
ছবি: সংগৃহীত
ঈদের দিন রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এপ্রিল মাস বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের জন্য ‘কোনোভাবেই উপযোগী নয়’। তিনি বলেন, এই সময় আবহাওয়াগত, সামাজিক এবং শিক্ষাব্যবস্থার দিক থেকে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয় যা সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে ব্যাহত করতে পারে।
শনিবার (৭ জুন) ঈদুল আজহার দিনে দলীয় নেতৃবৃন্দসহ জিয়াউর রহমানের সমাধিতে পুস্পস্তবক অর্পণ ও দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন মির্জা ফখরুল। পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
এপ্রিল মাসে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের জন্য ঘোষিত সরকারের প্রস্তাবিত সময়সূচিকে সরাসরি প্রশ্নবিদ্ধ করে মির্জা ফখরুল বলেন, "এপ্রিল মাসে প্রচণ্ড গরম থাকে, সেই সঙ্গে ঝড়-বৃষ্টির সম্ভাবনাও প্রবল। এছাড়া এপ্রিলের প্রথমার্ধে সাধারণত রোজার মাস থাকে অথবা刚刚 রোজা শেষ হয়। এই সময়টা জনজীবনের জন্য স্বাভাবিক থাকে না।"
তিনি আরও বলেন, “এ সময় পাবলিক পরীক্ষাও থাকে। ফলে শিক্ষার্থীদের জীবনেও প্রভাব পড়ে। যেহেতু নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে হয় ভোটের আগে এক মাস ধরে, তাই রমজান মাসে প্রচারণা চালানো অত্যন্ত কঠিন হবে। এটি জনসম্পৃক্ততা কমিয়ে দেবে এবং একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশকে বাধাগ্রস্ত করবে।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমরা মনে করি ডিসেম্বর মাসই জাতীয় নির্বাচনের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত সময়। কারণ তখন আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছুটিতে থাকে এবং ধর্মীয় বাধাবিপত্তিও থাকে না। সাধারণ মানুষও তখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি সম্পৃক্ত হতে পারে। ডিসেম্বর নির্বাচন আয়োজনের জন্য ঐতিহাসিকভাবেও স্বীকৃত।”
তিনি জানান, বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটি ইতোমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসেছে এবং সরকারকে তাদের অনুপযুক্ত সময় নির্ধারণের ব্যাপারে মতামত জানিয়েছে। “জনগণের প্রত্যাশাও ছিল ডিসেম্বর মাসে নির্বাচন হবে। কিন্তু তা উপেক্ষা করা হয়েছে,”—বলেন ফখরুল।
জাতীয় নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে আপত্তি জানালেও ঈদের দিন দেশবাসীর প্রতি শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেননি বিএনপির মহাসচিব। তিনি বলেন, "বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এবং দলের পক্ষ থেকে আমি দেশবাসীকে পবিত্র ঈদুল আজহার শুভেচ্ছা জানাই।"
এ সময় কোরবানির প্রকৃত তাৎপর্য তুলে ধরে ফখরুল বলেন, “এই দিনটি ত্যাগের শিক্ষা দেয়। কাজী নজরুল ইসলামের ‘কোরবানি’ কবিতায় যেমন বলা আছে, ‘ওরে হত্যা নয় আজি, সত্য-গ্রহ, শক্তির উদ-বোধন’। আমরা চাই এই দিনে মানুষ সত্য, ন্যায় ও মানবিকতার পথে অগ্রসর হোক।”
ঈদের সকালে ফখরুলের সঙ্গে জিয়াউর রহমানের সমাধিতে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমদ ও এজেডএম জাহিদ হোসেন। তাঁরা পুস্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান এবং প্রয়াত নেতার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া-মোনাজাতে অংশ নেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, আবদুল হালিম, যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা মীর সরাফত আলী সপু, রফিকুল ইসলাম, সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, মীর নেওয়াজ আলী, আমিনুল হকসহ দলের অনেক নেতাকর্মী।
এর আগে গত সপ্তাহে সরকারঘোষিত তত্ত্বাবধায়ক প্রশাসনের প্রধান উপদেষ্টা এবং নির্বাচন পরিচালনা পর্যবেক্ষণকারী প্রধান ব্যক্তি জানান, এপ্রিলের প্রথমার্ধেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষক সংস্থাগুলোকেও সে অনুযায়ী প্রস্তুত থাকতে অনুরোধ জানানো হয়।
বিএনপির মতে, এ সময় নির্ধারণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নয়, বরং নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার একটি কৌশল। তাই তারা ডিসেম্বর মাসকে সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য সময় হিসেবে মনে করে।
ঈদের মতো একটি পবিত্র দিনে একদিকে যেমন বিএনপি নেতারা প্রয়াত রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ত্যাগ ও মানবতার বাণী উচ্চারণ করেছেন, অন্যদিকে সরকার ঘোষিত নির্বাচনকাল নিয়েও তীব্র আপত্তি জানিয়েছেন। মির্জা ফখরুলের বক্তব্যে স্পষ্ট যে, বিএনপি আগামী নির্বাচনের সময়কালকে কেন্দ্র করে তাদের অবস্থান থেকে একচুলও সরে আসতে নারাজ। এখন দেখার বিষয়, সরকারের পক্ষ থেকে এ দাবিকে কতটা গুরুত্ব দেওয়া হয় এবং আগামী দিনে নির্বাচন কমিশন কী সিদ্ধান্ত নেয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ