
ছবি: সংগৃহীত
মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলার নিমতলা এলাকায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে একটি ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (৮ মে) দুপুর আনুমানিক ১টার দিকে এ মর্মান্তিক দুর্ঘটনাটি ঘটে, যখন একটি যাত্রীবাহী বাস থেমে থাকা একটি অ্যাম্বুলেন্সকে পেছন থেকে সজোরে ধাক্কা দেয়। দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৩ জন। নিহতদের মধ্যে একজন নারী ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান, আর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকায় নেওয়ার পথে মারা যান আরও চারজন।
প্রত্যক্ষদর্শী ও ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্সটি একটি রোগীকে বহন করে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল। পথে সিরাজদিখানের নিমতলা এলাকায় অ্যাম্বুলেন্সটির একটি চাকা হঠাৎ পাংচার হয়ে গেলে চালক তা থামিয়ে মহাসড়কের একপাশে মেরামতের কাজ শুরু করেন। ওই সময় অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগী ও তাঁর স্বজনরা গাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। হঠাৎ করে পেছন থেকে বেপরোয়া গতিতে ছুটে আসা ‘গোল্ডেন লাইন পরিবহণ’-এর একটি যাত্রীবাহী বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সরাসরি অ্যাম্বুলেন্সটিকে ধাক্কা দেয়। ধাক্কায় অ্যাম্বুলেন্সটি দুমড়েমুচড়ে যায় এবং পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রীদের গা ঘেঁষে চলে যায় বাসটি, যার ফলে গুরুতর আহত হন অন্তত ৮ জন।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের একটি উদ্ধারকারী দল দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে আসে। তারা গুরুতর আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে নিকটবর্তী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায় এবং গুরুতর অবস্থায় থাকা কয়েকজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়। তবে চিকিৎসা নেবার আগেই অ্যাম্বুলেন্সে থাকা আরও চারজনের মৃত্যু ঘটে। এই দুর্ঘটনায় হতাহতদের মধ্যে রোগী, তাঁর আত্মীয় এবং অ্যাম্বুলেন্সকর্মীরাও রয়েছেন বলে জানা গেছে।
শ্রীনগর ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন অফিসার দেওয়ান আজাদ সাংবাদিকদের জানান, ঘটনাস্থলেই একজন নারী যাত্রী নিহত হন। তাঁর মরদেহ বর্তমানে হাইওয়ে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। নিহতদের নাম-পরিচয় এখনো জানা যায়নি। তিনি আরও জানান, দুর্ঘটনার পরপরই মহাসড়কে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, তবে কিছু সময় পর তা স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়।
স্থানীয়রা বলছেন, মহাসড়কে দ্রুতগামী বাসগুলোর বেপরোয়া চালনা এবং পর্যাপ্ত নজরদারির অভাবই এমন দুর্ঘটনার কারণ। তারা দাবি করছেন, মহাসড়কে থেমে থাকা যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য নিয়মিতভাবে হাইওয়ে পুলিশ টহল ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এদিকে দুর্ঘটনার পর গোল্ডেন লাইন পরিবহণের বাসটি ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলেও পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাসটিকে আটক করে। বাসের চালক পালিয়ে গেছেন বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। পুলিশ তাঁর সন্ধানে অভিযান শুরু করেছে।
দুর্ঘটনার এই করুণ চিত্র স্থানীয় এলাকাবাসী ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। নেটিজেনরা পরিবহন নৈরাজ্য, দুর্বল সড়ক নিরাপত্তা এবং যাত্রীসেবায় অনিয়মের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
এই দুর্ঘটনা সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাপনার দুর্বলতা এবং পরিবহন চালকদের দায়িত্বজ্ঞানহীনতার আরেকটি দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে, যা অবিলম্বে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। নিহতদের আত্মার শান্তি কামনা এবং আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ