
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অধীন কাস্টমস ও ভ্যাট বিভাগের নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা দীর্ঘদিনের বঞ্চনার প্রতিবাদে এবং নিজেদের পরিচয়ের সম্মান রক্ষার দাবিতে আবারও সংগঠিত হয়ে উঠেছেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, এসব কর্মকর্তা তাদের পুরোনো ও প্রথাগত পদবি—‘ইন্সপেক্টর’ এবং ‘সুপারিনটেনডেন্ট’—পুনর্বহালের দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন পেশাগত প্রোফাইল পরিবর্তন করে ঐতিহাসিক পদবিগুলো আবার যুক্ত করেছেন।
বর্তমানে যারা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা (ARO) ও রাজস্ব কর্মকর্তা (RO) হিসেবে নিয়োজিত, তারা মূলত কাস্টমস ও ভ্যাটের মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন। তারা দাবি করছেন, এক সময় তাদের এই পদবিগুলোই ছিল দেশের কাস্টমস প্রশাসনের চালিকাশক্তি। অথচ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বিগত সরকার ক্ষমতায় আসার পর ‘ইন্সপেক্টর’ এবং ‘সুপারিনটেনডেন্ট’ পদবিগুলো বাতিল করে নতুনভাবে তাদের ‘সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা’ ও ‘রাজস্ব কর্মকর্তা’ হিসেবে নামকরণ করে। কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিবর্তন শুধু নামেই নয়, বরং এটি একটি অপমানজনক অবস্থার সৃষ্টি করেছে। কারণ, নতুন পদবির সাথে অতীত ঐতিহ্য, পেশাগত মর্যাদা ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি—সবই হারিয়ে গেছে।
এ কারণে সম্প্রতি আবারো দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন কর্মকর্তারা। সূত্র জানিয়েছে, এনবিআরের অধীনে কর্মরত প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তা এই আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে শুধুমাত্র প্রোফাইল পরিবর্তন নয়, তারা এখন গণস্বাক্ষর সংগ্রহ কর্মসূচিও শুরু করেছেন, যা চলমান রয়েছে দেশের প্রতিটি বিভাগ ও জেলায়। এই গণস্বাক্ষরের মাধ্যমে এনবিআর কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছেন তারা—“আমরা আমাদের মর্যাদা ফিরে চাই”।
পদবি পুনর্বহালের দাবিতে তারা ইতোমধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান বরাবর একটি লিখিত আবেদনও জমা দিয়েছেন। সেখানে তারা উল্লেখ করেছেন, এই পরিবর্তনের ফলে আন্তর্জাতিক মিশন, বৈদেশিক প্রশিক্ষণ বা সহযোগিতামূলক প্রকল্পে অংশগ্রহণের সময় পরিচয় সংকট তৈরি হয়। আন্তর্জাতিক কাস্টমস কার্যক্রমে "ইন্সপেক্টর" বা "সুপারিনটেনডেন্ট" পদবিগুলো বহু বছর ধরে স্বীকৃত ও ব্যবহৃত হয়ে আসছে। নতুন পদবিগুলো এই প্রেক্ষাপটে পরিচিত নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আন্দোলনরত কর্মকর্তা জানান, “আমরা কোনো অতিরিক্ত সুবিধা চাই না, শুধু আমাদের পরিচয়ের যে সম্মান ছিল, সেটি ফিরে পেতে চাই। এই পদবি শুধু নাম নয়, এটি একটি ইতিহাস, একটি দায়িত্ব, একটি মর্যাদা বহন করে।”
তিনি আরও জানান, “আমাদের সহকর্মীরা কেউ কেউ চাকরিজীবনের শুরু থেকে এই পদবির স্বপ্ন দেখেছেন। অনেকের বাবা বা আত্মীয় এই পদবিতেই রাষ্ট্রের জন্য কাজ করেছেন। আজ হঠাৎ করে সেই ঐতিহাসিক পদবির বিলুপ্তি মানতে পারছি না।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, পদবি পরিবর্তনের মাধ্যমে কোনো শ্রেণির পেশাগত গৌরব হরণ করা হলে তা দীর্ঘমেয়াদে কর্মী-মনোবল ও কার্যক্ষমতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এ ধরনের পদক্ষেপ শুধু প্রশাসনিক নয়, এটি মানসিক ও সাংগঠনিক ক্ষেত্রেও গুরুত্ব বহন করে।
এই প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে, কাস্টমস ও ভ্যাট কর্মকর্তাদের আন্দোলন কেবল একটি নাম পুনর্বহালের দাবি নয়, এটি একটি বৃহৎ সাংগঠনিক পরিচয় এবং আত্মমর্যাদার প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এখন দেখার বিষয়—সরকার এবং এনবিআর এই দাবি কীভাবে বিবেচনা করে এবং দীর্ঘদিনের এই পেশাগত বঞ্চনার অবসান ঘটাতে কী পদক্ষেপ নেয়।
বাংলাবার্তা/এসজে