
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ পুলিশের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ধারাবাহিকতায় এবার সাতজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (ডিআইজি) পদমর্যাদার কর্মকর্তাকে অতিরিক্ত ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ (অতিরিক্ত আইজি) পদে উন্নীত করেছে সরকার। সোমবার (১১ আগস্ট) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের জারি করা একটি প্রজ্ঞাপনে এ তথ্য আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়। এই পদোন্নতি দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষ নেতৃত্বে নতুন মাত্রা যোগ করবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং অর্থ বিভাগের ব্যয় ব্যবস্থাপনা-৫ শাখার ০৯-১০-২০২৪ তারিখের নথির ভিত্তিতে, সব আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হওয়ার পর এই পদোন্নতি কার্যকর করা হয়েছে। নবসৃষ্ট সাতটি সুপারনিউমারারি পদের বিপরীতে কর্মকর্তাদের এই পদোন্নতি দেওয়া হয়। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পদগুলোতে কর্মরত ব্যক্তিরা পদোন্নতি, অবসর, অপসারণ বা অন্য কোনো কারণে পদত্যাগ করলে সেসব পদ স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। এছাড়া, পদ সৃজনের তারিখ থেকে এক বছরের জন্য এই পদগুলোর মেয়াদ কার্যকর থাকবে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত সাত কর্মকর্তার নাম এবং তারা এর আগে যেসব গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন তা নিম্নরূপ—
মো. আলী হোসেন ফকির – বর্তমানে এপিবিএনের (আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন) ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তিনি মাঠ পর্যায়ের অপারেশনাল অভিজ্ঞতার পাশাপাশি বিশেষ অভিযানে দক্ষতার জন্য পরিচিত।
জি এম আজিজুর রহমান – বিশেষ শাখা (এসবি)-এর ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। গোয়েন্দা তৎপরতা, সন্ত্রাস দমন এবং জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় তার অবদান রয়েছে।
মো. সরওয়ার – ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিআইজি)। রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও অপরাধ দমনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
মো. মোস্তফা কামাল – আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের ডিআইজি পদে ছিলেন। তিনি বিশেষ অভিযানের পাশাপাশি দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনায় অভিজ্ঞ।
কাজী মো. ফজলুল করিম – পুলিশ অধিদপ্তরের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। প্রশাসনিক দক্ষতা এবং নীতি প্রণয়নে তার অবদান রয়েছে।
মো. রেজাউল করিম – হাইওয়ে পুলিশের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্বে ছিলেন। সড়ক নিরাপত্তা, দুর্ঘটনা প্রতিরোধ এবং মহাসড়কে অপরাধ দমন তার দায়িত্বের অংশ ছিল।
মো. আহসান হাবীব পলাশ – চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রণে তার কাজ প্রশংসিত।
প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, এই সাতটি পদ সুপারনিউমারারি, অর্থাৎ অতিরিক্ত তৈরি করা হয়েছে এবং এটি স্থায়ী পদ নয়। পদধারীদের অবসর, পদোন্নতি বা অন্য কারণে পদ খালি হলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিলুপ্ত হবে। তাছাড়া এই পদের মেয়াদ সৃষ্টির তারিখ থেকে এক বছর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে।
অতিরিক্ত আইজি পদে উন্নীত হওয়া পুলিশ বাহিনীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক স্বীকৃতির একটি। এটি শুধু কর্মকর্তাদের ক্যারিয়ারে নতুন অধ্যায় যোগ করে না, বরং তাদের ওপর নতুন দায়িত্বও অর্পণ করে। এই পদোন্নতির মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন স্তরের আইনশৃঙ্খলা কার্যক্রম আরও শক্তিশালী হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পদোন্নতিপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ বর্তমান পদে বহাল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন, তবে নতুন পদমর্যাদা অনুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কৌশল নির্ধারণ এবং নীতি বাস্তবায়নে তারা আরও বেশি ক্ষমতা ও প্রভাবশালী ভূমিকা রাখতে পারবেন।
পুলিশ বাহিনীতে এ ধরনের পদোন্নতি কেবল ব্যক্তি পর্যায়ের স্বীকৃতি নয়, বরং সাংগঠনিক উন্নয়ন এবং নতুন নেতৃত্ব তৈরির অংশ হিসেবেও দেখা হয়। কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, যোগ্যতা ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদোন্নতি তাদের দায়িত্ব পালনে অনুপ্রেরণা যোগাবে।
জনস্বার্থে জারি করা এই আদেশ ইতোমধ্যেই কার্যকর হয়েছে। ফলে দেশের বিভিন্ন বিভাগ, রেঞ্জ এবং ইউনিটে প্রশাসনিক ও কৌশলগত কাজে নতুন উদ্যম দেখা যাবে বলে প্রত্যাশা করছে পুলিশ সদর দপ্তর।
বাংলাবার্তা/এমএইচ