
ছবি: সংগৃহীত
আসছে একটানা বৃষ্টিমুখর দিন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আগামী ১০ দিন পর্যন্ত মাঝারি থেকে অতিভারি বর্ষণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। এর মধ্যে কোথাও কোথাও হতে পারে বজ্রসহ দমকা হাওয়ার সঙ্গে অস্থায়ী দৃষ্টিসীমা হ্রাসকারী বৃষ্টিও। এই বৃষ্টির পেছনে কাজ করছে সক্রিয় মৌসুমী বায়ু এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সম্ভাব্য লঘুচাপ।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের মতে, জুলাইয়ের শেষ সপ্তাহজুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আকাশ থাকবে মেঘাচ্ছন্ন এবং বৃষ্টিপাতের প্রবণতা থাকবে উচ্চ মাত্রায়। এমনকি দেশের উপকূলীয় এলাকা ও পূর্বাঞ্চলে কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ দেখা দিতে পারে, যা জনজীবনে প্রভাব ফেলতে পারে।
আবহাওয়াবিদদের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মৌসুমী বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি বর্ধিতাংশ বিস্তৃত রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত।
এই সময় মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে রয়েছে মাঝারি অবস্থানে। এর ফলে সাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে, যা আগামী ২৪ জুলাইয়ের মধ্যে দেখা দিতে পারে। এই লঘুচাপ তৈরি হলে বৃষ্টিপাতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে।
বুধবার (২৩ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত: রংপুর, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রাজশাহী, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি বা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। বিশেষ করে রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সেই সঙ্গে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে, তবে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকবে।
বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত: ঢাকা, খুলনা, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও বরিশালের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই সময় কিছু এলাকায় হতে পারে মাঝারি থেকে অতিভারি বর্ষণ। তাপমাত্রা সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শুক্রবার (২৫ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত: খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী, রংপুর, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকবে। সেই সঙ্গে থাকবে বজ্রবৃষ্টি ও দমকা হাওয়ার সম্ভাবনা। তাপমাত্রা সামান্য কমতে পারে।
শনিবার (২৬ জুলাই) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত: খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের অধিকাংশ জায়গায় এবং রাজশাহী ও রংপুরের অনেক জায়গায় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
বিশেষ করে খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও অতিভারি বৃষ্টিপাত হতে পারে। এই সময় দেশের দিন ও রাতের তাপমাত্রা আরও সামান্য কমবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, উপরের এসব দিনের বৃষ্টিপাতের ধারাবাহিকতা আগামী ৫ দিন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে। অর্থাৎ একটানা ১০ দিন দেশে চলবে হালকা থেকে ভারি বৃষ্টিপাত। এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়বে দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্বাঞ্চলে।
বিশেষ করে নিচু এলাকাগুলোতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে পারে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে হতে পারে ভূমিধসের ঝুঁকি। নদীবন্দর এবং উপকূলবর্তী এলাকার জন্য প্রয়োজন হতে পারে সতর্কতা।
নগরজীবনে প্রভাব: ঢাকাসহ বড় শহরগুলোতে জলাবদ্ধতা ও যানজটের সম্ভাবনা রয়েছে।
কৃষিতে প্রভাব: অতিভারি বৃষ্টিপাত শস্যক্ষেতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করতে পারে।
পাহাড়ি এলাকায় সতর্কতা: সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে ভূমিধসের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
পর্যটনে বাধা: কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, সিলেট ও বান্দরবানের পর্যটন কার্যক্রমে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
আবহাওয়ার এই পরিবর্তন স্বাভাবিক হলেও এর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন প্রস্তুতি ও সচেতনতা। মৌসুমী বৃষ্টির এই প্রবণতা সাধারণত বর্ষা মৌসুমে দেখা গেলেও, অতিভারি বর্ষণ হলে তা জনজীবনে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে।
সরকারি ও স্থানীয় প্রশাসনের উচিত হবে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত আপডেট অনুযায়ী সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া এবং জনগণকে নিরাপদে থাকার পরামর্শ দেওয়া।
বাংলাবার্তা/এমএইচ