
ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ছেড়ে যাওয়ার মাত্র ১৫ মিনিটের মাথায় এক চরম ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতির মুখে পড়ে তুরস্কগামী তার্কিশ এয়ারলাইন্সের TK713 ফ্লাইটটি। মঙ্গলবার (২০ মে) সকাল ৭টায় ছাড়ার পরই আকাশে ওড়ার সময় প্লেনটির একটি ইঞ্জিনে আগুন ধরে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে। পাইলট ইঞ্জিনে স্পার্ক দেখতে পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে সতর্ক হয়ে দ্রুত জরুরি অবতরণের সিদ্ধান্ত নেন। তার বিচক্ষণতায় অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে প্লেনের ভেতরে থাকা ২৯১ জন আরোহীর প্রাণ।
প্লেনটিতে ২৯০ জন যাত্রী ও ১১ জন ক্রু ছিলেন। যাত্রীদের মধ্যে ১৯ জন ছিলেন বিজনেস ক্লাসের এবং ২৫৬ জন ছিলেন ইকোনমি ক্লাসের। এ ছাড়াও প্লেনে ৫ জন শিশু ছিল। এয়ারক্রাফটটি ছিল একটি এয়ারবাস A330-303 মডেলের জেট, যেটি সকাল ৭টা ৫ মিনিটে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইস্তাম্বুলের উদ্দেশ্যে উড্ডয়ন করে।
উড্ডয়নের ১৫ মিনিটের মাথায় পাইলট ইঞ্জিন নম্বর ২-এ স্পার্ক দেখতে পান। এ সময় প্লেনটি বাংলাদেশের আকাশেই ছিল। জরুরি অবতরণ নিশ্চিত করার জন্য প্রথমে আকাশে কিছু সময় চক্কর দিয়ে পুঞ্জিভূত জ্বালানি তেল পোড়ানো হয়। এরপর সকাল ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে প্লেনটি শাহজালাল বিমানবন্দরে নিরাপদে অবতরণ করে। ঘটনার পরপরই যাত্রীদের প্লেন থেকে অফলোড করা হয় এবং এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ তাদের ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে স্থানান্তর করে।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এসএম রাগীব সামাদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “উড্ডয়নের পরপরই পাইলট একটি ইঞ্জিনে স্পার্ক দেখতে পান। ধারণা করা হচ্ছে, বার্ড হিটের কারণে ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দেয়। তবে পাইলটের তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্তে বড় ধরনের দুর্ঘটনা থেকে আমরা রক্ষা পেয়েছি। যাত্রীরা সবাই নিরাপদে আছেন।”
তার্কিশ এয়ারলাইন্স এক বিবৃতিতে জানায়, TK713 ফ্লাইটের ইঞ্জিন-২-এ অপ্রত্যাশিত পাখির ধাক্কার কারণে প্লেনটিকে দ্রুত ঢাকা বিমানবন্দরে ফিরে আসতে হয়। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, “প্লেনের সব যাত্রী ও ক্রু নিরাপদে রয়েছেন। যেহেতু ফ্লাইটটির ইঞ্জিন মেরামতের প্রয়োজন, তাই তা সম্পূর্ণ করতে কিছু সময় লাগবে। এ সময় যাত্রীদের আরাম ও বিশ্রামের জন্য ঢাকার আশপাশের হোটেলগুলোতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
এই ঘটনার ঠিক চার দিন আগে, গত ১৬ মে কক্সবাজার আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট মাঝ আকাশে বিপদের সম্মুখীন হয়। প্লেনটির বাম পাশের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা উড়ে গিয়ে নিচে পড়ে যায়। ভয়াবহ এই ঘটনার পরও, পাইলটের দক্ষতায় ৭১ জন যাত্রী, যার মধ্যে শিশুরাও ছিল, নিরাপদে ঢাকায় অবতরণ করেন।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও পর্যাপ্ত বার্ড কন্ট্রোল ব্যবস্থার অভাবই কারণ হতে পারে
বিমান বিশেষজ্ঞ ও এভিয়েশন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, ঢাকার আকাশে ও বিমানবন্দরের আশেপাশে পাখির উপস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিচ্ছে। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ময়লা-আবর্জনার স্তুপ রয়েছে, সেখানে পাখির আনাগোনা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। নিয়মিত বার্ড কন্ট্রোল কার্যক্রম পরিচালনা না করলে এমন দুর্ঘটনা আবারও ঘটতে পারে বলে তারা সতর্ক করেছেন।
বাংলাবার্তা/এসজে