
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ ২৪ বছর পর আবারও ওয়ানডে বিশ্বকাপের মতো ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় আয়োজন ফিরছে আফ্রিকা মহাদেশে। ২০২৭ সালের ৫০ ওভারের বিশ্বকাপ আয়োজন করবে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়া। বৃহস্পতিবার (২২ আগস্ট) ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকা (সিএসএ) আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিয়েছে এই আয়োজনের প্রস্তুতির কথা। ক্রিকেটের মহাযজ্ঞকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে দেশটিতে শুরু হয়ে গেছে উৎসবমুখর পরিবেশ।
সিএসএর ঘোষণায় জানানো হয়েছে, ২০২৭ বিশ্বকাপকে সফলভাবে আয়োজনের জন্য একটি স্থানীয় আয়োজক কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটির নেতৃত্বে রয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক অর্থমন্ত্রী ও অভিজ্ঞ প্রশাসক ট্রেভর ম্যানুয়েল। তার দীর্ঘ রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা বিশ্বকাপের মতো বড় আয়োজনকে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছে আয়োজকরা।
মোট ৫৪ ম্যাচের মধ্যে ৪৪টি অনুষ্ঠিত হবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিভিন্ন ভেন্যুতে। বাকি ১০টি ম্যাচ ভাগ হয়ে যাবে জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ার মাঠে। আফ্রিকার তিনটি দেশের যৌথ এই আয়োজনকে আয়োজকরা দেখছেন “মহাদেশের ক্রিকেটকে আরও শক্তিশালী করার অনন্য সুযোগ” হিসেবে।
সিএসএর ঘোষণায় আটটি ভেন্যুর নাম নিশ্চিত করা হয়েছে। এগুলো হলো— জোহানেসবার্গ, প্রিটোরিয়া, কেপটাউন, ডারবন, গকেবারহা (পূর্বে পোর্ট এলিজাবেথ), ব্লুমফন্টেইন, ইস্ট লন্ডন এবং পার্ল।
এ ভেন্যুগুলো কেবল দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেট ইতিহাসের সাক্ষীই নয়, বরং অতীতে বহু স্মরণীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ আয়োজন করেছে। ফলে আয়োজকরা আশা করছেন, সমৃদ্ধ ঐতিহ্য ও আধুনিক অবকাঠামোর মেলবন্ধনে এক বিশ্বমানের অভিজ্ঞতা দিতে সক্ষম হবে এই স্টেডিয়ামগুলো।
২০০৩ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়া যৌথভাবে আয়োজক হয়েছিল ওয়ানডে বিশ্বকাপের। সেই আসরে ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে বিশ্বের শীর্ষ দলগুলো খেলেছিল আফ্রিকার মাটিতে। যদিও বিতর্কিত কিছু ঘটনার কারণে সেই বিশ্বকাপ আলোচনায় এসেছিল, তবে সামগ্রিকভাবে আফ্রিকার ক্রিকেট অবকাঠামো ও আয়োজনের দক্ষতার প্রমাণ মিলেছিল তখনই।
এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপ আয়োজন করে দু’বার— ২০০৫ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপ এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ২০২৩ সালের আসরে নিজেদের মাঠে দারুণ ক্রিকেট খেলেও ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে যায় স্বাগতিক দল। তবু দর্শক, ক্রিকেটার ও আইসিসির প্রশংসা কুড়িয়েছিল দক্ষিণ আফ্রিকার আয়োজন।
ক্রিকেট সাউথ আফ্রিকার চেয়ারম্যান পার্ল ম্যাফোশে বিশ্বকাপকে ঘিরে বলেছেন— “আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে এমন এক বিশ্বমানের ও অনুপ্রেরণামূলক আসর উপহার দেওয়া, যা দক্ষিণ আফ্রিকার বহুমাত্রিকতা, অন্তর্ভুক্তি ও ঐক্যকে প্রতিফলিত করবে। বিশ্বকাপ কেবল ক্রিকেটের প্রতিযোগিতা নয়, এটি আমাদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও অতিথিপরায়ণতার প্রদর্শনী।”
তিনি আরও যোগ করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার জনগণ আবারও প্রমাণ করবে যে তারা ক্রীড়া আয়োজনে দক্ষ এবং বিশ্ববাসীর জন্য স্মরণীয় মুহূর্ত তৈরি করতে সক্ষম।
আফ্রিকা মহাদেশে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা ধীরে ধীরে বাড়ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকা, জিম্বাবুয়ে ও নামিবিয়ায় খেলার প্রতি মানুষের আগ্রহ দৃশ্যমান। তাই ২০২৭ বিশ্বকাপকে ঘিরে প্রত্যাশা, আফ্রিকান ক্রিকেট নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রাণিত করবে এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ক্রিকেটের পরিধি আরও বিস্তৃত হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা সর্বশেষ ২০০৩ সালে পুরুষদের ওয়ানডে বিশ্বকাপ আয়োজন করেছিল। এরপর দীর্ঘ বিরতি শেষে আবারও মহাদেশটিতে ফিরছে ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় মঞ্চ। ২০২৭ সালের সেই আয়োজন নিঃসন্দেহে হবে আফ্রিকার জন্য গৌরবের মুহূর্ত, আর বিশ্ব ক্রিকেটের জন্য এক মহা উৎসব।
বাংলাবার্তা/এমএইচ