
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশে চলতি জুন মাসের শুরু থেকেই অসহনীয় গরমে নাকাল হয়ে পড়েছে জনজীবন। ঈদের ছুটির মধ্যে অনেকে ভেবেছিলেন কিছুটা স্বস্তির বৃষ্টি মিলবে, কিন্তু আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ পূর্বাভাসে এমন কোনো ব্যাপক বৃষ্টির সম্ভাবনার কথা বলা হয়নি। শনিবার (৭ জুন) সকালে দেওয়া আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, মৌসুমি বায়ুর তেমন সক্রিয়তা না থাকায় আগামী তিন দিন দেশের বেশিরভাগ স্থানে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্কই থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু এলাকায় সামান্য বৃষ্টির সম্ভাবনা থাকছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বর্তমানে মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় রয়েছে। সেই সঙ্গে উত্তর বঙ্গোপসাগরের উপরে মৌসুমি বায়ু দুর্বল থেকে মাঝারি অবস্থায় অবস্থান করছে। এই অবস্থায় দেশের বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা বেশ সীমিত। এতে করে দেশের অধিকাংশ অঞ্চলে গরম অনুভব আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
শনিবারের (৭ জুন) পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ দেশের ছয়টি বিভাগের কিছু কিছু স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। ময়মনসিংহ, ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের এক-দুইটি জায়গায় এমন বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে। এসব বৃষ্টির পরিমাণ খুব বেশি হবে না এবং তা হবে খুবই স্বল্প সময়ের জন্য। দেশের বাকি অঞ্চলে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। অর্থাৎ সার্বিকভাবে আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকবে।
পূর্বাভাসে আরও বলা হয়েছে, আজ সারাদেশে দিনের এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। গরমের অনুভব তাই স্বাভাবিকভাবেই আরও বাড়তে পারে, বিশেষ করে যখন আর্দ্রতা বাড়বে, তখন ঘাম ও অস্বস্তি আরও বেশি অনুভূত হবে।
রোববার (৮ জুন) এবং সোমবার (৯ জুন) দিনগুলোতেও আবহাওয়ার ধারাবাহিকতা প্রায় একই থাকবে বলে জানানো হয়েছে। রোববার চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু জায়গায় বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে আবহাওয়া থাকবে শুষ্ক ও আংশিক মেঘলা। দিন এবং রাতের তাপমাত্রা আবারও সামান্য হারে বৃদ্ধি পাবে।
সোমবারের পূর্বাভাসেও তেমন কোনো বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত নেই। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে, তবে তা ব্যাপক বা তীব্র নয়। দেশের অন্য অংশে আকাশ আংশিক মেঘলা থাকবে এবং আবহাওয়া শুষ্কই থাকবে। গরমের মাত্রা বজায় থাকবে এবং তাপমাত্রা আরও একটু বাড়তে পারে।
প্রাক বর্ষার সময়কাল হলেও এখনো পর্যন্ত দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। আবহাওয়াবিদদের মতে, মৌসুমি বায়ুর দুর্বল অবস্থানের কারণেই বর্ষা প্রবেশে বিলম্ব হচ্ছে। সাধারণত জুনের প্রথমার্ধেই বর্ষা বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল দিয়ে প্রবেশ করে এবং এরপর ধীরে ধীরে উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের দিকে অগ্রসর হয়। তবে এবারের মৌসুমে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর শক্তিশালী প্রবাহ এখনো দেখা যাচ্ছে না, যা বিস্তৃত বৃষ্টিপাতের জন্য অত্যন্ত জরুরি।
আবহাওয়াবিদরা মনে করছেন, আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে মৌসুমি বায়ু আরও সক্রিয় হতে পারে এবং তখন দেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চল থেকে শুরু করে ধীরে ধীরে অন্যান্য অংশেও নিয়মিত বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে। তবে সে পর্যন্ত তাপমাত্রা কিছুটা বেড়ে গরমের তীব্রতা অব্যাহত থাকতে পারে।
চলমান তাপদাহে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনজীবন চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বেশ কিছু শহরে প্রতিদিন দুপুরের দিকে রাস্তাঘাট প্রায় ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই, বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা। হিটস্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকরা সবাইকে পর্যাপ্ত পানি পান, সরাসরি রোদ এড়িয়ে চলা এবং দিনে অন্তত একবার স্নান করার পরামর্শ দিচ্ছেন।
গ্রামাঞ্চলে কৃষকরাও তীব্র রোদে কাজ করতে গিয়ে কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক এলাকায় গ্রীষ্মকালীন সবজির চাষ ও ফল উৎপাদনেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে বৃষ্টির অনুপস্থিতিতে সেচের উপর নির্ভরতা বাড়ছে, যার ফলে কৃষকদের খরচও অনেক গুণ বেড়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়ার বর্তমান চিত্র বলছে, আগামী দুই থেকে তিন দিন দেশে ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। চট্টগ্রাম ও সিলেট অঞ্চলে কিছু হালকা বৃষ্টিপাত হলেও দেশের বাকি অংশে তাপমাত্রা বৃদ্ধির ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। ফলে গরম আরও বাড়বে এবং সাধারণ মানুষকে আরও কিছুদিন এই অস্বস্তিকর আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে হবে।
পরবর্তী বড় ধরনের পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করতে হবে মৌসুমি বায়ুর পূর্ণ সক্রিয়তার ওপর, যা যদি দ্রুত সক্রিয় না হয়, তাহলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে খরা ও পানির সংকটও তীব্র আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই নাগরিকদের উচিত নিজের স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সচেতনতার বিষয়ে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা।
বাংলাবার্তা/এমএইচ