
ছবি: সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বসতে যাচ্ছে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ টুর্নামেন্ট—ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ ২০২৫। ১৪ জুন থেকে ১৩ জুলাই পর্যন্ত চলবে এই জমকালো আয়োজন। প্রথমবারের মতো ৩২টি ক্লাব দল নিয়ে হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট, যা বিশ্বকাপের আদলে আয়োজিত হচ্ছে। ১১টি শহরের ১২টি ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচগুলো। টুর্নামেন্টের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি। সবচেয়ে সফল দল হিসেবে পাঁচবারের শিরোপাজয়ী স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদও আছে এবারের আসরে।
সব মিলিয়ে এবারকার ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের প্রাইজমানি দাঁড়িয়েছে ১০০ কোটি মার্কিন ডলার, যা অভূতপূর্ব। আয়োজক দেশ যুক্তরাষ্ট্র এবং ফিফা এই আসরকে বাণিজ্যিকভাবে বড় পরিসরে নেয়ার সব প্রস্তুতি সেরেছে। কিন্তু সব আয়োজনের মাঝেও কিছুটা খালি খালি লাগছে ফুটবলপ্রেমীদের। কারণ, এবারের আসরে দেখা যাবে না পাঁচজন মহাতারকা ফুটবলারকে, যারা বর্তমান সময়ের অন্যতম আইকন হিসেবে স্বীকৃত। তাদের অনুপস্থিতি শুধুমাত্র প্রতিযোগিতার মঞ্চকেই নয়, দর্শক-উন্মাদনাকেও প্রভাবিত করতে পারে।
এএফপি স্পোর্টসের তৈরি করা এই তালিকায় আছেন—মোহামেদ সালাহ, লামিনে ইয়ামাল, ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো, বুকায়ো সাকা ও নেইমার। এদের প্রত্যেকেরই একক উপস্থিতি একটা ম্যাচকে ভিন্ন মাত্রা দিতে পারে। এবার সেই আলোটাই ম্লান হয়ে গেল এই পাঁচজনের অনুপস্থিতিতে।
মোহামেদ সালাহ (লিভারপুল)
বর্তমান প্রজন্মের অন্যতম ধারাবাহিক স্ট্রাইকার মিশরের মোহামেদ সালাহ। তার নামেই প্রিমিয়ার লিগে একের পর এক গোলের রেকর্ড। ২০২৩-২৪ মৌসুমে তিনি লিভারপুলের হয়ে করেছেন ২৯ গোল, দিয়েছেন ১৮টি অ্যাসিস্ট। অথচ সেই সালাহকেই দেখা যাবে না ক্লাব বিশ্বকাপে।
এর কারণ জটিল কোয়ালিফায়ার প্রক্রিয়া। প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন হলেও ক্লাব বিশ্বকাপে জায়গা পায়নি লিভারপুল, কারণ ইউরোপ থেকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই কোটা নির্ধারণ করা হয়েছে। তাই টুর্নামেন্টের এক উজ্জ্বল নাম বাদ পড়ল এক অদ্ভুত নিয়মের কারণে।
লামিনে ইয়ামাল (বার্সেলোনা)
মাত্র ১৭ বছর বয়সে বার্সেলোনা ও স্পেন জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ হয়ে ওঠা লামিনে ইয়ামাল ফুটবলবিশ্বে এখন আলোচিত এক নাম। অসাধারণ পা-চালনা, ড্রিবলিং, পাসিং এবং গোল করার দক্ষতায় তিনি ভবিষ্যতের মেসি বলেও বিবেচিত হচ্ছেন।
বার্সেলোনার হয়ে এবারের মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে গোল ও অ্যাসিস্ট করে দলের অন্যতম স্তম্ভ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করেছেন তিনি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে বার্সা ক্লাব বিশ্বকাপে খেলছে না, কারণ তাদের সাম্প্রতিক ইউরোপিয়ান পারফরম্যান্স ছিল হতাশাজনক। ফলে ফুটবল ভক্তরা লামিনের জাদু দেখা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো (আল নাসর)
পর্তুগালের ফুটবল রাজপুত্র, আধুনিক ফুটবলের অন্যতম কিংবদন্তি, পাঁচবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোও থাকছেন না এই বিশ্বকাপে। সৌদি আরবের ক্লাব আল নাসরে খেলা এই সুপারস্টার যদি কোনো অংশগ্রহণকারী ক্লাবে যোগ দিতেন, তাহলে হয়তো ভিন্ন ছবি দেখা যেত।
কিন্তু সেটা না হওয়ায়, ৪০ বছর বয়সেও দুর্দান্ত ফর্মে থাকা রোনালদোকে দেখতে পারছে না বিশ্ব। অনেকেই ভাবছিলেন রোনালদো বনাম মেসির শেষবারের মতো মুখোমুখি দেখার সুযোগ হতে পারে এই টুর্নামেন্টে। তবে রোনালদোর অনুপস্থিতিতে সেই সম্ভাবনাটাও শেষ হয়ে গেল।
বুকায়ো সাকা (আর্সেনাল)
ইংল্যান্ড জাতীয় দল এবং আর্সেনালের অন্যতম নির্ভরযোগ্য উইঙ্গার বুকায়ো সাকা। ক্লাব ও দেশের হয়ে একের পর এক দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে চলেছেন তিনি। তবে তার ক্লাব আর্সেনালও এই টুর্নামেন্টে জায়গা করে নিতে পারেনি।
চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনাল পর্যন্ত গেলেও কোয়ালিফাইং পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় তারা বাদ পড়েছে। ফলে সাকাও বাদ পড়লেন এই চাঁদের হাট থেকে। ট্রফি না জিতে মৌসুম শেষ করা আর্সেনালের জন্য এটা বাড়তি দুঃখের কারণ হয়ে থাকবে।
নেইমার জুনিয়র (সান্তোস)
এক সময়ের বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার নেইমার জুনিয়র। ব্রাজিলিয়ান এই সুপারস্টার বর্তমানে খেলছেন ব্রাজিলের ক্লাব সান্তোসে।
তবে ক্লাব বিশ্বকাপে খেলতে হলে সান্তোসকে দক্ষিণ আমেরিকার প্রতিযোগিতায় শীর্ষস্থানীয় হতে হতো। সেটা না হওয়ায় বাদ পড়েছেন নেইমারও। যদিও তিনি চোটের কারণে অনেক দিন ধরেই মাঠের বাইরে আছেন, তবুও তার নামটাই পর্যাপ্ত ছিল মার্কেটিংয়ে উত্তাপ বাড়াতে।
বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের টিকিট বিক্রিতে নেইমারের অনুপস্থিতি একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। জনপ্রিয়তার দিক থেকে তিনি এখনও শীর্ষে। তার না থাকাটা আয়োজকদের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ক্ষতিসাধনের মতো।
বিশ্ব ফুটবলের সবচেয়ে বড় ক্লাব প্রতিযোগিতা এবার আরও বড় পরিসরে হলেও এই পাঁচ মহাতারকার অনুপস্থিতি ফুটবল বিশ্বকে খানিকটা নিরুত্তাপ করে দিয়েছে। সালাহ, ইয়ামাল, রোনালদো, সাকা ও নেইমার—প্রতিটি নামই আলাদা আলো ছড়ায় মাঠে। তাদের ছাড়া এই চাঁদের হাট যেন চাঁদহীন অমাবস্যা রাত।
আয়োজকরা যতোই চেষ্টা করুন, তাদের শূন্যতা টের পাওয়া যাবেই। ফুটবলভক্তরা অবশ্য আশা রাখছেন, ভবিষ্যতের আসরে আবারও দেখা যাবে এই তারকাদের—পুরোদমে, পূর্ণ জৌলুসে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ