
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ (ডিপিএল) ২০২৪–২৫ মৌসুমের এক প্রকার অলিখিত ফাইনালে আবাহনীর কাছে ৬ উইকেটের পরাজয়ে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের। ম্যাচ শেষে মাঠের উত্তাপ গ্যালারিতেও ছড়িয়ে পড়ে এক অভূতপূর্ব ঘটনার মধ্য দিয়ে—যেখানে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞ, শান্ত স্বভাবের খেলোয়াড় মাহমুদউল্লাহ রিয়াদকে হঠাৎ এক দর্শকের দিকে তেড়ে যেতে দেখা যায়। বিষয়টি দেখে বিস্ময় ও আলোড়নের সৃষ্টি হয় ক্রিকেট অঙ্গনে। প্রশ্ন ওঠে, এমন কী ঘটেছিল মাঠের বাইরে যে একজন সাধারণত ঠাণ্ডা মাথার সিনিয়র ক্রিকেটার এতটা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হলেন?
এই প্রশ্নের উত্তর মিলেছে ম্যাচশেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়া এক দর্শকের বর্ণনায়। সেই সমর্থকের নাম মোহাম্মদ নাদিম। তার দাবি অনুযায়ী, ঘটনাটি সরাসরি তার সঙ্গেই ঘটেছে এবং পুরো পরিস্থিতি ছিল এক বড় ভুল বোঝাবুঝির ফল।
ঘটনার বিস্তারিত জানাতে গিয়ে নাদিম ফেসবুকে লেখেন, “ম্যাচশেষে মিরপুর স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের নিচে গেলে মোহামেডান ক্লাব থেকে একটি পানির বোতল দেওয়া হয়। তখন আমি পানি পান করছিলাম এবং খেলোয়াড়দের ড্রেসিংরুমে ফেরার দৃশ্য দেখছিলাম। মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ যখন ড্রেসিংরুমে ফিরছিলেন, আমি তখন তাকে লক্ষ্য করে বলি, ‘ভাই, ভালো খেলসেন, হ্যাটস অফ টু ইউ।’ তার পেছনে থাকা মোহামেডানের টিম ম্যানেজার সাজ্জাদুল হক শিপনকে উদ্দেশ্য করে তখন বলি, ‘শিপন ভাই, প্রতি বছর কি ভুয়া টিম করেন?’”
তিনি আরও লেখেন, “ভুয়া শব্দটি উচ্চারণ করার সময় সেটা রিয়াদ ভাই শুনতে পান এবং ভেবে বসেন, আমি তাকেই ভুয়া বলেছি। অথচ আমি স্পষ্ট করে বলেছিলাম, ‘ভুয়া টিম করেন।’ এই শব্দচয়ন ছিল ক্লাব পরিচালনা ও দল গঠনের কৌশলের প্রতি খোঁচা, রিয়াদ ভাইয়ের প্রতি নয়। কিন্তু রিয়াদ ভাই হয়তো ড্রেসিংরুমে থাকার কারণে শব্দের প্রসঙ্গ ও প্রেক্ষাপট বুঝতে পারেননি। ফলে তিনি রেগে গিয়ে আমার দিকে তেড়ে আসেন।”
প্রসঙ্গত, মাঠের নিরাপত্তা ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তারা দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেন এবং মাহমুদউল্লাহকে সেখান থেকে সরিয়ে নিয়ে যান। যদিও পরে মোহামেডানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, ঘটনাটি ছিল ‘ভুল বোঝাবুঝির’ ফলাফল। ক্লাব ম্যানেজার গণমাধ্যমে বলেন, “গ্যালারির এক দর্শক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে ‘ভুয়া’ মন্তব্য করেছিলেন। রিয়াদ ভেবেছিলেন, সেটা তার জন্য বলা হয়েছে। সেই ভুল বোঝাবুঝির কারণেই রিয়াদ গ্যালারির দিকে গিয়েছিলেন।”
ঘটনার প্রেক্ষিতে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এখনও পর্যন্ত কোনো মন্তব্য করেননি, কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও কোনো প্রতিক্রিয়া জানাননি। তবে দীর্ঘদিনের ক্যারিয়ারে ঠাণ্ডা মাথার ক্রিকেটার হিসেবে পরিচিত রিয়াদের এমন আচরণ অনেককে অবাক করেছে। জাতীয় দলে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা ও নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে ভদ্র স্বভাবের প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত এই ক্রিকেটারের এমন আচরণ নিঃসন্দেহে একটি ব্যতিক্রমী ও দুর্লভ দৃশ্য।
মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব এ ঘটনার বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি, তবে ক্লাব কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরিস্থিতি নিয়ে তারা অভ্যন্তরীণ আলোচনা করছেন।
ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ ও সাবেক খেলোয়াড়দের মতে, এমন পরিস্থিতি এড়াতে মাঠে ও গ্যালারিতে আরও স্পষ্ট নিরাপত্তা ও পেশাদার যোগাযোগ দরকার। তারা মনে করছেন, খেলোয়াড়দের মানসিক চাপ বেড়ে গেলে কিংবা কোনো ভুল ব্যাখ্যা তৈরি হলে এমন ঘটনাও ঘটতে পারে।
এদিকে, আবাহনীর জয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা নির্ধারিত হওয়ায় মোহামেডানের বহু প্রতীক্ষিত সাফল্যের স্বপ্ন ভেঙে যায়। হতাশা, ক্লান্তি ও ভুল বোঝাবুঝি মিলে যে দৃশ্য তৈরি হয়েছিল—তা যেন মাঠের নাটকীয়তারই এক বাড়তি অধ্যায় হয়ে রইল।
বাংলাবার্তা/এমএইচ