
ছবি: সংগৃহীত
দুইদিনে হজ পালন শেষে সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরেছেন আট হাজার ৬০৬ জন বাংলাদেশি হাজি। তাদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৮৩৭ জন এবং বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ফিরেছেন ৭ হাজার ৭৬৯ জন। তবে এবারের হজ সফরে সৌদি আরবে মোট ২৩ জন বাংলাদেশি হাজির মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হজ পোর্টাল। বুধবার (১২ জুন) সকালে প্রকাশিত হজ-২০২৫ বুলেটিন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
হজ ২০২৫ সালের জন্য বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হাজিদের দেশে ফেরার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে গত মঙ্গলবার, ১০ জুন থেকে। ফিরতি এই যাত্রায় এখনও পর্যন্ত ২২টি ফ্লাইটে হাজিরা দেশে ফিরেছেন। সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন শেষে ফ্লাইটে দেশে ফিরতে শুরু করেন তারা। বুধবার মধ্যরাত পর্যন্ত হিসাব অনুযায়ী, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের চারটি ফ্লাইটে দেশে ফিরেছেন এক হাজার ৪০৯ জন হাজি। সৌদি এয়ারলাইন্সের আটটি ফ্লাইটে তিন হাজার ১৮৫ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্সের দশটি ফ্লাইটে ফিরেছেন চার হাজার ১২ জন।
হজ যাত্রীদের ফিরতি ফ্লাইট চলবে ১০ জুলাই পর্যন্ত। পুরো একমাস জুড়েই ধাপে ধাপে দেশে ফিরবেন হজ পালন শেষে সৌদি আরবে অবস্থানরত বাংলাদেশিরা। ফ্লাইটের সুচারু ব্যবস্থাপনা, সুষ্ঠু সমন্বয় ও স্বাস্থ্যঝুঁকির পূর্বপ্রস্তুতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে হজ অফিস ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
২০২৫ সালে হজ পালনে বাংলাদেশ থেকে মোট ৮৭ হাজার ১৫৭ জন হজযাত্রী সৌদি আরবে গিয়েছেন। এদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় গিয়েছেন প্রায় সাড়ে ৯ হাজার, বাকি প্রায় ৭৭ হাজার গিয়েছেন বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। এই বিশালসংখ্যক হজযাত্রীকে সৌদি আরবে পৌঁছাতে সহায়তা করেছে তিনটি এয়ারলাইন্স—বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, সৌদি এয়ারলাইন্স ও ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স।
এদের মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালনা করেছে ১০৮টি ফ্লাইট, যার মাধ্যমে সৌদি আরবে গেছেন ৪২ হাজার ৪০৪ জন হজযাত্রী। সৌদি এয়ারলাইন্স ৮৩টি ফ্লাইটে পরিবহন করেছে ৩১ হাজার ৬৭৬ জন এবং ফ্লাইনাস এয়ারলাইন্স ৩৩টি ফ্লাইটে হজে নিয়ে গেছে ১৩ হাজার ৭৭ জন যাত্রী।
এ বছরের হজযাত্রীদের সৌদি আরবে যাত্রা শুরু হয়েছিল ২৯ এপ্রিল থেকে এবং শেষ ফ্লাইট ছেড়েছিল ৩১ মে।
২৩ বাংলাদেশি হজযাত্রীর মৃত্যু: ২১ জন পুরুষ, ২ জন নারী; হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ১৯৩ জন
হজ পালন করতে গিয়ে সৌদি আরবে ২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী মৃত্যুবরণ করেছেন বলে হজ অফিস সূত্র নিশ্চিত করেছে। তাদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ এবং দুইজন নারী। মক্কায় মৃত্যুবরণ করেছেন ১৫ জন, মদিনায় ৭ জন এবং পবিত্র আরাফার ময়দানে মারা গেছেন একজন হাজি। এসব মৃত্যু স্বাভাবিক কারণেই হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানানো হয়েছে। দীর্ঘ পথচলা, বয়সজনিত অসুস্থতা এবং হজের শারীরিক কষ্টই এসব মৃত্যুর মূল কারণ হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, সৌদি আরবের বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালে বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন আরও ২৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী। হজ চলাকালে এবং পরে মোট ১৯৩ জন বাংলাদেশি হজযাত্রী এসব হাসপাতালে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানানো হয়েছে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ হিটস্ট্রোক, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস জটিলতা ও ডিহাইড্রেশনজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন।
বাংলাদেশ হজ অফিস জানিয়েছে, সৌদি আরবে অবস্থানরত হজযাত্রীদের সেবা নিশ্চিতে দূতাবাসের প্রতিনিধি দল, মেডিকেল মিশন এবং সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য বিভাগ কাজ করছে নিরবচ্ছিন্নভাবে। হজ পালনকালীন সময়ে এবং এরপরও মেডিকেল ক্যাম্পের মাধ্যমে হাজিদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হয়েছে।
মক্কা ও মদিনায় প্রতিটি হজ ক্যাম্পে হেলথ ডেস্ক, অ্যাম্বুলেন্স ও মেডিকেল টিম প্রস্তুত রাখা হয়েছে জরুরি প্রয়োজন মেটানোর জন্য। পবিত্র হজের দিনগুলোতে অতিরিক্ত চিকিৎসক নিয়োগ এবং হজকার্য সম্পন্ন শেষে জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসের সহায়তাও নিশ্চিত করা হয়েছে।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অধীন হজ ম্যানেজমেন্ট সেল এ বছর হজ ব্যবস্থাপনাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। অনলাইন হজ পোর্টাল, অ্যাপস এবং হজ অফিসে চালু থাকা ২৪ ঘণ্টার হেল্প ডেস্কের মাধ্যমে হাজিদের নানা সমস্যার দ্রুত সমাধান হয়েছে বলে জানানো হয়। হজ চলাকালে মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল সরাসরি সৌদিতে গিয়ে তদারকি কার্যক্রম চালায়।
ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, “এ বছর হজ ব্যবস্থাপনায় আগেভাগে প্রস্তুতি নেওয়ায় জটিলতা অনেক কম হয়েছে। বিমানের ফ্লাইট পরিচালনা, ভিসা প্রসেসিং, আবাসন, খাদ্য সরবরাহ থেকে শুরু করে চিকিৎসা সহায়তায় আমরা সাধ্যমতো সেবা নিশ্চিত করতে পেরেছি।”
২০২৫ সালের হজ কার্যক্রম এখনো চলমান। তবে প্রথম ধাপেই হজ শেষে ফিরে আসা ৮ হাজার ৬০০-এর বেশি হাজি নির্বিঘ্নে দেশে ফিরতে পারায় সন্তোষ প্রকাশ করেছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। যদিও কিছু মৃত্যু এবং অসুস্থতা হজযাত্রার বাস্তবতা, তবুও সরকারের সেবা প্রদান ও ব্যবস্থাপনার প্রশংসা করেছেন অনেকে।
ফিরতি ফ্লাইটের পুরো সময়জুড়ে একই রকম মনিটরিং অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। হজযাত্রীদের সৌদিতে অবস্থানকালীন অভিজ্ঞতা ও চাহিদা বিশ্লেষণ করে আগামী বছর আরও উন্নত সেবা নিশ্চিত করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
বাংলাবার্তা/এমএইচ