
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কর্মকর্তারা আজ থেকে এক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি শুরু করেছেন। তারা এনবিআর চেয়ারম্যানের অপসারণ দাবি এবং সংস্থার সংস্কারে যৌক্তিক প্রতিনিধিত্ব না থাকায় প্রতিবাদ হিসেবে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত চার ঘণ্টার কলম বিরতি পালন করছেন। এই কর্মসূচির ঘোষণা আগেই দিয়েছিলেন এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদ।
আজকের এই কর্মসূচিতে ঢাকার সকল এনবিআর দপ্তরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা একযোগে কলম বিরতি ও অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন। অন্যান্য জেলা ও বিভাগীয় দপ্তরগুলোতেও স্বতন্ত্রভাবে একই ধরনের কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। এতে করে দেশের রাজস্ব সংগ্রহের কাজের ওপর ইতিবাচক প্রভাব পড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
তবে আন্দোলনের উত্তাপে নতুনভাবে উস্কানি দিয়েছে গত রোববার (২২ জুন) এনবিআরের আয়কর অনুবিভাগের পাঁচ কর্মকর্তার ‘তাৎক্ষণিক বদলির’ খবর। কর প্রশাসনের প্রথম সচিব মো. মোসাদ্দেক হাসানের স্বাক্ষরিত আদেশ অনুযায়ী এই পাঁচ কর্মকর্তাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।
বদলির তালিকায় রয়েছেন আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের দুজন, এনবিআর বোর্ড অফিসের একজন, এবং ঢাকা ও কুমিল্লার কর অঞ্চলের দুই কর্মকর্তা। তাদের নতুন কর্মস্থলে মঙ্গলবার বা তার আগেই যোগ দিতে হবে এবং সোমবারের মধ্যে বর্তমান কর্মস্থল থেকে দায়িত্ব হস্তান্তর করতে হবে বলে আদেশে উল্লেখ রয়েছে।
বদলির মধ্যে থাকা কর্মকর্তাদের মধ্যে উপ-কর কমিশনার শাহ্ মোহাম্মদ ফজলে এলাহীকে ময়মনসিংহ কর অঞ্চলে, মোহাম্মদ শিহাবুল ইসলামকে খুলনা কর অঞ্চলে, মো. আব্দুল্লাহ ইউসুফকে বগুড়া কর অঞ্চলে, ইমাম তৌহিদ হাসান শাকিলকে কুমিল্লা কর অঞ্চলে এবং নুসরাত জাহান শমীকে রংপুর কর অঞ্চলে বদলি করা হয়েছে।
এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এই বদলিকে ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ ও ‘অগণতান্ত্রিক’ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচনা করছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক কর্মকর্তা বলেন, এই বদলি সাধারণ প্রশাসনিক প্রক্রিয়ার অংশ নয়, বরং এটি একটি সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র যার লক্ষ্য চলমান রাজস্ব সংস্কার কার্যক্রমকে দুর্বল করা।
তিনি আরও বলেন, ‘এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের অংশগ্রহণ ছাড়া কোনও ফলপ্রসূ ও কার্যকর সংস্কার সম্ভব নয়। এই ধরনের একতরফা সিদ্ধান্ত কখনও আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না।’
আরেক কর্মকর্তা জানান, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের এই ফ্যাসিস্ট আচরণ আমরা তীব্র ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছি।’
এর আগে গত মে মাসে এনবিআরকে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগে বিভক্ত করে ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ ও ‘রাজস্ব নীতি’ নামে অধ্যাদেশ জারি করেছিল সরকার, যা বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামে এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
সরকার অধ্যাদেশ বাস্তবায়নে এনবিআরের সঙ্গে আলোচনা করার প্রতিশ্রুতি দিলেও, আন্দোলনকারীরা এনবিআর চেয়ারম্যানের পদত্যাগ ছাড়া আন্দোলন বন্ধ করেননি। এমনকি তাঁকে ‘অবাঞ্ছিত’ ঘোষণা করে সংস্থার অফিসে প্রবেশে বাধা দিয়েছিলেন।
পরে এনবিআর চেয়ারম্যানকে সেনাবাহিনী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় অফিসে ফিরিয়ে আনা হয়।
কলম বিরতি কর্মসূচি ও বদলির মধ্যে এখন এনবিআরের রাজস্ব সংগ্রহ কার্যক্রমের ওপর কতটা প্রভাব পড়বে, সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে এ আন্দোলন ও বদলির ঘটনায় এনবিআরের ভবিষ্যৎ সংস্কারের পথে জটিলতা আরও বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।
সংস্থার কার্যক্রমে স্বচ্ছতা, অংশগ্রহণ ও ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী পদক্ষেপ নেওয়ার প্রয়োজনীয়তাও এ সময় আরও প্রখরভাবে উঠে এসেছে।
সার্বিক পরিস্থিতিতে এনবিআরের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একতা ও ধৈর্য্যের পাশাপাশি নীতিনির্ধারক ও প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষের বিচক্ষণতা প্রয়োজন, যাতে দেশের রাজস্ব ব্যবস্থাপনা শৃঙ্খলাবদ্ধ ও উন্নয়নমুখী হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ