
ছবি: সংগৃহীত
সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সমন্বয়ে চলমান যৌথ অভিযান বড় পরিসরে পরিচালিত হয়েছে। গত ২৯ মে থেকে ৫ জুন ২০২৫ পর্যন্ত চলা এই সাঁড়াশি অভিযানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ৩৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বৃহস্পতিবার এক বিস্তারিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশের সাম্প্রতিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে এবং আসন্ন ঈদুল আজহা সামনে রেখে সম্ভাব্য অস্থিরতা ও অপরাধমূলক কার্যকলাপ প্রতিরোধে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পদাতিক ডিভিশন ও স্বতন্ত্র ব্রিগেডের আওতাধীন ইউনিটগুলো পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌথভাবে এই অভিযান পরিচালনা করে। এতে দেশব্যাপী নানা অপরাধে জড়িত চিহ্নিত অপরাধীদের পাশাপাশি অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারী, কিশোর গ্যাং সদস্য, চাঁদাবাজ এবং মাদকাসক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার অভিযানে জব্দ করা হয় বিপুল পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র ও নিষিদ্ধ সামগ্রী। আইএসপিআরের তথ্যমতে, অভিযানে ৭টি অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র, ৩টি গোলাবারুদ, ৩টি ককটেল বোমা, ৬টি কার্তুজ, বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য (যেমন ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিল), সন্ত্রাসী কার্যক্রমে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, একাধিক মোটরসাইকেল, চোরাই মোবাইল ফোন এবং নগদ অর্থ উদ্ধার করা হয়েছে। এসব গ্রেপ্তারকৃত অপরাধীদের প্রয়োজনীয় জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
আইএসপিআরের বিবৃতিতে আরও বলা হয়, দেশের শিল্পাঞ্চলগুলোতে শ্রমিক-মালিক দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য অস্থিরতা ঠেকাতে সেনাবাহিনী সক্রিয় ভূমিকা পালন করছে। তারা বিভিন্ন শিল্প এলাকায় টহল কার্যক্রমের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বেতন-বোনাস পরিশোধ নিশ্চিতে সহায়তা করছে। এতে শিল্প সেক্টরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে।
ঈদুল আজহা সামনে রেখে পশুর হাটে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দিকেও নজর দিয়েছে সেনাবাহিনী। বিভিন্ন জেলায় বসা অস্থায়ী পশুর হাটে তারা নিয়মিত নজরদারি, পর্যবেক্ষণ এবং সম্ভাব্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড রোধে সক্রিয় রয়েছে। ঈদ যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে বড় শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে বিশেষ টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া, ট্রেন ও বাসের টিকিট কালোবাজারি রোধে সেনা সদস্যদের উপস্থিতিতে স্টেশন ও টার্মিনালগুলোতে নিয়মিত তদারকি চলছে।
আইএসপিআর জানিয়েছে, সাধারণ জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর এই ধরনের অভিযান ও টহল কার্যক্রম আরও জোরদার করা হবে। একই সঙ্গে জনগণকে আহ্বান জানানো হয়েছে, যেকোনো সন্দেহজনক কার্যকলাপ বা ব্যক্তি সম্পর্কে দ্রুত নিকটস্থ সেনা ক্যাম্পে তথ্য দিতে।
এই অভূতপূর্ব অভিযানে অপরাধ দমনের পাশাপাশি, ঈদ উৎসবকে কেন্দ্র করে জনমনে আস্থা ও নিরাপত্তা বাড়িয়ে তুলতে সেনাবাহিনী যে সক্রিয় ও পেশাদার ভূমিকা পালন করছে, তা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।
যৌথ অভিযানে যেমন চিহ্নিত অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়েছে, তেমনি সেনাবাহিনীর উপস্থিতি জনমানসে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে নগর কেন্দ্র পর্যন্ত টহল কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে সামগ্রিকভাবে একটি নিয়ন্ত্রিত, নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিতের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ