
ছবি: সংগৃহীত
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর বাতিল দাবিতে সচিবালয়ের কর্মচারীরা আজ সোমবার দুই ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন। গত রোববার অর্থ মন্ত্রণালয়ের সামনে বিক্ষোভ-সমাবেশ থেকে এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতারা।
গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সচিবালয়ের ১১ নম্বর ভবনের সামনে শুরু হয় কর্মচারীদের বিক্ষোভ। তারা সেখান থেকে মিছিল নিয়ে সচিবালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রাঙ্গণ প্রদক্ষিণ করেন এবং জোরালো ধ্বনি স্লোগান দেন। কর্মচারীরা নিজেদের দাবি আদায়ে উচ্চস্বরে জানান, “অবৈধ কালো আইন, মানি না, মানব না”, “আমাদের দাবি মানতে হবে, মানতে হবে”, “আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই”, “ফ্যাসিবাদী কালো আইন, মানি না মানব না”, “আপস না লড়াই, লড়াই লড়াই”, “সারা বাংলার কর্মচারী, এক হও লড়াই কর”।
বিক্ষোভের নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান বদিউল কবীর বলেন, আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সচিবালয়ের সব দফতরে দুই ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করা হবে। কর্মসূচির অংশ হিসেবে একই সময়ে সচিবালয়ের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে অবস্থিত কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিতে অবস্থান করা হবে। সেখানে কর্মচারীরা আলোচনা করে পরবর্তী কর্মপন্থা নির্ধারণ করবেন।
সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে সচিবালয়ের কর্মচারীরা প্রতিবাদ-আন্দোলন করে আসছেন। গত ২২ মে উপদেষ্টা পরিষদে এই অধ্যাদেশ অনুমোদনের পরই আন্দোলন শুরু হয়। কর্মচারীরা ২৪ মে থেকে তীব্র প্রতিবাদে নামেন। তবে আন্দোলনের মাঝেই ২৫ মে রাতে সরকার ওই অধ্যাদেশ জারি করেন, যা তাদের ক্ষোভ আরও বাড়িয়ে দেয়। ঈদুল আজহার ছুটির পর অফিস খোলার মাত্র এক দিন পর গত সোমবার সচিবালয়ে নতুন করে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা আজকের কর্মবিরতির মাধ্যমে আরও তীব্র আকার নিচ্ছে।
সচিবালয় সূত্র বলছে, অধ্যাদেশ বাতিল না করা হলে আন্দোলন আরও জোরদার হবে এবং কর্মচারীরা কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করবেন। তাদের দাবি, অধ্যাদেশ বাতিল ছাড়া চলবে না, কারণ এটি কর্মচারীদের কর্মসংস্থান ও অধিকার হরণে একটি কালো অধ্যাদেশ।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫-এর মাধ্যমে সরকারের চাকরির নিয়মাবলী পরিবর্তন করার চেষ্টা চলছে, যা কর্মচারীদের জন্য অনির্দিষ্ট সময়ের নিয়োগ, বিভিন্ন সুবিধা কমানোসহ অধিক নিয়ন্ত্রণের সুযোগ দেয়। এটি কর্মচারীদের মধ্যে ব্যাপক উদ্বেগ ও অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে।
সরকারি কর্মচারী সংগঠন এবং ঐক্য ফোরাম দাবি করছেন, সংশোধিত অধ্যাদেশ বাতিল ছাড়া তারা সরকারি চাকরির নিরাপত্তা হারাবেন এবং এই অধ্যাদেশ বাস্তবায়িত হলে সরকারি চাকরির মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ন হবে।
অবস্থান থেকে শুরু করে বিক্ষোভ-মিছিল ও কর্মবিরতির মাধ্যমে আজকের কর্মচারী আন্দোলন পরিষ্কার সংকেত দিচ্ছে—সরকারি চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা কঠোর অবস্থানে আছেন এবং তাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত শান্তি মিলবে না।
সচিবালয়, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট সরকারি অফিসগুলো আজ দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকবে, যা সরকারি কাজকর্মে বিশাল প্রভাব ফেলবে বলে জানা গেছে। একই সঙ্গে কর্মচারীদের এ কর্মসূচি আগামী দিনে আরো বৃহৎ কর্মসূচিতে রূপ নিতে পারে।
অতএব, সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সচিবালয়ের কর্মচারীদের এই আন্দোলন বাংলাদেশের প্রশাসনিক পরিবেশে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ