
ছবি: সংগৃহীত
অবরুদ্ধ গাজায় ইসরাইলি বাহিনীর টানা হামলায় রোববার একদিনেই প্রাণ হারিয়েছেন আরও ৫১ জন ফিলিস্তিনি। শুধু তাই নয়, মানবিক সহায়তার জন্য অপেক্ষারত অবস্থায় মারা গেছেন আরও ২৪ জন। আর অনাহার ও অপুষ্টিতে মৃত্যুবরণ করেছেন অন্তত ৮ জন। ফলে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে খাদ্যাভাবজনিত মৃত্যু প্রায় ৩ শত ছুঁইছুঁই করছে।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা জানায়, ইসরাইল গত ৬ আগস্ট গাজা শহরে সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে জেতুন ও সাবরা মহল্লায় এক হাজারেরও বেশি ভবন সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের দাবি, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও শত শত মানুষ চাপা পড়ে আছেন।
ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্সের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, টানা গোলাবর্ষণ ও অবরুদ্ধ সড়কের কারণে অধিকাংশ এলাকায় উদ্ধারকাজ কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। অনেক নিখোঁজের খবর পাওয়া গেলেও জরুরি কর্মীরা এগোতে পারছেন না। এদিকে হাসপাতালগুলোতে ভয়াবহ চাপ সৃষ্টি হয়েছে, চিকিৎসকরা আহতদের সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন।
“গাজার কোথাও নিরাপদ নয়। উত্তর থেকে দক্ষিণ—সব জায়গাতেই ইসরাইলি বোমা পড়ছে। ঘরবাড়ি, স্কুল, আশ্রয়কেন্দ্র এমনকি ত্রাণ শিবিরও রেহাই পাচ্ছে না,” বিবৃতিতে উল্লেখ করে সিভিল ডিফেন্স।
গাজা শহরের আল-জালাআ সড়কের একটি অ্যাপার্টমেন্টে হামলায় অন্তত তিনজন নিহত হন, যার মধ্যে একজন শিশু। পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরেও একাধিক ভবন ধ্বংস হয়েছে। স্থানীয়দের ভাষায়—“চারপাশে বিস্ফোরণের শব্দ থামছেই না। দুর্ভিক্ষপীড়িত এলাকায়ও বোমা বর্ষণ চলছে।”
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুধু অনাহার ও অপুষ্টিতেই এ পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ২৮৯ জন। তাদের মধ্যে ১১৫ জনই শিশু। মানবিক সহায়তা পৌঁছাতে না পারায় পরিস্থিতি দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে।
জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি প্রয়োজন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক মুখপাত্র বলেন, “গাজায় এখন চিকিৎসা ও খাদ্য উভয়েরই ভয়াবহ সংকট। হাসপাতালগুলো ধ্বংসের মুখে, আর ত্রাণ কাফেলাও পৌঁছাতে পারছে না।”
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের মতে, “গাজায় যা ঘটছে তা স্পষ্টতই যুদ্ধাপরাধ। সাধারণ মানুষকে লক্ষ্য করে এই ধরনের বোমা বর্ষণ আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে অমান্য করছে।”
সব মিলিয়ে, গাজায় প্রতিদিনই নতুন করে নিহতের সংখ্যা বাড়ছে। ধ্বংসস্তূপ, ক্ষুধা ও অনিশ্চয়তা মিলিয়ে এক অমানবিক পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন ফিলিস্তিনিরা।
বাংলাবার্তা/এমএইচও