
ছবি: সংগৃহীত
মধ্যপ্রাচ্যে নতুন করে যুদ্ধের ছায়া নেমে এসেছে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদন প্রকাশ করে জানিয়েছে, ইসরাইল এখন ইরানের উপর সরাসরি সামরিক হামলার জন্য সম্পূর্ণ প্রস্তুত। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের গোয়েন্দা এবং কূটনৈতিক মহলে এই আশঙ্কা ক্রমশ জোরালো হচ্ছে। সম্ভাব্য এ হামলার ফলে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে আরও অস্থিতিশীলতা তৈরি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের একাধিক নিরাপত্তা সূত্র নিউইয়র্ক টাইমসকে জানিয়েছে, ইসরাইল সম্ভবত ইরানের পারমাণবিক স্থাপনার বিরুদ্ধে বিমান হামলা চালাতে চলেছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইসরাইল এই পদক্ষেপে যাওয়া মাত্রই পুরো অঞ্চল জুড়ে উত্তেজনার বিস্ফোরণ ঘটবে। এ পরিস্থিতিকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরাক ও পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে তাদের কূটনীতিকদের প্রত্যাহার শুরু করেছে। পেন্টাগন থেকেও মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলোতে অবস্থানরত সেনাদের স্বেচ্ছায় ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
বর্তমান এই উত্তেজনার কেন্দ্রে রয়েছে ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার পরমাণু আলোচনা। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে একটি কঠোর পরমাণু চুক্তি করতে চাইলেও তা কার্যত অচলাবস্থায় চলে গেছে। ট্রাম্প এ বিষয়ে সোজাসাপ্টা বক্তব্য রেখেছেন—“তারা পারমাণবিক অস্ত্র রাখতে পারবে না। এটা খুবই সহজ কথা।”
ট্রাম্পের এই দৃঢ় অবস্থান এবং ইসরাইলের সামরিক সক্রিয়তা পারমাণবিক আলোচনার ভবিষ্যতকে বিপদের মুখে ঠেলে দিয়েছে। ওয়াশিংটনে কূটনীতিকরা আশঙ্কা করছেন, যদি ইসরাইল এ মুহূর্তে ইরানকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়, তবে তেহরান পারমাণবিক অস্ত্র নির্মাণে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে। ফলে তেহরানকে চুক্তিতে ফিরিয়ে আনার পশ্চিমা কৌশল পুরোপুরি ব্যর্থ হয়ে যেতে পারে।
এক মাস আগেই মার্কিন সংবাদমাধ্যম অ্যাক্সিওস ইসরাইলের যুদ্ধ-প্রস্তুতি সম্পর্কে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিল। এতে বলা হয়েছিল, ইরান-যুক্তরাষ্ট্র আলোচনায় ব্যর্থতা দেখা দিলে ইসরাইল দ্রুত ইরানের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোতে হামলা চালাতে প্রস্তুত রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়, ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু, যিনি "বিবি" নামে পরিচিত, তিনি এই আলোচনার ভেঙে পড়ার জন্য মুখিয়ে আছেন এবং তিনি তখনই সামরিক পদক্ষেপের দিকে যেতে পারেন।
তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, নেতানিয়াহু নিশ্চিত হতে চাইছেন যে ট্রাম্প আলোচনায় হতাশ এবং যুদ্ধের অনুমোদনে প্রস্তুত। এতে বোঝা যায়, যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত ইসরাইলের হামলার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অনুঘটক হিসেবে কাজ করছে।
ইরানও চুপ করে বসে নেই। দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ সরাসরি হুমকি দিয়ে বলেছেন, “যদি ইরানের উপর হামলা হয়, তাহলে ইসরাইলের সবচেয়ে বড় মিত্র যুক্তরাষ্ট্রকে এর ফল ভোগ করতে হবে।” তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এই অঞ্চলে মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলো আমাদের প্রতিশোধের প্রথম লক্ষ্য হবে।”
ইরান এর আগেও বহুবার বলে এসেছে যে, তেহরানের ওপর ইসরাইল হামলা চালালে তারা তা সরাসরি মার্কিন আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করবে এবং সেই অনুযায়ী প্রতিক্রিয়া জানাবে। বিশেষ করে ইরান তাদের ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি ও সামরিক উপস্থিতি ব্যবহার করে মধ্যপ্রাচ্যের মার্কিন ঘাঁটিগুলোর উপর নজরদারি ও পাল্টা হামলার পরিকল্পনা তৈরি রেখেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মুহূর্তে ইসরাইলের সরাসরি হামলা ও ইরানের প্রতিশোধমূলক হুমকি মধ্যপ্রাচ্যে এক ভয়ঙ্কর সংঘাতের পূর্বাভাস দিচ্ছে। এমনিতেই গাজায় হামাস-ইসরাইল যুদ্ধ, ইয়েমেনে সৌদি জোট-বিরোধী সংঘর্ষ, এবং লেবাননের হিজবুল্লাহর সঙ্গে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষাপটে মধ্যপ্রাচ্য এক গভীর জটিলতার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তার উপর যদি ইরান-ইসরাইল সরাসরি যুদ্ধে জড়ায়, তবে সিরিয়া, ইরাক, বাহরাইন, কুয়েত, এমনকি আফগানিস্তান পর্যন্ত এর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া পড়বে।
ইসরাইল যদি ইরানে হামলা চালায়, তাহলে শুধু দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সংঘাতই নয়, বরং এটি রূপ নিতে পারে একটি পূর্ণাঙ্গ আঞ্চলিক যুদ্ধে। এই সম্ভাব্য সংঘাতকে ঘিরে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক মহল এখন জরুরি সমঝোতার চেষ্টা করছে। তবে আকারে ছোট হলেও এই সম্ভাব্য হামলা বৈশ্বিক নিরাপত্তা ও তেলবাজারে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে, যার জন্য বিশ্ব ইতোমধ্যেই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে।
বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখন নজর—তেল আবিব ও তেহরানের পরবর্তী পদক্ষেপের দিকে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ