
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহায় মুক্তিপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি চর্চায় উঠে এসেছে ঢাকাই সিনেমার দুই তারকা শাকিব খান ও শরিফুল রাজ অভিনীত দুটি ছবির নাম— ‘তাণ্ডব’ ও ‘ইনসাফ’। এই দুই সিনেমা ঈদের বাজারে একদিকে যেমন ব্যবসাসফল হয়েছে, অন্যদিকে দর্শকমনে জাগিয়েছে নতুন প্রত্যাশা। তারকাবহুল কাস্টিং, চমকপ্রদ ক্যামিও উপস্থিতি এবং অ্যাকশন-থ্রিলার ধাঁচের গল্প—সব মিলিয়ে এসব সিনেমা দর্শকদের কাছে হয়ে উঠেছে ঈদের বিশেষ আকর্ষণ। এখন শুধু আলোচনা নয়, বরং শুরু হয়েছে অপেক্ষা—এই দুই সিনেমার সিকুয়্যাল ঘিরে।
সিনেমার গল্প, গান কিংবা দৃশ্যায়ন—সব কিছুতেই প্রশংসিত হয়েছে রায়হান রাফী পরিচালিত ‘তাণ্ডব’। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই সিনেমাটি দেশজুড়ে দর্শকের উচ্ছ্বাসে ভাসছে। বিশেষ করে শাকিব খানের অ্যাকশন-পারফরম্যান্স, তার স্টাইল ও সংলাপ ছিল দর্শকদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। শুধু তাই নয়, আফরান নিশো ও সিয়াম আহমেদের হঠাৎ ক্যামিও উপস্থিতি সিনেমায় নিয়ে এসেছে বাড়তি উত্তেজনা, যা প্রেক্ষাগৃহে দর্শকদের চমকে দিয়েছে।
তিন দিনেই প্রায় দুই কোটি টাকার বেশি ব্যবসা করে ফেলেছে ‘তাণ্ডব’। দেশের মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে যেমন দারুণ সাড়া ফেলেছে, তেমনি সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোতেও চলছে হাউসফুল শো। ঈদের অন্য সিনেমাগুলোর তুলনায় এটি বাণিজ্যিক সফলতার দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে অনেকটাই।
শাকিব খান, জয়া আহসান, সিয়াম আহমেদ, আফরান নিশো, সাবিলা নূর, আফজাল হোসেন, ফজলুর রহমান বাবু, কাজী রাকায়েত, রোজী সিদ্দিকী, এফএস নাঈম ও ডা. এজাজসহ একঝাঁক তারকার উপস্থিতি সিনেমাটিকে দিয়েছে বাড়তি আভিজাত্য। পুরো সিনেমার আবহে একধরনের হলিউড-বলিউড ধাঁচের ইউনিভার্স তৈরির ইঙ্গিতও লক্ষ্য করা গেছে।
তবে সিনেমার শেষ দৃশ্যেই দর্শকরা দেখতে পান স্পষ্ট একটি বার্তা—"Tandob 2 Loading"। এর মাধ্যমে নিশ্চিত হয়ে যায়, পরিচালক রায়হান রাফী দ্বিতীয় কিস্তির পরিকল্পনা আগে থেকেই মাথায় রেখেছেন। দর্শকদের জিজ্ঞাসা এখন—কবে আসবে তাণ্ডব টু?
রায়হান রাফী জানিয়েছেন, “আমরা এখনই অফিশিয়ালি ঘোষণা দিতে চাই না। তবে আমরা যে একটা ইউনিভার্স তৈরির কথা ভাবছি, তার একটা ছাপ এই সিনেমায় রয়েছে। তুফান সিনেমার সাথেও এই ইউনিভার্সের কোনো সংযোগ থাকতে পারে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে শিগগিরই আমরা ঘোষণা দেব।”
শুধু একটি সিকুয়্যাল নয়, বরং ‘তুফান’ ও ‘তাণ্ডব’ নিয়ে পুরো একটি সিনেম্যাটিক ইউনিভার্স গঠনের পরিকল্পনা করছেন পরিচালক রাফী, যা বলিউডের ‘কপ ইউনিভার্স’ বা হলিউডের ‘মার্ভেল ইউনিভার্স’-এর মতো হতে পারে বলে ধারণা করছেন সিনেমাপ্রেমীরা।
অন্যদিকে পরিচালক সঞ্জয় সমদ্দার পরিচালিত অ্যাকশন থ্রিলার সিনেমা ‘ইনসাফ’ নিয়েও কম উত্তেজনা নেই। এই সিনেমায় শরিফুল রাজ ও তাসনিয়া ফারিণের জুটি যেমন আলোচিত হয়েছে, তেমনি সিনেমার মধ্যভাগে দর্শকদের চমকে দিয়েছেন মোশাররফ করিম এবং শেষ মুহূর্তে ক্যামিও হাজির হয়ে চঞ্চল চৌধুরী।
সিনেমার থিম ছিল সামাজিক ন্যায়বিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে এক তরুণের লড়াই। দুর্বল বিচারব্যবস্থা ও পুঁজিপতিদের দাপটের বিপরীতে দাঁড়ানো এক তরুণ ও সাংবাদিকের দুঃসাহসিক অভিযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে গল্পে। রাজের অভিনয়, ফারিণের কাবিল প্রশংসা-যোগ্য পারফরম্যান্স এবং মোশাররফ-চঞ্চলের উপস্থিতি মিলে সিনেমাটি ঈদে বেশ আলোচনার সৃষ্টি করেছে।
সঞ্জয় সমদ্দার জানিয়েছেন, ইনসাফের দ্বিতীয় কিস্তি নিয়ে বড় পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি বলেন, “মোশাররফ করিম এবং চঞ্চল চৌধুরীকে আমরা ইনসাফ টু’তে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখাবো। ইনসাফ টু শুধু সিকুয়্যাল নয়, বরং এর মাধ্যমে আমরা পুরো এক ‘ন্যায়বিচার-ইউনিভার্স’ গড়ার কথা ভাবছি।”
পরিচালক আরও বলেন, “চঞ্চল চৌধুরী সিনেমার একদম শেষে হাজির হয়েছেন একটি রহস্যময় চরিত্রে। তার চরিত্রে অনেক সম্ভাবনা রয়েছে। একইভাবে মোশাররফ করিমের চরিত্রটিও ছিল অস্পষ্ট এবং প্রশ্নবিদ্ধ। দর্শক হয়তো বুঝতে পেরেছেন, আমরা এই চরিত্রদুটিকে সামনে রেখেই আরও বড় পরিসরে গল্প বিস্তার করতে চাই।”
‘তাণ্ডব’ ও ‘ইনসাফ’—এই দুটি সিনেমাই ঈদুল আজহার সবচেয়ে আলোচিত ও বাণিজ্যিকভাবে সফল সিনেমা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সিনেমাপ্রেমীরা যেমন এর গল্প, অভিনয় ও নির্মাণশৈলীতে সন্তুষ্ট, তেমনি তারা ভবিষ্যৎ পর্বগুলোর প্রতীক্ষাতেও প্রহর গুনছেন।
দর্শকদের মতে, দীর্ঘদিন পর ঢালিউডে এমন ঈদ এসেছে, যেখানে সিনেমা শুধু বিনোদন নয়, বরং দর্শন, বক্তব্য ও থ্রিল—সব কিছু মিলিয়ে নতুন যুগের সূচনা করেছে। এখন শুধু অপেক্ষা, ‘তাণ্ডব টু’ এবং ‘ইনসাফ টু’—এই দুটি সিকুয়্যাল দর্শকদের কতটা চমক দিতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ