
ছবি: সংগৃহীত
আজ রোববার (৩ আগস্ট) রাজধানীজুড়ে রাজনৈতিক উত্তাপ কিছুটা বাড়তে পারে, কারণ একই দিনে দুটি ভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের বড় ধরনের কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। একদিকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান’ দিবসের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে রাজধানীর শাহবাগে সমাবেশ করবে বিএনপির ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। অন্যদিকে, একই উপলক্ষেই কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আয়োজন করেছে তাদের বহুল আলোচিত সমাবেশ। শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সমাবেশ ঘিরে র্যাব-পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। একাধিক সড়কে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ এবং ডাইভারশন কার্যকর রয়েছে। পাশাপাশি, ঢাকায় আজ এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ছাত্রদল আজ দুপুর ১২টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত শাহবাগ মোড়ে বিশাল ছাত্র সমাবেশ করবে। অনুষ্ঠানটিকে ‘গণ-অভ্যুত্থান, শোক ও বিজয়ের প্রথম বর্ষপূর্তি’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে সংগঠনটির পক্ষ থেকে সারাদেশের জেলা ও মহানগর ইউনিটগুলোতে ব্যাপক প্রস্তুতির নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। প্রায় ৯০টি সাংগঠনিক টিম ইতোমধ্যেই গঠিত হয়েছে এবং প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে নেতাকর্মীরা ঢাকায় অবস্থান নিচ্ছেন।
সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, যিনি লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে অংশগ্রহণ করবেন এবং বক্তব্য রাখবেন। এছাড়া ২০২৪ সালের জুলাইয়ে সংঘটিত ‘গণ-অভ্যুত্থানে’ নিহতদের পরিবারের সদস্য ও আহত শিক্ষার্থীরাও উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে।
ছাত্রদল তাদের নেতাকর্মীদের জন্য কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো—
সমাবেশে কোনো ধরনের ব্যানার, প্ল্যাকার্ড বা ফেস্টুন বহন করা যাবে না।
প্রতিটি ইউনিটকে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একত্রে থাকতে হবে।
কাঁটাবন মোড় থেকে আজিজ সুপার মার্কেট হয়ে পিজি হাসপাতালের মাঝের গলি পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্স ও জরুরি যানবাহন চলাচলে সহযোগিতা করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কোনো ইউনিটের গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না।
ব্যক্তিগত শোডাউন বা মিছিল নিষিদ্ধ।
সমাবেশ শেষে ইউনিটের নিজ নিজ জায়গা পরিষ্কার করে যেতে হবে।
এই নির্দেশনা থেকে স্পষ্ট, ছাত্রদল সমাবেশকে শৃঙ্খলিত ও কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রিত রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
অন্যদিকে, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের’ দাবিতে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আজ বেলা ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে গণসমাবেশের আয়োজন করেছে। এনসিপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, দেশব্যাপী পদযাত্রা শেষ করে আজকের সমাবেশে দলটি ‘জাতীয় ইশতেহার’ প্রকাশ করবে। এ কর্মসূচিকে ঘিরেও তাদের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক প্রস্তুতি ও আলোড়ন দেখা যাচ্ছে।
এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ শনিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, “আমরা জানি, আজকের দিনে এইচএসসি পরীক্ষা আছে, ছাত্রদলের সমাবেশ আছে। তাই ঢাকার নাগরিকদের কিছুটা ভোগান্তি হবেই। আমরা এর জন্য আগাম দুঃখ প্রকাশ করছি।” তিনি জানান, ‘জুলাই জাগরণ’ নামে এনসিপির কালচারাল ফেস্টের অংশ হিসেবে এই সমাবেশের তৃতীয় দিনের আয়োজন আজ চলছে। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত সাংস্কৃতিক পরিবেশনা, বিতর্ক ও ‘জুলাই ভাবনার’ ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
ছাত্রদল ও এনসিপির দুই পৃথক সমাবেশের পাশাপাশি এইচএসসি পরীক্ষা থাকায় ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাব সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় কঠোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা নিয়েছে।
ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশপথ, শাহবাগ মোড়, শহীদ মিনার এলাকা, কাঁটাবন, বাংলামোটর, ঢাকা মেডিকেল, আজিজ সুপার মার্কেট এলাকা এবং আশপাশের সড়কগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে।
একাধিক সড়কে যান চলাচলে ডাইভারশন দেয়া হয়েছে। ডিএমপি নাগরিকদের বিকল্প সড়ক ব্যবহার করার অনুরোধ জানিয়েছে এবং আজ সকালে একটি পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে কিছু সড়ক এড়িয়ে চলার নির্দেশনাও দিয়েছে।
যানজট ও জনভোগান্তি এড়াতে, বিশেষ করে যেসব শিক্ষার্থীদের এইচএসসি পরীক্ষা রয়েছে, তাদের প্রয়োজনীয় সময় হাতে নিয়ে কেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসন।
ছাত্রদল ও এনসিপির রাজনৈতিক কর্মসূচির পাশাপাশি আজ ঢাকায় চলছে একটি গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক আয়োজনও। সাইমুম শিল্পগোষ্ঠীর আয়োজনে চারদিনব্যাপী 'জুলাই জাগরণ' অনুষ্ঠানের তৃতীয় দিন আজ। সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত চলবে গান, কবিতা, বিতর্ক ও আলোচনার নানা আয়োজন। আয়োজকরা জানিয়েছেন, ‘শহীদের আত্মত্যাগের স্মরণ ও নতুন প্রজন্মকে জাতীয় রাজনীতি ও গণতন্ত্রে সক্রিয় করতে’ এ উৎসবের আয়োজন।
একদিকে রাজনৈতিক কর্মসূচি, অন্যদিকে চলমান এইচএসসি পরীক্ষা—এই দুইয়ের চাপ রাজধানীবাসীর ওপর স্পষ্টভাবে পড়বে। রাজধানীর অনেক এলাকা জ্যামে স্থবির হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তবে আয়োজক সংগঠনগুলো তাদের দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়ে আগাম দুঃখ প্রকাশ ও নাগরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
এই ধরনের সমাবেশ গণতন্ত্রের চর্চার অংশ হলেও, তা যেন নাগরিক জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ ব্যাহত না করে—এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সবার। আজকের এই দিনটি শেষ পর্যন্ত কতটা শান্তিপূর্ণ ও সচেতনভাবে পরিচালিত হয়, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ