
ছবি: সংগৃহীত
সরকার ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদের পরিবার এবং আহতদের কল্যাণ ও পুনর্বাসন অধ্যাদেশ-২০২৫’ জারি করেছে, যার আওতায় কেউ যদি মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে শহীদ পরিবারের সদস্য কিংবা আহত দাবির ভিত্তিতে সরকারি সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করে, তাহলে তাকে সর্বোচ্চ ২ বছরের কারাদণ্ড ও আর্থিক জরিমানার মুখোমুখি হতে হবে। ১৭ জুন মঙ্গলবার এই অধ্যাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।
অধ্যাদেশ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি যদি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নিজেকে শহীদের পরিবারের সদস্য বা আহত বলে দাবি করেন অথচ প্রকৃতপক্ষে তিনি সেই যোগ্যতার আওতায় পড়েন না, তাহলে তা হবে একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর আওতায় ওই ব্যক্তি সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ভোগ করতে পারেন। একইসঙ্গে তাকে দুই লাখ টাকা অর্থদণ্ড বা প্রাপ্ত সুবিধার দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দিতে হবে।
এখানে ‘শহীদ’ বলতে বোঝানো হয়েছে ২০২৫ সালের আগে ও পরে সংঘটিত জুলাই মাসের গণঅভ্যুত্থানে সরাসরি নিহতদের, আর আহত বলতে বোঝানো হয়েছে সেই সময় সরাসরি ক্ষতিগ্রস্তদের, যাদের শরীরে ক্ষত চিহ্ন বা স্থায়ী অক্ষমতা প্রমাণিত। অধ্যাদেশে বলা হয়েছে, কেউ যদি এই তথ্য গোপন করে বা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে সরকারি আর্থিক সুবিধা, চিকিৎসা বা পুনর্বাসনের সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করেন, তবে তা আইনত অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
এই অধ্যাদেশে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, এটি ফৌজদারি আইনের আওতাধীন হলেও সংশ্লিষ্ট অপরাধগুলো ‘অ-আমলযোগ্য ও জামিনযোগ্য’ হিসেবে গণ্য হবে। অর্থাৎ এই অপরাধে অভিযুক্ত হলে তাকে পুলিশ নিজ উদ্যোগে গ্রেপ্তার করতে পারবে না; আদালতের অনুমতি লাগবে। একইসঙ্গে মামলার বিচার, আপিল এবং অন্যান্য কার্যক্রম ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮ অনুযায়ী পরিচালিত হবে।
সরকার এই অধ্যাদেশে শহীদ ও আহতদের সুনির্দিষ্ট শ্রেণিতে ভাগ করে কল্যাণমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য আইনি ভিত্তি প্রদান করেছে। শহীদদের বলা হয়েছে ‘জুলাই শহীদ’ এবং আহতদের বলা হয়েছে ‘জুলাই যোদ্ধা’। আহতদের আবার তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে—অতি গুরুতর আহত, গুরুতর আহত এবং সাধারণভাবে আহত। এই শ্রেণিবিন্যাস অনুযায়ী প্রত্যেক ব্যক্তি তার ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা অনুসারে উপযুক্ত সহায়তা ও সুযোগ পাবেন।
প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারি সরকার যে ৮৩৪ জন শহীদের তালিকা গেজেট আকারে প্রকাশ করেছে, সেই তালিকাকে এই অধ্যাদেশে আইনি বৈধতা দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, আগেই প্রকাশিত এই তালিকা এখন থেকে আইনগতভাবে বৈধ এবং এই তালিকায় অন্তর্ভুক্তদের পরিবারই সরকারি সেবা পাওয়ার যোগ্য বিবেচিত হবে।
অধ্যাদেশে সরকারের বিভিন্ন কল্যাণ কার্যক্রম যেমন—চিকিৎসা সহায়তা, পুনর্বাসন প্যাকেজ, পরিবারভিত্তিক ভাতা এবং শিক্ষাসহ উন্নয়নমূলক সুবিধা—এসব কার্যক্রমকে আইনগত কাঠামোর আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর ফলে শহীদ পরিবারের সদস্য ও আহতদের জন্য এসব সেবা আরও স্বচ্ছভাবে এবং দায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত হবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অতীতে অনেক সময় শহীদ পরিবার বা আহত দাবিদারদের তালিকায় বিভ্রান্তিকর বা রাজনৈতিক বিবেচনায় নাম অন্তর্ভুক্তির অভিযোগ উঠেছে। নতুন এই অধ্যাদেশ সেই সম্ভাবনাকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা। কারণ, একবার কেউ মিথ্যা তথ্য দিয়ে সুবিধা গ্রহণের চেষ্টা করলে তা চিহ্নিত হলে শুধু সুবিধা বাতিল নয়, বরং তাকে জেল ও আর্থিক শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
সরকারি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই অধ্যাদেশের মাধ্যমে একদিকে যেমন প্রকৃত শহীদ পরিবার ও আহতদের অধিকতর মর্যাদা নিশ্চিত হবে, অন্যদিকে প্রতারণা ও রাজনৈতিক অপব্যবহার রোধে কঠোর বার্তা যাবে।
এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন যুদ্ধাহতদের বিভিন্ন সংগঠন, তবে তারা বলেছেন—আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও তথ্য যাচাইয়ের নিরপেক্ষ প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে হবে, যাতে প্রকৃত উপকারভোগীরা বঞ্চিত না হন এবং প্রতারকরা শাস্তির আওতায় আসেন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ