
ছবি: সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নতুন আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয়ের বার্তা নিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। জর্ডানের রাজধানী আম্মানে সদ্যসমাপ্ত ত্রিদেশীয় সিরিজে দুটি ম্যাচে প্রতিপক্ষের সঙ্গে ড্র করেও যেভাবে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে লাল-সবুজের নারী দল, তাতে অনেকটাই আশাবাদী হয়ে উঠেছেন অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার। তার ভাষায়, ‘শুধু দুটি ম্যাচ নয়, এই সফরটি আমাদের মানসিকতা, খেলোয়াড়ী দক্ষতা এবং প্রতিপক্ষ বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে অনেক কিছু শিখিয়েছে, যা সামনের এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আমাদের কাজে লাগবে।’
গত ৩১ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত জর্ডানের আম্মানে অনুষ্ঠিত হয় এই ত্রিদেশীয় আন্তর্জাতিক প্রীতি সিরিজ, যেখানে বাংলাদেশ নারী দল মুখোমুখি হয় ইন্দোনেশিয়া ও স্বাগতিক জর্ডানের। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তারা ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৯৪ নম্বরে থাকা ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে গোলশূন্য ড্র করে। আর দ্বিতীয় ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ৭৪ নম্বরে থাকা জর্ডানের বিপক্ষে ২-২ গোলে ড্র করে, যেখানে তারা দু’বার পিছিয়ে পড়ে আবার ঘুরে দাঁড়ায়। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এই দুই দলই বাংলাদেশের চেয়ে যথাক্রমে ৩৯ ও ৫৯ ধাপ এগিয়ে র্যাঙ্কিংয়ে।
এই পরিসংখ্যান শুধু কাগজে-কলমে নয়, মাঠের খেলায়ও প্রতিফলিত হয়েছে, যেখানে বাংলাদেশের মেয়েরা শারীরিকভাবে কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও মানসিক দৃঢ়তায় ছিল দুর্দান্ত। ম্যাচ শেষে, এবং দেশে ফিরে ডেইলি স্টারের সঙ্গে আলাপকালে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক আফঈদা খন্দকার বলেন, “জর্ডান ও ইন্দোনেশিয়ার মতো দলগুলোর সঙ্গে খেলার সুযোগ আমাদের খুব কমই হয়। দক্ষিণ এশিয়ার বাইরের দলগুলোর বিপক্ষে খেললে আমাদের প্রস্তুতি ও মানসিকতা আরও দৃঢ় হয়। এই সফরে আমরা যেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি, তেমন অভিজ্ঞতা আমাদের আগের কোনো সফরে হয়নি।”
আফঈদা আরও বলেন, “আমরা জানি, এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে আমাদের প্রতিপক্ষ হিসেবে থাকবে জর্ডানের মতোই কিছু শক্তিশালী দল। তাই এই ম্যাচগুলো আমাদের আগাম প্রস্তুতির জন্য ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে প্রতিপক্ষের আক্রমণের ধরন, গতি, এবং তাদের রক্ষণভাগের গঠন দেখে আমরা বুঝতে পেরেছি—আমাদের কোথায় উন্নতির প্রয়োজন।”
দলীয় কৌশল ও মনোভাবের দিক থেকে মেয়েদের এই উত্থান প্রশংসনীয়। অধিনায়ক আফঈদা নিজেই ছিলেন ম্যাচে ডিফেন্সের মূল স্তম্ভ। দ্বিতীয় ম্যাচে জর্ডানের বিপক্ষে শুরুতেই গোল হজম করলেও দলের খেলোয়াড়রা হাল না ছেড়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যায়। তার ভাষায়, “জর্ডান শারীরিকভাবে শক্তিশালী একটি দল। আমরা ম্যাচের পঞ্চম মিনিটেই গোল খেয়ে বসি। কিন্তু কেউ হতাশ হয়নি। বরং আমরা সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম—প্রতিপক্ষের ওপর ধারাবাহিক চাপ প্রয়োগ করব। সেই চাপই কাজে দিয়েছে এবং আমরা দু’বার সমতায় ফিরতে পেরেছি।”
দুটি ম্যাচেই জয় না পেলেও এই ফলাফলের পেছনে যে আত্মবিশ্বাস ও মনোবল কাজ করেছে, তা স্পষ্ট। দলের অভ্যন্তরেও এসেছে ইতিবাচক পরিবর্তন। তরুণ খেলোয়াড়দের অনেকেই এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়ে নিজেদের প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন। টেকনিক্যাল কোচ পিটার বাটলার ও সহকারী কোচদের পরিকল্পনায়ও ছিল ভিন্নতা, যা আগামী বাছাইপর্বে দলের কৌশল নির্ধারণে সহায়ক হবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
এদিকে, বাংলাদেশ নারী দলের পরবর্তী বড় মিশন এখন এএফসি নারী এশিয়ান কাপ ২০২৬ বাছাইপর্ব, যা অনুষ্ঠিত হবে মায়ানমারে, ২৯ জুন থেকে ৫ জুলাই পর্যন্ত। এই বাছাইপর্বে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হবে স্বাগতিক মায়ানমার, বাহরাইন ও তুর্কমেনিস্তান। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এ দলগুলোর অবস্থান বাংলাদেশের চেয়ে তুলনামূলক এগিয়ে হলেও, জর্ডান সফরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস, কৌশলগত অভিজ্ঞতা এবং মানসিক প্রস্তুতি এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ মঞ্চে লড়াইয়ের শক্ত ভিত হিসেবে কাজ করবে।
এই প্রসঙ্গে আফঈদা বলেন, “আমরা চাই মায়ানমারে নিজেদের সেরা ফুটবল খেলতে। জর্ডানে আমরা শিখেছি—শারীরিক সক্ষমতার ঘাটতি থাকলেও টেকনিক, পরিকল্পনা আর মানসিক দৃঢ়তায় অনেক কিছু সম্ভব। আমাদের চোখ এখন বাছাইপর্বে। আমরা চাই বাংলাদেশকে নারী ফুটবলে আরেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
জর্ডানে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের পারফরম্যান্স কেবল একটি সফর নয়, বরং এটি ভবিষ্যতের জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ, যেখানে মেয়েরা নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ফুটবলের মানদণ্ডেও নিজেদের জায়গা করে নিতে শুরু করেছে। আফঈদা খন্দকার ও তার দল এখন অপেক্ষা করছে সেই চূড়ান্ত মঞ্চে নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখানোর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ