
ছবি: সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সম্প্রতি ঘনীভূত হওয়া উত্তেজনার মধ্যেই পাকিস্তান একটি নতুন সামরিক অভিযানের সূচনা করেছে, যার নাম দেওয়া হয়েছে — ‘অপারেশন বুনয়া নুম মারসূস’। এটি কোনো সাধারণ সামরিক অভিযান নয়; বরং এর নামকরণেই স্পষ্ট হয়ে উঠেছে এর পেছনে থাকা ধর্মীয়, আদর্শিক এবং কৌশলগত ব্যাখ্যা। এই অভিযানের নামটি নেওয়া হয়েছে পবিত্র কুরআনের সুরা আছ-ছফের (সূরা ৬১), চতুর্থ আয়াত থেকে, যেখানে বলা হয়েছে:
"إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلَّذِينَ يُقَـٰتِلُونَ فِى سَبِيلِهِۦ صَفًّۭا كَأَنَّهُم بُنْيَـٰنٌۭ مَّرْصُوصٌۭ"
— অর্থাৎ: "নিশ্চয়ই আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন, যারা তার পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসা-গাঁথা প্রাচীর।"
এই আয়াতটি ইসলামে ঐক্য, শৃঙ্খলা এবং আস্থা নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বোঝানো হয়, যারা আল্লাহর পথে একত্রিত হয়ে সংঘবদ্ধভাবে সংগ্রাম করে, তারা এক অদম্য শক্তিতে পরিণত হয়—যেন একটি সুদৃঢ়, সীসাগাঁথা প্রাচীর। পাকিস্তান সেনাবাহিনী এই আয়াত থেকেই অনুপ্রাণিত হয়ে তাদের সাম্প্রতিক পালটা হামলার নাম রেখেছে ‘অপারেশন বুনয়া নুম মারসূস’, যার মাধ্যমে তারা শুধু একটি সামরিক অভিযান নয়, বরং এক আদর্শিক ও ধর্মীয় বার্তা বিশ্ববাসীর সামনে উপস্থাপন করতে চেয়েছে।
আল জাজিরা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, এই অভিযানের নামকরণ শুধুমাত্র প্রতিরোধের প্রতীক নয়, বরং এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক-সামরিক অভিপ্রায়, বিশ্বাস ও মনোবলের প্রতিফলন। এটি একটি স্পষ্ট বার্তা—তাদের প্রতিরক্ষা এবং প্রতিশোধের চেতনা কেবল কৌশলগত নয়, তা ধর্মীয় বিশ্বাস ও আদর্শিক প্রেরণাতেও উজ্জীবিত।
এই অভিযানের সূচনা মূলত ঘটে ২২ এপ্রিল ভারতের জম্মু ও কাশ্মীরের পেহেলগামে এক ভয়াবহ হামলার পর। সেখানে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে ২৬ জনের প্রাণহানি ঘটে। ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এই হামলার জন্য সরাসরি পাকিস্তানকে দায়ী করা হয় এবং ৭ মে রাতে ভারত পাকিস্তানের ভূখণ্ডে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এ হামলায় পাকিস্তানের কয়েকটি সামরিক স্থাপনায় বিস্ফোরণ ঘটে এবং হতাহতের খবর পাওয়া যায়।
তবে এখানেই থেমে থাকেনি পাকিস্তান। ভারতীয় হামলার জবাব দিতে ‘অপারেশন বুনয়া নুম মারসূস’ নামে পাল্টা সামরিক অভিযান শুরু করে তারা। পাকিস্তান দাবি করেছে, এই অভিযানের অংশ হিসেবে তারা ভারতের একাধিক যুদ্ধবিমান এবং ড্রোন ভূপাতিত করেছে, সীমান্তবর্তী এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ সেনাঘাঁটিতে হামলা চালানো হয়েছে, এবং পালটা আঘাতে ভারতীয় সামরিক স্থাপনাগুলিতে উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, ‘অপারেশন বুনয়া নুম মারসূস’ কেবল একটি প্রতিশোধমূলক সামরিক পদক্ষেপ নয়, বরং এটি একধরনের ধর্মীয় আহ্বান। এর মাধ্যমে পাকিস্তান আন্তর্জাতিক মুসলিম বিশ্বকে একটি বার্তা দিতে চাচ্ছে—তারা একা নয়, বরং ঈমান, ঐক্য এবং আদর্শিক প্রতিরোধের মাপকাঠিতে তারা এক সীসা-গাঁথা শক্তি। নামটি এমনভাবে নির্বাচিত হয়েছে যেন এটি পাকিস্তানের রাজনৈতিক ও সামরিক নীতিতে ইসলামী চেতনার উপস্থিতিকে জোরালোভাবে তুলে ধরে।
তাছাড়া এই নামের ব্যবহার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ মনোবল দৃঢ় করতে এবং জনমনে একটি নৈতিক বৈধতা তৈরি করতে সহায়ক হতে পারে। দেশের ভেতর সাম্প্রতিক রাজনৈতিক চাপ ও আন্তর্জাতিক চাপে সেনাবাহিনী এই অভিযানকে এক প্রতীকী জবাব হিসেবেই প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এখনো নতুন করে কোনো বড় প্রতিক্রিয়া আসেনি, তবে সীমান্তে সেনা মোতায়েন জোরদার করা হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক পর্যায়ে এই ঘটনায় নতুন করে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে।
যদিও দুই দেশের মধ্যে এমন পালটা হামলা অতীতেও ঘটেছে, তবে এবারের সংঘর্ষে ধর্মীয় ব্যাখ্যা এবং আদর্শিক বার্তার সংযোজন একটি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। এটি কেবল সামরিক উত্তেজনার বিষয় নয়, বরং ধর্ম, জাতীয়তা, এবং কৌশলগত অবস্থানকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বৈরিতাকে আরও উসকে দিতে পারে।
এই অভিযানের মাধ্যমে পাকিস্তান যেভাবে পবিত্র কুরআনের একটি আয়াতকে সামরিক কৌশলের অংশ হিসেবে উপস্থাপন করেছে, তা নিঃসন্দেহে মধ্যপ্রাচ্যসহ বৃহত্তর মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়াকেও আকর্ষণ করতে পারে—বিশেষত ধর্মীয় ঐক্যের ভাবনায় অনুপ্রাণিত দেশগুলোর মাঝে। ফলে এর প্রভাব কেবল উপমহাদেশেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং এটি ভূরাজনৈতিক পরিসরে একটি বৃহত্তর বার্তা হিসেবেই বিবেচিত হতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ