
ছবি: সংগৃহীত
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে তার দলীয় পদ থেকে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। শোকজ নোটিশের সন্তোষজনক জবাব দিতে না পারায় দলীয় সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী মহল এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার (২৬ আগস্ট) সন্ধ্যায় বিএনপির শীর্ষস্থানীয় একটি সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এর মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে দলে সক্রিয়ভাবে নেতৃত্ব দিয়ে আসা মুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান কার্যত বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম থেকে কিছু সময়ের জন্য বিরত থাকবেন।
গত ২৪ আগস্ট বিএনপির পক্ষ থেকে ফজলুর রহমানকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়। অভিযোগ ছিল, তিনি জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থান নিয়ে টেলিভিশন টকশোতে এমন কিছু মন্তব্য করেছেন যা ‘বিতর্কিত, বিভ্রান্তিকর এবং দলের অবস্থানের সাথে সাংঘর্ষিক’। দলের অভিযোগ, তার বক্তব্যকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক শক্তি বিভ্রান্তি ছড়াতে পারে এবং জনগণের মাঝে ভুল বার্তা পৌঁছে যেতে পারে।
নোটিশ পাওয়ার পর তিনি লিখিত জবাব না দিয়ে প্রথমে সময় বাড়ানোর আবেদন করেন। দলের পক্ষ থেকে তাকে আরও ২৪ ঘণ্টার সময় দেওয়া হলেও মঙ্গলবার তিনি যে লিখিত জবাব জমা দেন তা বিএনপির সংশ্লিষ্ট কমিটির কাছে সন্তোষজনক মনে হয়নি।
বিএনপির মহাসচিবের দপ্তর থেকে পাঠানো স্থগিতাদেশের চিঠিতে বলা হয়, “আপনার জবাব যথাযথ ব্যাখ্যা বহন করে না। তথাপিও আপনি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অবদান রেখেছেন। এ বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ না করে আপাতত আপনার প্রাথমিক সদস্যপদসহ সব পদ দায়িত্ব থেকে তিন মাসের জন্য স্থগিত করা হলো।”
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, “আপনি টেলিভিশন টকশো বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কথা বলার সময় দেশের ভাবমূর্তি ও দলের নীতিমালা যাতে ক্ষুণ্ন না হয়, জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত না লাগে সে বিষয়ে সর্বদা সচেতন থাকার অনুরোধ জানানো হচ্ছে।”
এর আগে মঙ্গলবার দুপুরে লিখিত জবাব দেন অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান। সেখানে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, তার বক্তব্যকে খণ্ডিতভাবে প্রচার করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, সার্বিক বক্তব্য উপস্থাপনে যদি কোনো অসঙ্গতি থেকে থাকে বা ভুলভাবে উপস্থাপিত হয়ে থাকে তবে তা অনিচ্ছাকৃত। লিখিত জবাবে তিনি আরও উল্লেখ করেন, “আমার বক্তব্যে যদি কোনো ভুল প্রমাণিত হয়, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।”
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিএনপির এ ধরনের সিদ্ধান্ত তাদের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় নেতাকর্মীদের বিভিন্ন বক্তব্য জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে। ফলে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব শৃঙ্খলা বজায় রাখতে আরও কঠোর হচ্ছে।
অন্যদিকে, কিছু বিএনপি নেতা মনে করছেন, ফজলুর রহমানের মতো সিনিয়র মুক্তিযোদ্ধা নেতার বিরুদ্ধে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া দলের ভেতরেও ভিন্নমত সৃষ্টি করতে পারে। তবে দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ