
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের পাঠ্যবইয়ে যুক্ত হচ্ছে দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এমন অধ্যায় যা আগে শিক্ষার্থীদের কাছে খণ্ডিতভাবে উপস্থাপিত হতো। ষষ্ঠ থেকে নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে এবার শেখ হাসিনার শাসনামল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বিস্তারিতভাবে আলোচনা করা হয়েছে। পাঠ্যবইয়ে শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচারী ও গণহত্যাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, এবং দমন-পীড়ন, ভোটকৌশল ও রাষ্ট্রীয় দুর্নীতির প্রেক্ষাপট তুলে ধরা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম কমিটির ১৮ আগস্টের বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, নতুন পাঠ্যবইয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। এই অধ্যায়ে শিক্ষার্থীরা শেখ হাসিনার তৎকালীন শাসনামল, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল, নির্বাচনের অনিয়ম এবং বিরোধীদের ওপর শাসনব্যবস্থার নিপীড়নের ঘটনা বিস্তারিতভাবে জানবে। ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠে উল্লেখ রয়েছে, ‘আন্দোলন দমনে হাসিনার নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও সরকারদলীয় সন্ত্রাসীরা ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়, ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।’
সপ্তম থেকে নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে শেখ হাসিনার শাসনকে ‘ফ্যাসিবাদী’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণির পাঠে বলা হয়েছে, ‘শাসনের মূল ভিত্তি ছিল গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো দমন করা। এতে একদলীয় আধিপত্য তৈরি হয়।’ নবম-দশম শ্রেণির বইয়ে আরও বিস্তারিতভাবে উল্লেখ রয়েছে, ‘শেখ হাসিনার সরকার জনমতের বিপরীতে চলাচল করত, ভোট প্রক্রিয়া ও নির্বাচনী অধিকার সীমিত করত এবং ২০৪১ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকার রোডম্যাপ প্রণয়ন করত। জনগণ এ নীলনকশা প্রত্যাখ্যান করে।’
পাঠ্যবইয়ের প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে শিক্ষার্থীদের জন্য নির্দেশনা রয়েছে, কীভাবে তারা গণঅভ্যুত্থান ও ছাত্র আন্দোলনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করবে। ষষ্ঠ শ্রেণির পাঠ শেষে শিক্ষার্থীদের জুনিয়র নাগরিক দায়িত্ব ও বিচার বিশ্লেষণ করতে বলা হয়েছে। অষ্টম শ্রেণিতে তাদের জুলাই গণঅভ্যুত্থানের প্রধান কারণ ও পরিণতি চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে। নবম-দশম শ্রেণিতে বিতর্ক প্রতিযোগিতা ও গণতান্ত্রিক শাসন বনাম স্বৈরতান্ত্রিক শাসনের তুলনা করতে বলা হয়েছে।
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের গবেষকরা জানাচ্ছেন, ‘এই পাঠ্যবই শিক্ষার্থীদের গণতান্ত্রিক মনোভাব গড়ে তুলবে। তারা ইতিহাসের প্রকৃত চিত্র জানতে পারবে এবং জীবনে সহিষ্ণু, দুর্নীতিমুক্ত ও দায়িত্বশীল নাগরিক হয়ে উঠবে।’ অধ্যাপক রবিউল কবির চৌধুরী বলেন, ‘সম্পাদনা পরিষদ প্রধান সম্পাদকের নেতৃত্বে পাঠ্যবইয়ের সামগ্রী যাচাই করছে। সকল সংশোধনী ও আপত্তি গ্রহণ করে পাঠ্যক্রমকে শিক্ষার্থীদের উপযোগী করা হবে।’
নতুন পাঠ্যক্রমে শেখ হাসিনার শাসনামল ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের খুঁটিনাটি তুলে ধরার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে এবং তাদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠার দিকে প্রেরণা দেওয়া হবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও