
ছবি: সংগৃহীত
দেশের অন্যতম বৃহৎ দুই সেতু—পদ্মা ও যমুনা সেতুতে—একই দিনে ইতিহাস গড়ে সর্বোচ্চ সংখ্যক যানবাহন চলাচল এবং সর্বোচ্চ টোল আদায়ের নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ঈদুল আজহার আগে ঘরমুখো মানুষের স্রোত ও পণ্যবাহী পরিবহনের বাড়তি চাপেই এই নজিরবিহীন রেকর্ড হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীন সেতু বিভাগ বৃহস্পতিবার (৬ জুন) দিবাগত রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানায়। এতে বলা হয়, ২০২৫ সালের ৫ জুন বৃহস্পতিবার দিনভর পদ্মা ও যমুনা সেতু দিয়ে রেকর্ডসংখ্যক যানবাহন পারাপার হয়েছে। এর ফলে রেকর্ড টোল আদায় হয়েছে দুই সেতুতে।
সেতু বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, শুধু পদ্মা সেতুতেই ওই দিন মোট ৫২ হাজার ৪৮৭টি যানবাহন চলাচল করেছে, যা এখন পর্যন্ত এ সেতুর একদিনে যান চলাচলের সর্বোচ্চ সংখ্যা। একই দিনে পদ্মা সেতু থেকে আদায় করা হয়েছে সর্বোচ্চ ৫ কোটি ৪৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা টোল, যা পূর্ববর্তী সব রেকর্ডকে ছাড়িয়ে গেছে।
অন্যদিকে, দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি স্থাপনা যমুনা সেতু বা বঙ্গবন্ধু সেতুতেও একই দিনে রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে। ৫ জুন, যমুনা সেতু দিয়ে পারাপার হয়েছে ৬৪ হাজার ২৮৩টি যানবাহন, যা এ সেতুর ইতিহাসে একদিনে সবচেয়ে বেশি। টোল আদায়ের পরিমাণ ছিল ৪ কোটি ১৮ লাখ ১৪ হাজার ৮৫০ টাকা, এটিও এ পর্যন্ত যমুনা সেতুর সর্বোচ্চ।
এই পরিসংখ্যান শুধু যানবাহন চলাচলের পরিমাণই নয়, বরং দেশের সড়ক অবকাঠামো ব্যবস্থাপনার সক্ষমতার প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে। সরকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, ঈদ এবং ছুটির সময়ে পরিকল্পিত টোল আদায় ও সেতু ব্যবস্থাপনার ফলে সড়কযাত্রা আরও সহজ এবং ঝামেলাবিহীন হয়েছে। একই সঙ্গে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব আয়েও ব্যাপক অবদান রাখছে এসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা।
এর আগে পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ যানবাহন চলাচলের রেকর্ড হয়েছিল ২০২২ সালের ২৬ জুন, অর্থাৎ উদ্বোধনের দিন, যখন ৫১ হাজার ৩১৬টি যানবাহন পারাপার হয়েছিল। আর সর্বোচ্চ টোল আদায়ের পুরোনো রেকর্ড ছিল ২০২৪ সালের ৯ এপ্রিল, তখন আদায় হয়েছিল ৪ কোটি ৮৯ লাখ ৯৪ হাজার ৭০০ টাকা।
যমুনা সেতুর ক্ষেত্রেও নতুন রেকর্ডটি পুরোনো রেকর্ডকে অনেকটাই ছাড়িয়ে গেছে। পূর্ববর্তী সর্বোচ্চ যানবাহন চলাচলের রেকর্ড হয়েছিল ২০২৩ সালের ২৭ জুন, যেখানে ৫৫ হাজার ৬২১টি যানবাহন পার হয়েছিল। আর সর্বোচ্চ টোল আদায় হয়েছিল ২০২৪ সালের ১৪ জুন, তখন তা ছিল ৩ কোটি ৮৩ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা।
এই দুই সেতু দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ সংযোগ নিশ্চিত করে আসছে। যানবাহনের চলাচল বৃদ্ধি এবং টোল আদায়ের এই রেকর্ড সরকারপ্রদত্ত অবকাঠামোর সঠিক ব্যবহার ও অর্থনৈতিক গতিশীলতারও ইঙ্গিত দেয়।
এ প্রসঙ্গে সেতু বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, “ঈদকে সামনে রেখে মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমরা প্রস্তুত ছিলাম। সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, প্রযুক্তিনির্ভর টোল আদায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিশেষ নজর দিয়েছিলাম বলেই এই সাফল্য এসেছে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যাতায়াতের চাহিদা ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের বৃদ্ধি, দুই সেতুর ওপর নির্ভরতা এবং নিরবচ্ছিন্ন সড়ক যোগাযোগের ফলে ভবিষ্যতে এই রেকর্ড আরও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
সার্বিকভাবে, পদ্মা ও যমুনা সেতুতে একদিনে এমন উচ্চমাত্রার যানচলাচল এবং টোল আদায় শুধু নতুন রেকর্ড নয়, বরং তা বাংলাদেশের অবকাঠামো ও পরিবহন ব্যবস্থার এক নতুন যুগের সূচনাকেও নির্দেশ করে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ