজার বা অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে হবে, যা শিশুর ত্বককে মসৃণ ও হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে।
সাবান ও শ্যাম্পু ব্যবহারে সতর্কতা
প্রতিদিন সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহারের অভ্যাস শিশুর জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। শিশুর ত্বক প্রাকৃতিকভাবে তৈলাক্ত এবং সংবেদনশীল হওয়ায় অতিরিক্ত ক্ষারযুক্ত সাবান তা শুষ্ক ও রুক্ষ করে দিতে পারে। তাই প্রতিদিন সাবান না ব্যবহার করে, নরম সুতির কাপড় বা স্পঞ্জ দিয়ে শিশুর শরীর পরিষ্কার করাই শ্রেয়। সপ্তাহে দুই-তিনবার মৃদু ফর্মুলার বেবি সাবান বা শ্যাম্পু ব্যবহার করাই যথেষ্ট।
গোসলের পর যেসব ময়েশ্চারাইজার বা বেবি অয়েল ব্যবহার করবেন, সেগুলো শিশুর ত্বকের ধরন অনুযায়ী নির্বাচন করা উচিত। বিশেষ করে কোনো শিশু যদি অ্যালার্জিপ্রবণ হয়, তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া নতুন কিছু প্রয়োগ করা ঠিক নয়।
বাইরে থেকে ফিরেই গোসল নয়
শিশুকে যদি বাইরে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে ফিরে এসেই গোসল করানো একেবারেই ঠিক নয়। বাইরে থেকে এসে শরীর যখন ঘামের কারণে উত্তপ্ত থাকে, তখন হঠাৎ গোসল করালে শিশুর শরীরে ঠান্ডা লেগে যেতে পারে। তাই ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় অন্তত ১৫-২০ মিনিট অপেক্ষা করার পরেই গোসল করানো উচিত।
শিশু যদি গরম থেকে ফিরে শরীরে জ্বালা বা অ্যালার্জির উপসর্গ দেখায়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে গোসল করানো উচিত। নিজেরা অনুমানভিত্তিক সিদ্ধান্ত না নিয়ে পেশাদার পরামর্শ নেওয়াই নিরাপদ।
গরমের পোশাক বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
শুধু গোসল নয়, তার পরবর্তী ধাপেও সতর্কতা প্রয়োজন। গোসলের পরে শিশুকে হালকা, ঢিলে ও আরামদায়ক সুতির পোশাক পরানো উচিত। সিন্থেটিক, নাইলন বা জর্জেটের মতো কাপড় শিশুর ত্বকে ঘাম জমিয়ে দেয় এবং নানা রকম চুলকানি, র্যাশ বা ফুসকুড়ির সৃষ্টি করতে পারে। সুতরাং গরমে শিশুর পোশাক নির্বাচনে অতিরিক্ত যত্নবান হওয়া জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ