
ছবি: সংগৃহীত
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে রাজধানীর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ শনিবার (৭ জুন) সকাল ৭টায়। অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে অনুষ্ঠিত এই জামাতে অংশ নিতে ভোর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মুসল্লিরা মসজিদ প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন। ঈদের এই পবিত্র জামাত পরিচালনা করেন বিশিষ্ট আলেম ও খতিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী, যিনি দায়িত্ব পালন করেন ইমাম হিসেবে। মুকাব্বির হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মসজিদের খাদেম মো. আব্দুল হাদী।
সকাল ৭টায় জামাত শুরু হওয়ার আগেই মসজিদের প্রধান ভবন ও আশপাশের উন্মুক্ত চত্বরসহ প্রতিটি অংশ মুসল্লিদের উপস্থিতিতে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বহু মুসল্লি জামাত শুরু হওয়ার এক ঘণ্টা আগেই উপস্থিত হন। জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সকাল সাড়ে ৭টায় প্রধান ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও অনেক মুসল্লি নিরাপত্তা, পরিবহন বা অন্যান্য কারণে বায়তুল মোকাররমকেই ঈদের জামাতের জন্য বেছে নেন।
জামাতে পুরুষ, তরুণ, বৃদ্ধ এমনকি শিশুদেরও বিপুল উপস্থিতি ছিল। মসজিদের ভিতরের অংশ ছাড়াও বাইরের সড়ক ও পাশের খোলা জায়গাগুলোতে মুসল্লিরা নামাজে অংশ নেন। এতে শহরের কেন্দ্রস্থলে কিছু সময়ের জন্য যান চলাচলেও নিয়ন্ত্রণ আনা হয়।
সকাল ৭টা ৯ মিনিটে নামাজ শেষ হওয়ার পর খতিব ড. খলিলুর রহমান মাদানী দীর্ঘ মুনাজাত পরিচালনা করেন। তিনি মুনাজাতে দেশ, জাতি, মুসলিম উম্মাহ এবং বিশ্ব শান্তি ও মানবতার কল্যাণ কামনায় দোয়া করেন। মুনাজাতে মুসল্লিরা কান্নাজড়িত কণ্ঠে আল্লাহর দরবারে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং গুনাহ মাফের জন্য প্রার্থনা করেন।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানিয়েছে, প্রথম জামাতের পর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে পর্যায়ক্রমে আরও চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাতগুলো সকাল ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং সর্বশেষ ১০টা ৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি জামাতের জন্য আলাদা আলাদা ইমাম নির্ধারিত রয়েছেন।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায়, এতে ইমামতি করবেন ড. মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, ইমামতি করবেন ড. মোস্তাক আহমদ।
চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়, ইমাম হবেন মুফতি এম আবদুল্লাহ।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে, এতে ইমামতি করবেন মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দিন।
তবে নির্ধারিত কোনো ইমাম যদি উপস্থিত থাকতে না পারেন, সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে প্রস্তুত রয়েছেন মাওলানা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম। তিনি প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট জামাত পরিচালনা করবেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ ঘিরে ঈদের দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলেন। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদেরও দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। মসজিদের প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হয়, মুসল্লিদের দেহ ও ব্যাগ তল্লাশি করা হয়, এবং আশপাশে নজরদারির জন্য বসানো হয় সিসিটিভি ক্যামেরা। নারী মুসল্লিদের জন্য আলাদা প্রবেশপথ ও নামাজের স্থান নির্ধারণ করা হয়।
প্রথম জামাতের খুতবায় ইমাম ড. খলিলুর রহমান মাদানী বলেন, “ঈদুল আজহা শুধু আনন্দের নয়, এটি আত্মত্যাগের উৎসব। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ইব্রাহিম (আ.) এর মতো কোরবানি দানের মানসিকতা আমাদের অর্জন করতে হবে। সমাজে অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, দীনদারির পথে চলা, এবং মানবতার সেবায় নিজেদের উৎসর্গ করাই এই উৎসবের মূল শিক্ষা।”
তিনি আরও বলেন, “এই দিনে কোরবানির মাধ্যমে শুধু পশু জবাই নয়, আমাদের ভেতরের অহংকার, হিংসা, লোভ ও পাপ প্রবৃত্তিকেও কোরবানি দিতে হবে।”
বায়তুল মোকাররমের মতোই দেশের অন্যান্য বিভাগীয় ও জেলা শহর, উপজেলা এবং গ্রামাঞ্চলে ঈদের জামাত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মুসল্লিরা নির্বিঘ্নে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরেছেন। কোথাও বড় ধরনের কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
প্রতিবারের মতো এবারও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদুল আজহার জামাত ছিল অত্যন্ত আয়োজনপূর্ণ এবং ধর্মীয় গুরুত্ববহ। বহু মুসল্লির অংশগ্রহণ, নিয়মতান্ত্রিক আয়োজন, সুপরিকল্পিত নিরাপত্তা এবং বারবার জামাতের সুযোগ—সব মিলিয়ে একটি অনন্য পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আত্মত্যাগ, সংহতি ও মানবিকতার এই মহান দিনে বায়তুল মোকাররম ছিল ঈদ উদযাপনের এক কেন্দ্রীয় প্রাণকেন্দ্র।
বাংলাবার্তা/এমএইচ