
ছবি: সংগৃহীত
সারা দেশে আগামী পাঁচ দিন ধরে বজ্রসহ ভারি বর্ষণের সম্ভাবনার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। দেশের আটটি বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় প্রতিদিনই হতে পারে দমকা হাওয়ার সঙ্গে বজ্রবৃষ্টি, আর কোথাও কোথাও ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণেরও আশঙ্কা রয়েছে। এতে সামান্য হ্রাস পেতে পারে দেশের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, মৌসুমি বায়ু এখন বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং তা উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থানে রয়েছে, যার প্রভাবেই দেশজুড়ে এমন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, মঙ্গলবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে শুরু করে আগামী শনিবার পর্যন্ত প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকা সহ রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ স্থানে মাঝারি থেকে ভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতিটি পূর্বাভাসেই বলা হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে এবং কোথাও কোথাও বজ্রপাতের সঙ্গে বিদ্যুৎ চমকানোরও সম্ভাবনা রয়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা:
সারা দেশের আটটি বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও হতে পারে মাঝারি ধরনের ভারি থেকে অতিভারি বর্ষণ। দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য হ্রাস পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা:
পূর্ববর্তী দিনের মতোই একই ধরনের আবহাওয়া বিরাজ করবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে দমকা হাওয়া, বজ্রবৃষ্টি এবং কোথাও কোথাও ভারি বর্ষণ হতে পারে। তবে তাপমাত্রা থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা:
আবহাওয়ার গতিপথে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন না থাকায় একই ধরনের পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে। চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের উপকূলীয় অঞ্চলসহ অন্যান্য পাহাড়ি এলাকাগুলোতে অতিভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, যার ফলে পাহাড়ধস বা নগরজুড়ে জলাবদ্ধতার ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
শুক্রবার (২০ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা:
এ দিনেও দেশের অধিকাংশ জায়গায় বিদ্যুৎ চমকানোসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন, বজ্রপাতের হার বাড়তে পারে এবং পাহাড়ি অঞ্চলে প্রবল বর্ষণে ভূমিধসের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে।
শনিবার (২১ জুন) সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টা:
সপ্তাহ শেষে গিয়েও আবহাওয়ার কোনো উন্নতির সম্ভাবনা নেই। আগের দিনের মতোই একই ধরনের বৃষ্টিপাতের পরিস্থিতি বজায় থাকবে বলে পূর্বাভাসে জানানো হয়। দিন ও রাতের তাপমাত্রাও থাকবে প্রায় অপরিবর্তিত।
টানা বৃষ্টিতে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে নিম্নাঞ্চল ও ড্রেনেজ ব্যবস্থায় দুর্বলতা থাকা এলাকাগুলোর মানুষকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে, অফিসপাড়ায় এবং বাজার এলাকায় পানি জমে জনভোগান্তি সৃষ্টি হওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, কৃষি খাতে এই বৃষ্টি কখনও আশীর্বাদ আবার কখনও দুর্যোগ হয়ে দেখা দিতে পারে। নতুন আমন রোপণ এবং পাট চাষের জন্য এটি সহায়ক হলেও অতিভারি বৃষ্টির ফলে জলাবদ্ধতা দেখা দিলে ফসলের ক্ষতির ঝুঁকিও তৈরি হতে পারে।
বজ্রপাতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় অনেক এলাকায় বৈদ্যুতিক সঞ্চালনে বিঘ্ন ঘটতে পারে। শহরাঞ্চলের তুলনায় গ্রামাঞ্চলে সমস্যা বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পাশাপাশি, অতিবৃষ্টির কারণে সড়কপথে কাদা ও কর্দমাক্ত পরিবেশে যানবাহন চলাচল ব্যাহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সাধারণ জনগণকে বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা এড়িয়ে চলতে এবং বিদ্যুৎ চমকানো অবস্থায় মোবাইল ফোন বা লম্বা ধাতব বস্তু ব্যবহারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছে। শিশু ও বৃদ্ধদের বাসার বাইরে না যাওয়ার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া যারা সড়কপথে বা নৌপথে যাতায়াত করেন, তাদের প্রতি বিশেষভাবে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে, কারণ বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে স্রোতের গতি বাড়তে পারে এবং ছোট নৌযান চলাচলে বিঘ্ন ঘটতে পারে।
পাঁচ দিন ধরে সারা দেশে ঝড়-বৃষ্টি ও বজ্রপাতের যে পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর, তা নিছক কোনো মৌসুমি পরিবর্তন নয়—বরং জলবায়ুগত বৈচিত্র্য ও ভূ-প্রাকৃতিক চাপের এক বাস্তব রূপ। তাই এই সময়ের আবহাওয়া পরিবর্তনের বিষয়ে সচেতন থাকা এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত আপডেট নজরে রাখার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করাই হবে বুদ্ধিমানের কাজ।
বাংলাবার্তা/এমএইচ