ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে ঈদুল আজহার নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয়েছে এক হৃদয়স্পর্শী বিশেষ মোনাজাত। এতে অংশ নেন হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি, যারা দেশ ও জাতির শান্তি-শৃঙ্খলা, নিরাপত্তা এবং কল্যাণ কামনায় হাত তোলেন সৃষ্টিকর্তার দরবারে।
শনিবার (৭ জুন) সকালে ঈদুল আজহার প্রথম জামাত অনুষ্ঠিত হয় বায়তুল মোকাররমে। সকাল ৭টায় শুরু হওয়া প্রথম জামাতে ইমামতি ও মোনাজাত পরিচালনা করেন তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ খলিলুর রহমান মাদানী। নামাজ শেষে অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ মোনাজাত। এতে দেশব্যাপী শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, জাতীয় উন্নয়নকে টেকসই করা এবং সকল ধরনের অন্যায়-দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতনতা বৃদ্ধির প্রার্থনা জানানো হয়।
মোনাজাতে বিশেষভাবে দেশ ও জাতির সামগ্রিক কল্যাণ, সকল নাগরিকের পারস্পরিক সহানুভূতি ও সহযোগিতা, রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক সম্প্রীতি এবং অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য দোয়া করা হয়। মুসল্লিরা মনেপ্রাণে আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করেন, যেন বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধ, নিরাপদ ও আদর্শ রাষ্ট্র হিসেবে এগিয়ে যেতে পারে।
বিশেষ মোনাজাতে দেশ থেকে দুর্নীতি দূরীকরণ, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, সমাজে নৈতিকতা ও মানবিক মূল্যবোধের প্রসার এবং আদর্শ নাগরিক সমাজ গঠনে সকলের আন্তরিকতা ও প্রচেষ্টার জন্য দোয়া করা হয়। এছাড়া বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহমর্মিতা ও ঐক্য বৃদ্ধির জন্য বিশেষভাবে আল্লাহর সাহায্য চাওয়া হয়।
মোনাজাতে আরও দোয়া করা হয় যেন সমাজে অবিচার ও শোষণের অবসান ঘটে, এবং মানুষ যেন আল্লাহভীরু হয়ে ন্যায় ও সত্য পথে চলতে পারে।
দেশীয় প্রেক্ষাপট ছাড়াও বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুসলিম উম্মাহর ঐক্য ও শান্তি কামনায় বিশেষ দোয়া করা হয় মোনাজাতে। ইমাম সাহেব মুসলিম বিশ্বের সকল নির্যাতিত জনগোষ্ঠীর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেন এবং অনৈক্য-বিদ্বেষ দূর করে ইসলামের সুশীতল ছায়ায় সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান।
ঈদ উপলক্ষে বায়তুল মোকাররম মসজিদ প্রাঙ্গণ ও আশপাশের এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ভোর থেকেই দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে জামাতে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রবেশপথে তল্লাশি ও পর্যবেক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়।
পাঁচটি জামাতে অংশ নেয় হাজারো মুসল্লি
প্রথম জামাত ছাড়াও ঈদের দিনে বায়তুল মোকাররমে আরও চারটি জামাত অনুষ্ঠিত হয়।
দ্বিতীয় জামাত সকাল ৮টায় পরিচালনা করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মুফাসসির মাওলানা আবু সালেহ পাটোয়ারী।
তৃতীয় জামাত সকাল ৯টায়, ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদ ও সংকলন বিভাগের সম্পাদক মুশতাক আহমদ।
চতুর্থ জামাত সকাল ১০টায়, ইমামতি করেন ফাউন্ডেশনের মুফতি মো. আব্দুল্লাহ।
পঞ্চম ও সর্বশেষ জামাত সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে, ইমামতি করেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের দ্বীনি দাওয়াত ও সংস্কৃতি বিভাগের ভাষা শিক্ষক মাওলানা মোহাম্মদ নূর উদ্দীন।
প্রতিটি জামাত শেষে মুসল্লিরা বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন এবং আল্লাহর রহমত ও বরকতের প্রত্যাশায় প্রার্থনা করেন।
বায়তুল মোকাররমে ঈদের জামাত ও মোনাজাতে অংশগ্রহণ করা মানুষদের মধ্যে ছিল ভিন্নরকম আবেগ ও উৎসাহ। ঈদের এই দিনটি যেন শুধু আনন্দ ও কোরবানির নয়, বরং ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের কল্যাণে আত্মসমর্পণেরও একটি উপলক্ষ হয়ে ওঠে—এমনটাই কামনা করেছিলেন অংশগ্রহণকারীরা।
এই বিশেষ দিনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ ঈদের নামাজ ও মোনাজাতের মাধ্যমে দেশপ্রেম, মানবতা ও ইসলামী মূল্যবোধের প্রতি তাদের আস্থা ও প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ
.png)
.png)
.png)



