
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ এক যুগ পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আবারও অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে ঘিরে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যেমন উচ্ছ্বাস বিরাজ করছে, তেমনি শিক্ষাঙ্গনে শৃঙ্খলা ও সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যেও নানা প্রস্তুতি নিচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নির্বাচনের সুষ্ঠু ও অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে বৃহস্পতিবার (২১ ডিসেম্বর) প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তা অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ জসীম উদ্দিন এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনের জন্য আচরণবিধি জারি করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোনো প্রার্থী বা তাদের সমর্থকরা আজ থেকে আগামী ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কোনো ধরনের উপঢৌকন বা উপহার বিতরণ করতে পারবেন না। একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের আপ্যায়ন করানো, অর্থনৈতিক সহায়তা প্রদান, কিংবা স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করার মতো কার্যক্রমকেও সুস্পষ্টভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ এসব কার্যক্রম সরাসরি ভোটার প্রভাবিত করার কৌশল হিসেবে গণ্য হতে পারে।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানিয়েছে, নির্বাচনে সমান সুযোগ ও প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ নিশ্চিত করার জন্যই এই নির্দেশনা। যে কোনো প্রার্থী বা পক্ষ এ ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হলে তা আচরণবিধি ভঙ্গ হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
অভিযোগ রয়েছে, অতীতে অনেক সময় নির্বাচনের আগে প্রার্থীরা নানা সামাজিক বা সেবামূলক কার্যক্রম আয়োজনের মাধ্যমে ভোটারদের প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছে। এবারের আচরণবিধিতে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, কোনো প্রার্থী স্বপ্রণোদিত হয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক সেবামূলক কাজে অংশ নিতে পারবেন না। যেমন—বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা, রক্তদান কর্মসূচি বা অন্য কোনো সেবামূলক আয়োজনও এই সময়ে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
এছাড়া বৃহস্পতিবার রাতে জারি করা আরেকটি বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ডাকসু নির্বাচনে যেসব প্রার্থীর প্রার্থিতা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে, তারা আগামী ২৩ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিল দাখিল করতে পারবেন। নির্ধারিত সময় অতিক্রম করলে আর কোনো আপিল গ্রহণ করা হবে না। নির্বাচনী তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে এবং প্রাথমিকভাবে ৪৬২টি মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
প্রধান রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তার আগে ২৩ আগস্ট আপিল নিষ্পত্তি করা হবে। এরপর চূড়ান্ত প্রার্থীর তালিকা প্রকাশ করা হবে এবং আনুষ্ঠানিক প্রচারণা শুরু হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রাক্তন ডাকসু নেতৃবৃন্দ এবং শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, ডাকসু নির্বাচন কেবল ছাত্র রাজনীতির পুনর্জাগরণই নয়, বরং এটি গণতান্ত্রিক চর্চারও একটি বড় অনুশীলন। তাই নির্বাচন যেন অর্থের প্রভাবে কলুষিত না হয়, সে জন্যই এত কড়া আচরণবিধি জারি করা হয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, ডাকসু নির্বাচন দেশের জাতীয় রাজনীতিতেও প্রভাব ফেলে। কারণ এখান থেকেই অনেক জাতীয় নেতা তৈরি হন। তাই এই নির্বাচনে ন্যায়পরায়ণতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।
সব মিলিয়ে, দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের ঘোষণা দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আগামী ৯ সেপ্টেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা কোনো ধরনের আর্থিক প্রলোভন, উপঢৌকন বা সেবামূলক কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবে না। এতে নির্বাচনী পরিবেশ আরও সুষ্ঠু ও প্রতিযোগিতামূলক হবে বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বাংলাবার্তা/এমএইচ