
ছবি: সংগৃহীত
হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, যিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানব হিসেবে পরিচিত, তার জীবনে এবং উম্মতের জন্য সবচেয়ে বড় উপহার ছিল তাঁর দান করা মুজিজা, যা আজও মানবজাতিকে আলোর পথে পরিচালিত করছে। নবীজি যে মুজিজা প্রদান করেছেন, তা হলো পবিত্র কোরআন, যা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানবিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক উপহার হিসেবে গণ্য করা হয়।
মুজিজা এমন এক শক্তি বা নিদর্শনকে বলা হয় যা মানুষের সাধারণ ক্ষমতার বাইরে থাকে, এমন কিছু যা পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য এক অতীন্দ্রিয় কৃতিত্ব। প্রতিটি নবীই তার সময়ের মানুষের জন্য কিছু না কিছু মুজিজা প্রদান করেছেন, যার মাধ্যমে তারা মানবতাকে একটি সঠিক পথ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। তবে আমাদের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্য আল্লাহ তাআলা যে মুজিজা প্রদান করেছেন, তা অন্যান্য সকল মুজিজার তুলনায় ব্যতিক্রমী এবং চিরন্তন।
কোরআনের অসীম শক্তি ও অলংকার
পবিত্র কোরআন শুধু ধর্মীয় গ্রন্থই নয়, এটি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের নিদর্শন। কোরআন নাজিল হয়েছিল যখন আরবি সাহিত্যের স্বর্ণযুগ চলছে। আরবরা তখন কবিতা ও সাহিত্য রচনার ক্ষেত্রে খুবই শক্তিশালী ছিল। তারা কবিতার মাধ্যমে সম্মান ও মর্যাদা অর্জন করত। আরবদের মধ্যে কবিতার প্রতিযোগিতা ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক এবং তারা সেরা কবিতাগুলো কাবা ঘরের দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখতো।
এ পরিস্থিতিতে মহান আল্লাহ তাদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেন পবিত্র কোরআন নাজিল করে। আল্লাহ বলেন, “এ কোরআনের সমতুল্য একটি আয়াত বা সুরা রচনা করে দেখাও, যদি তোমরা তা পারো।” পৃথিবীর ইতিহাসে এ ধরনের চ্যালেঞ্জ কোনো ধর্মগ্রন্থের ক্ষেত্রে আগে কখনো দেওয়া হয়নি।
কোরআনের সুরক্ষা: এক অদ্বিতীয় মুজিজা
পবিত্র কোরআনের অন্যতম মুজিজা হলো এর সুরক্ষা। মহান আল্লাহ নিজেই এই কিতাবের সংরক্ষণ নিশ্চিত করেছেন। কোরআন নাজিল হওয়ার পর ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় চলে গেছে, কিন্তু এর একটি অক্ষরও পরিবর্তিত হয়নি। পৃথিবীর কোনো ধর্মগ্রন্থের ক্ষেত্রে এমন একটি অবস্থা দেখা যায় না। পূর্ববর্তী ধর্মগ্রন্থগুলো অনেক সময়ের মধ্যে বিকৃত হয়েছে এবং তাদের মূল ভাষা ও শিক্ষার বিষয়ে সঠিক তথ্য পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
তবে কোরআন এমন এক অটুট গ্রন্থ, যার প্রতিটি আয়াত, শব্দ, এবং ভাষার নিখুঁত রূপ আজও অক্ষত রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন কোণ থেকে লক্ষ কোটি মুসলিম এই কোরআন পড়েন এবং প্রতিটি শব্দ অক্ষরে মনোনিবেশ করেন। শুধু বর্তমান যুগে নয়, অতীতের প্রতিটি যুগেও লক্ষ লক্ষ মানুষের বুকের মধ্যে কোরআনের প্রতিটি আয়াত জীবন্ত ও অক্ষুণ্ণ রয়েছে।
চ্যালেঞ্জ এবং আল্লাহর প্রতিশ্রুতি
পবিত্র কোরআন তার নিজস্ব চ্যালেঞ্জ দিয়ে চলে এসেছে। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে ঘোষণা করেছেন যে, যদি কেউ কোরআনের সমতুল্য কোনো আয়াত রচনা করতে পারে, তবে তাকে রচনা করে দেখাতে হবে। কিন্তু এ চ্যালেঞ্জটি পূর্ণভাবে অদ্বিতীয়, কারণ কেউ কখনোই কোরআনের সমতুল্য একটি বাক্যও রচনা করতে সক্ষম হয়নি এবং ভবিষ্যতেও সম্ভব নয়। আল্লাহ বলেন, "যদি তোমরা এ কাজ করতে না পারো, আর নিশ্চিতভাবেই তা কখনোই করতে পারবে না, তবে ভয় কর সেই আগুনকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যা কাফেরদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।" (সুরা বাকারা, আয়াত: ২৪)
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও কোরআনের গুরুত্ব
পবিত্র কোরআন শুধু ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ নয়, এটি মানুষের বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চারও উৎকৃষ্ট আদর্শ। যে কেউ যদি কোরআনকে গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করে, তাহলে তার জীবন হবে সমৃদ্ধ, বুদ্ধিমান এবং আধ্যাত্মিকভাবে পূর্ণ। এই চিরন্তন মুজিজা মানুষকে প্রেরণা দেয় ন্যায়, সত্য, এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের পথ অনুসরণ করার জন্য।
অতএব, পবিত্র কোরআন হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের শ্রেষ্ঠ মুজিজা, যা শুধুমাত্র এক যুগের জন্য নয়, বরং চিরকাল সমস্ত পৃথিবী ও মানবজাতির জন্য আলোর পথ দেখানোর এক অমর গ্রন্থ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ