
ছবি: সংগৃহীত
আজ মুসলিম বিশ্বে উদযাপিত হচ্ছে পবিত্র ঈদুল আজহা—ত্যাগ ও আত্মোৎসর্গের মহিমায় উদ্ভাসিত এই দিনটি বাংলাদেশের মুসলিম সম্প্রদায় ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপন করছে। দেশের প্রতিটি প্রান্তে চলছে ঈদের নামাজ, কোরবানির পশু জবাই এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে সময় কাটানোর আনন্দমুখর আয়োজন। এই খুশির দিনে বাংলাদেশের জাতীয় দলের ক্রিকেটাররাও তাঁদের ভক্ত-সমর্থকদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন আন্তরিক বার্তা।
বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি দলের অধিনায়ক লিটন কুমার দাস তাঁর অফিসিয়াল ফেসবুক পেজে শুভেচ্ছা বার্তায় লেখেন, “এই ঈদে আপনার জীবনে আসুক আনন্দ, সুস্থতা এবং অফুরন্ত আশীর্বাদ। একতা ও সম্মানের চেতনায় আমরা একসাথে ঈদ উদযাপন করি!”
অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ঈদের নামাজের পর কাছের মানুষদের সঙ্গে একটি ছবি শেয়ার করে নিজের বার্তায় লেখেন, “আসসালামু আলাইকুম। তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও আপনাদেরকে কবুল করে নিক)। সবাইকে ঈদ মোবারক।”
জাতীয় দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ তাঁর হৃদয়স্পর্শী ঈদবার্তায় বলেন, “পবিত্র ঈদুল আজহা হোক ত্যাগের মহিমায় উদ্ভাসিত। এই পবিত্র দিনে আমাদের আত্মত্যাগের ক্ষমতা ও ভালোবাসার শক্তি আরও গভীর হোক।”
তাঁদের মতোই পেসার শরিফুল ইসলামও নিজের ভক্তদের শুভেচ্ছা জানাতে ভুল করেননি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া বার্তায় শরিফুলও সবার জন্য দোয়া ও শুভকামনা জানিয়েছেন।
ঈদের আনন্দ শেষে শ্রীলঙ্কা সফরের প্রস্তুতি
বর্তমানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের কোনো সিরিজ নেই, ফলে খেলোয়াড়রা ঈদের সময়টা পরিবার-পরিজন ও বন্ধুদের সঙ্গে কাটানোর সুযোগ পেয়েছেন। তবে এই ছুটি দীর্ঘ নয়। জুন মাসের শেষে বাংলাদেশ জাতীয় দল শ্রীলঙ্কা সফরে যাবে, যেখানে তারা একটি পূর্ণাঙ্গ সিরিজ খেলবে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে সেই সিরিজে থাকবে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি ম্যাচের ব্যস্ত সূচি। ঈদের আনন্দ শেষ হতেই ফের কঠোর অনুশীলন ও প্রস্তুতির মধ্যে ফিরবে জাতীয় দল।
টানা ব্যর্থতায় জর্জরিত বাংলাদেশ, চোখ এখন ঘুরে দাঁড়ানোর দিকে
তবে ঈদের উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি ক্রিকেট অঙ্গনের এক বাস্তবতা হচ্ছে, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। চলতি বছরটা এখন পর্যন্ত একরকম দুঃস্বপ্ন হয়েই ধরা দিয়েছে টাইগারদের জন্য। বছরের শুরুতেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির দুই ম্যাচেই হেরে দেশে ফিরতে হয়। এরপর জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজেও জয় অধরাই থেকে যায়। দুই ম্যাচের সেই সিরিজ ১-১ সমতায় শেষ হয়। বিশেষ করে জিম্বাবুয়ের মতো তুলনামূলক দুর্বল দলের কাছে এক টেস্টে হার জাতীয় দলের সামর্থ্য ও পরিকল্পনা নিয়ে বড় প্রশ্ন তুলে দেয়।
এরপর সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরুটা ভালো হলেও শেষটা হতাশাজনক। প্রথম ম্যাচ জয়ের পর বাকি দুই ম্যাচে হেরে সিরিজ হারতে হয় ২-১ ব্যবধানে। সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর প্রত্যাশা থাকলেও পাকিস্তান সফরে গিয়ে লিটন দাসের দল একেবারেই মুখ থুবড়ে পড়ে। তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ।
চাপ ক্রমেই বাড়ছে খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ ও ক্রিকেট বোর্ডের ওপর। ক্রিকেট বোদ্ধারা মনে করছেন, বারবার দলবদল, নেতৃত্বে পরিবর্তন, আত্মবিশ্বাসের অভাব ও টেকনিক্যাল ভুলগুলো টাইগারদের এই ধারাবাহিক ব্যর্থতার জন্য দায়ী। বিশেষ করে টি-টোয়েন্টি সংস্করণে দলগত পরিকল্পনার অভাব ও ব্যাটিং ব্যর্থতা প্রবলভাবে চোখে পড়েছে।
শ্রীলঙ্কা সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে চায় দল
সবশেষে ঈদের এই আনন্দের ছায়ায় ক্রিকেটাররা নতুন করে জেগে উঠতে চান আশায়। সামনে থাকা শ্রীলঙ্কা সফর এখন বাংলাদেশের জন্য শুধুই একটি সিরিজ নয়—বরং এটি হয়ে দাঁড়িয়েছে আত্মমর্যাদা ফিরে পাওয়ার লড়াই। এই সিরিজের মধ্য দিয়েই দলের ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে নতুন করে এগিয়ে যাওয়ার আশায় বুক বাঁধছেন ক্রিকেটার, সমর্থক ও বোর্ড কর্মকর্তারা।
ভক্তরা যেমন ঈদের দিন ক্রিকেটারদের শুভেচ্ছা পেয়েছেন, তেমনি সামনে তাকিয়ে আছেন—কখন প্রিয় তারকারা মাঠে নেমে দেশের পতাকা উঁচিয়ে ধরবেন জয়গাথায়। ঈদ শেষে শ্রীলঙ্কার মাটিতে সেই অপেক্ষার ফল কী হয়, তা এখন সময়ই বলে দেবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ