
ছবি: সংগৃহীত
ভারতের গুজরাট রাজ্যের রাজধানী আহমেদাবাদে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে একটি ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা ঘটেছে, যেখানে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত সরদার বল্লভভাই প্যাটেল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টারমাক এলাকায়, যেখানে উড়োজাহাজটি টেকঅফ করার প্রস্তুতির সময় হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বিধ্বস্ত হয় বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে কয়েকটি সূত্র বলছে, উড়োজাহাজটি অবতরণের সময়ও দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে।
দুর্ঘটনার পরপরই বিমানবন্দরের অভ্যন্তরে এবং আশপাশের এলাকায় ধোঁয়ার বিশাল কুণ্ডলি দেখা গেছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়া ভিডিও এবং ছবিতে দেখা গেছে—আহমেদাবাদের অভিজাত আবাসিক এলাকাগুলোর উপর কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গেছে আকাশ। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা বিকট শব্দে বিস্ফোরণের মতো আওয়াজ শুনতে পান, এরপরই চারদিক ধোঁয়ায় ঢেকে যায় এবং আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পুরো এলাকায়।
প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটিতে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু সদস্য ছিলেন। উড়োজাহাজটি ঠিক কোন মডেলের বা কোন রুটে যাচ্ছিল, তা এখনও নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। তবে এটিকে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বাণিজ্যিক যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ হিসেবে শনাক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত হতাহত কিংবা প্রাণহানির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয়নি। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও উদ্ধারকর্মীরা জানিয়েছেন, বহু মানুষের আহত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং হতাহতের সংখ্যা খুব বেশি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় দমকল বাহিনীর একাধিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) ও সশস্ত্র বাহিনীর উদ্ধার ইউনিটও মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে নিরাপত্তার স্বার্থে বিমানবন্দরের আশেপাশের সকল সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপদে সরিয়ে নেওয়ার পাশাপাশি, উদ্ধার অভিযান চালানো সহজ করতে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দাদের ঘর থেকে না বের হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিমানবন্দরের সব ফ্লাইট ওঠানামা আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
আহমেদাবাদ বিমানবন্দরটি বর্তমানে ভারতের অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আদানি গ্রুপের অধীনে পরিচালিত হচ্ছে। তারা এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো বিবৃতি দেয়নি। একইভাবে ভারতের অসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ এবং এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেও দুর্ঘটনা নিয়ে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
ভারতের প্রভাবশালী সংবাদ সংস্থা এএনআই (ANI) জানিয়েছে, পুরো ঘটনার তদন্ত শুরু করা হয়েছে এবং উদ্ধার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত কিছু জানানো সম্ভব নয়। দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটনে ইতোমধ্যে সিভিল অ্যাভিয়েশন ও ডিরেক্টরেট জেনারেল অব সিভিল অ্যাভিয়েশন (DGCA) আলাদা করে তদন্ত শুরু করেছে।
স্থানীয় সময় বিকেল ৩টার দিকে ঘটনাটি ঘটে বলে নিশ্চিত করেছে পুলিশ। আর সেই সময় থেকেই শুরু হয় ব্যাপক উদ্ধার অভিযান। বিমানবন্দরের ভেতরে ও আশপাশে শতাধিক অ্যাম্বুলেন্স ও দমকল বাহিনীর গাড়ি মোতায়েন করা হয়।
বিমান দুর্ঘটনার কারণে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পরিবার-পরিজনদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। যাত্রী তালিকা এখনও প্রকাশ করা হয়নি, ফলে যাত্রীর স্বজনরা সংবাদ মাধ্যম ও বিমানবন্দরের তথ্যকেন্দ্রে ভিড় করছেন।
উল্লেখ্য, ভারতে গত কয়েক বছরে বড় ধরনের বিমান দুর্ঘটনার ঘটনা কম হলেও মাঝেমধ্যে কারিগরি ত্রুটি ও আবহাওয়ার কারণে ছোটখাটো দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে আজকের এই দুর্ঘটনাটি দেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে অন্যতম ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে রয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দপ্তর থেকেও তাৎক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে বলে জানা গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই গুজরাট রাজ্যের হওয়ায় বিষয়টি আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে।
এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান চলমান রয়েছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে আরও বিস্তারিত জানতে বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুম থেকে নিয়মিত ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হচ্ছে।
ঘটনার উন্নয়ন সম্পর্কে আরও তথ্য পাওয়া মাত্র পাঠকদের জানানো হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ