
ছবি: সংগৃহীত
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত করতে সরকার বড় ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, এবারের নির্বাচনে ৮০ হাজারেরও বেশি সেনা সদস্য মোতায়েন থাকবে। সেনাবাহিনীর পাশাপাশি পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) সদস্যরাও নিরাপত্তা দায়িত্বে মাঠে থাকবেন, যাতে দেশের প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়।
সোমবার (১১ আগস্ট) সকালে রাজধানীর কেরানীগঞ্জে র্যাব-১০ সদর দপ্তর, কেন্দ্রীয় কারাগার এবং তেঘরিয়া উচ্চবিদ্যালয়ের ভোটকেন্দ্র পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ তথ্য জানান। উপদেষ্টার এই ঘোষণা ভোটের নিরাপত্তা পরিকল্পনার গুরুত্ব ও পরিসরকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, অতীতে প্রতি ভোটকেন্দ্রে দুইজন আনসার সদস্য দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু এবার নিরাপত্তা জোরদারের অংশ হিসেবে প্রিসাইডিং কর্মকর্তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তায় অতিরিক্ত একজন অস্ত্রধারী আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। এতে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্ভাব্য যে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা রোধ করা সহজ হবে।
তিনি আরও জানান, ভোটের দিনে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা হবে। প্রতিটি ভোটকেন্দ্রে থাকবে বডি-অর্ন ক্যামেরা, যা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকাণ্ড এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সহায়ক হবে। এছাড়া তরুণ ভোটারদের জন্য বিশেষ বুথ এবং নারী-পুরুষের জন্য আলাদা বুথের ব্যবস্থা রাখা হবে, যাতে ভোটদানে স্বাচ্ছন্দ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, দেশের গণমাধ্যম দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করায় প্রতিবেশী কিছু দেশের প্রচারিত মিথ্যা ও বিভ্রান্তিকর সংবাদ বন্ধ হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক প্রলোভনে জুলাই-আগস্ট মাসে নিরপরাধ মানুষের নামে মামলা করা হয়েছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক রয়েছে এবং নির্দোষ মানুষ যেন আইনের ফাঁদে না পড়ে, তা নিশ্চিত করতে কাজ করছে।
তিনি সতর্ক করে বলেন, কেউ ব্যক্তিগত স্বার্থে অন্যকে হয়রানি করার চেষ্টা করলে তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইন সবার জন্য সমান, এবং নির্বাচনকালীন সময়ে এটি কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হবে।
আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের তুলনায় পরিস্থিতি অনেকটাই উন্নত হয়েছে। অবৈধ কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। বাসস্ট্যান্ড ও টেম্পোস্ট্যান্ড দখল এবং চাঁদাবাজির বিষয়ে তিনি স্পষ্ট করে বলেন, “চাঁদাবাজি যে-ই করুক, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে।” ইতোমধ্যেই অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং এই অভিযান চলমান থাকবে।
এর আগে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগার পরিদর্শন করেন। তিনি বন্দিদের খাদ্য, চিকিৎসা ও জীবনযাত্রার মান প্রত্যক্ষভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এবং কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। র্যাব-১০ সদর দপ্তর পরিদর্শনকালে তিনি মাঠপর্যায়ের নিরাপত্তা সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং নির্বাচনকালীন করণীয় বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কেরানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রিনাত ফৌজিয়া, কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেল দক্ষিণের সহকারী কমিশনার (ভূমি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন, ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আনিসুজ্জামান, কেরানীগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. জাহাঙ্গীর আলম এবং র্যাব-১০ এর অধিনায়ক মো. কামরুজ্জামান।
এই ঘোষণার মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে যে সরকার এবারের নির্বাচনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সেনা, পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের সমন্বিত মোতায়েনের ফলে দেশজুড়ে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের সম্ভাবনা আরও জোরালো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ