ছবি সংগৃহীত
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ৩৬তম কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব নিয়ে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের মুখোমুখি হয়েছিলেন হাবিবুর রহমান।
সোমবার (২ অক্টোবর) রাজধানীর মিন্টু রোডে ডিএমপি মিডিয়ার সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘ঢাকা শহরে প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ৭৩ হাজার মানুষ বসবাস করে। এই শহরে পুলিশিং একটি জটিল চ্যালেঞ্জ। তারপরও অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে নানা ধরনের সমস্যার সমাধান করে আসছে পুলিশ। আমার আগে বিভিন্ন সময় যারা কমিশনার ছিলেন, তারা বিভিন্নভাবে কাজ করে গেছেন। তাদের কার্যক্রমের গতিশীলতা ধরে রেখে কাজ করবো।’ তাছাড়া ঢাকার যানজটও একটি বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন নতুন ডিএমপি কমিশনার।
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ‘প্রযুক্তির উন্নয়নের কারণে অপরাধের গতিধারাও পরিবর্তন হয়েছে। সব বিষয় পর্যালোচনা করে পুলিশ কাজ করছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই সময়টাতে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি হয়ে থাকে। এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারাটাও একটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ। ২ কোটি ২৪ লাখ মানুষের জন্য ৩৪ হাজার পুলিশ সদস্য রয়েছে; যা নিতান্তই কম। তারপরও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে পুলিশ।’
রাজধানীবাসীর পাশাপাশি সাংবাদিকদের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন ডিএমপির কমিশনার। এছাড়াও বিভিন্ন সংগঠনেরও সহায়তা চান এই পুলিশ কর্মকর্তা। তিনি বলেন, বিট পুলিশিং জোরদার করে ‘সেফার ঢাকা, বেটার ঢাকা’ নির্মাণের জন্য লড়াই করে যাবো। শক্তিশালী একটি অবস্থানে রাখার জন্য পুলিশ সবসময় প্রস্তুত থাকবে। কোনও অপরাধীকেই ছাড় দেওয়া হচ্ছে না, ছোট কিংবা বড় যাই হোক।
এডিসি হারুন ও সানজিদা কাণ্ড
প্রথম সংবাদ সম্মেলনে এসে এডিসি হারুন ও সানজিদা প্রসঙ্গে কথা বলেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, তদন্ত চলছে। পত্র-পত্রিকায় বিভিন্ন জিনিস দেখেছি। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকে যদি কোনও অপরাধ থেকে থাকে, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে যতটুকু অপরাধ করবে তাদের সে অনুযায়ী শাস্তি দেওয়া হবে।’ এছাড়া রাষ্ট্রপতির এপিএস মামুনেরও যদি কোনও অপরাধ থেকে থাকে, সেটাও তার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখবে বলেও মনে করেন তিনি।
থানায় সেবার মান বাড়ানোর প্রত্যয়
ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেন, ডিএমপির থানাগুলোতে সেবার মান বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে। ঢাকা শহরকে বাংলাদেশ পুলিশের মডেল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য কাজ চলছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের কথা উঠে থাকে। থানায় গিয়ে কেউ যদি স্যাটিসফাই না হন, তাহলে ঊর্ধ্বতনও কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে। ঢাকা নগরবাসীর একটি লোকও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দিক থেকে বঞ্চিত থাকবে না, সেটা হতে দেওয়া হবে না— এটাই আমাদের প্রত্যয়।
‘মেসেজ টু কমিশনার’ হিসেবে একটি হট নম্বর চালু করা হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বিধিমালা তৈরি করে পরবর্তী সময়ে নম্বরটি ঘোষণা করা হবে। নগরবাসীর সমস্যা বুঝে সহায়তা করা হবে। যেকোনও অভিযোগ আসলে তা খতিয়ে দেখে প্রয়োজনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
রাজধানীতে ছিনতাই প্রতিরোধে নেওয়া হবে ব্যবস্থা
রাজধানীতে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া বিভিন্ন ছিনতাই ঘটনা প্রসঙ্গে হাবিবুর রহমান বলেন, ‘আমাদের কাছে যথেষ্ট তথ্য রয়েছে। মোহাম্মদপুর এলাকায় ঘটনাটি ঘটেছে সে বিষয়ে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ছিনতাইয়ের মতো ঘটনা কমিয়ে আনতে পুলিশের প্রচেষ্টা রয়েছে। একটি টাস্কফোর্স তৈরি করে ছিনতাই প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভিসা নীতি নিয়ে কমিশনারের ভাবনা
যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ভিসা নীতি নিয়ে কাজের ক্ষেত্রে ডিএমপির কর্মরত কর্মকর্তা-সদস্যদের মধ্যে কোনও ভাবনা বিরাজ করছে না বলে জানান নতুন কমিশনার। তিনি বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ডিএমপির প্রতিটি সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। আমি যোগদানের পর থেকে ভিসা নীতির বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনও আতঙ্ক দেখতে পাইনি।’
সড়কে জ্বলবে সিগনাল বাতি
সম্প্রতি রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে সিগন্যাল বাতিতে সমস্যা হচ্ছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি কোটেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। ট্রাফিকের যে সমস্যা তা শুধু ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব নয়। ট্রাফিক ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ফোর্সমেন্ট এনভারমেন্ট এডুকেশন এগুলো নিয়ে হচ্ছে ট্রাফিক ব্যবস্থা। এনফোর্সমেন্ট শুধু করে থাকে ট্রাফিক পুলিশ। রোদে দাঁড়িয়ে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ করে। অল্পদিনের মধ্যেই সিগনাল বাতির সমস্যার সমাধান করা হবে। এক্সপার্টাইজ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ট্রাফিক পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।’
রাস্তায় কোনও অবৈধ স্থাপনা থাকবে না
পুলিশ তার সামর্থ্য অনুযায়ী সব ধরনের কাজ করে যাবে। আইনের প্রয়োগ করতে চাই। প্রতিশ্রুতির সাথে বাস্তবায়নের সমস্যা গুলোও স্বীকার করে নিতে হবে। কোন সংগঠন যদি রাস্তায় বা ফুটপাতে অফিস করে থাকে সরকারি জায়গার ভিতরে সে সংগঠনকে কোন অবস্থাতেই সেখানে আমরা রাখতে দিতে চাই না। অবৈধ স্থাপনা ক্লিয়ার করে রাস্তা চলাচল স্বাভাবিক রাখতে চাই। আরো কিছু কিছু সমস্যা জানা আছে ট্রাফিকেও কিছু বিষয় রয়েছে সমস্যা রয়েছে। সড়কে চালকদের অসচেতনতা দূর করতে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। পথচারী পারাপারের কারণেও সড়কে নানা ধরনের সমস্যা হচ্ছে। আমি যোগদান এরপর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের সাথে আমি প্রথম মিটিং করেছি। এজন্য সবার সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা চাই আমরা।
গুজব ঠেকাতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে
গুজব নিয়ে বাংলাদেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে, তা অনেকের জানা আছে বলে উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার। তিনি বলেন, ‘মেইন স্ট্রিম মিডিয়ার এক ধরনের জবাবদিহিতা রয়েছে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ায় গুজব ছড়ালে অনেক ক্ষেত্রেই দেশের বাইরে থেকে গুজব ছড়ানো হয়। আমাদের সিস্টেমের ভেতরে যেগুলো রয়েছে, সেগুলোর বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নিতে পারি। আসন্ন দুর্গাপূজায় রাজধানীতে ২২০টির মতো পূজা মণ্ডপ রয়েছে। এগুলোর নিরাপত্তায় প্রতিটি পুলিশ সদস্য কাজ করবে।
সাইবার পেট্রোলিং জোরদার করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আশা করি কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।’ গুজবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
পুলিশি হয়রানি হলে ব্যবস্থা
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘অপরাধী যেই হোক পুলিশ হোক বা পুলিশের বাবা হোক অপরাধী সে অপরাধী। কেউ হয়রানির শিকার হলে যে কেউ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। যদি এসব বিষয়ে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে, তা খতিয়ে দেখে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মাদক নিয়ন্ত্রণের সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান
মাদক নিয়ন্ত্রণের জন্য শুধু পুলিশ নয়, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর নামে স্বতন্ত্র অধিদফতর রয়েছে উল্লেখ করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘বাংলাদেশে মাদক ইয়াবা তৈরি হয় না। এটি বাইরের দেশ থেকে আসে। তবে ভেতরে যেসব ইয়াবা রয়েছে, সেগুলো জব্দে কাজ করে পুলিশ। এমন একটি ছোট ট্যাবলেট, যা সহজে বহনযোগ্য। সমাজে যেসব স্বনামধন্য বক্তি আছেন, মাদকের চাহিদা কমানোর জন্য কী করা উচিত— সে বিষয়ে সবাই কাজ করবেন বলে আমি আশা করি। মাদক নিয়ে বিভিন্ন জায়গায় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে বিভিন্ন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার।