
ছবি: সংগৃহীত
চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নুসরাত ফারিয়া হত্যা চেষ্টা মামলায় অবশেষে জামিন পেয়েছেন। আজ মঙ্গলবার (২০ মে) ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) মোস্তাফিজুর রহমানের আদালত তাঁর জামিন আবেদন শুনানি শেষে এই আদেশ দেন। জামিন পাওয়ার পর আদালত চত্বর ও গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক আলোচনা।
সোমবার (১৯ মে) আলোচিত এই মামলায় ফারিয়াকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিল আদালত। এর আগে রোববার (১৮ মে) সন্ধ্যায় কানাডা থেকে দেশে ফেরার পর শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতার করার বিষয়টি চমক সৃষ্টি করে দেশব্যাপী। তবে তার আইনজীবীদের বক্তব্য অনুযায়ী, পুরো বিষয়টিই ছিল একটি ভুল বোঝাবুঝি ও সময়োপযোগী ব্যাখ্যার অভাব।
আজকের জামিন শুনানিতে তাঁর পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি তুলে ধরেন দুজন আইনজীবী—ফারান মো. আরাফ এবং মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন। আদালতে যুক্তি উপস্থাপন করতে গিয়ে অ্যাডভোকেট ফারান মো. আরাফ বলেন, “আদালত ন্যায়বিচার করেছেন। নুসরাত একজন নিরপরাধ নাগরিক, যিনি ঘটনার সময় দেশে ছিলেন না। তাকে গ্রেফতার করাটা একেবারেই অযৌক্তিক ছিল।” তিনি আরও বলেন, “একজন আন্তর্জাতিক সফরে থাকা ব্যক্তি কীভাবে দেশের অভ্যন্তরে সংঘটিত কোনো অপরাধে সরাসরি জড়িত হতে পারেন—এই বিষয়টি বিবেচনায় নিলেই বোঝা যায়, গ্রেফতার প্রক্রিয়ায় ত্রুটি ছিল।”
অন্যদিকে, অ্যাডভোকেট মোহাম্মদ ইফতেখার হোসেন বলেন, “আমরা ২২ মে শুনানির জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে আজই মামলার প্রতিবেদন দ্রুত ও দৃঢ়তার সঙ্গে আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। আমরা তাই আজই বিশেষভাবে জামিন আবেদন উপস্থাপন করি, যা আদালত আমলে নেন এবং শুনানি শেষে জামিন মঞ্জুর করেন।”
তিনি আরও জানান, “আপনারা জানেন, নুসরাত ফারিয়া ৯ জুলাই থেকে ১৪ আগস্ট পর্যন্ত কানাডায় অবস্থান করছিলেন। সেই সময়সীমার মধ্যে মামলার অভিযোগের প্রধান সময়কাল পড়ে না। ফলে আদালত এই প্রমাণ বিবেচনায় নেন এবং তার বিদেশে অবস্থানের সত্যতা যাচাই করে জামিন মঞ্জুর করেন।”
আইনজীবীরা বলেন, মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পুলিশ আদালতে দাখিল না করা পর্যন্ত এই জামিন বলবৎ থাকবে। অর্থাৎ, চূড়ান্ত প্রতিবেদন না আসা পর্যন্ত ফারিয়াকে আর হাজতে যেতে হবে না। তবে আইনানুগ প্রক্রিয়ায় তাঁকে সব ধরনের সহযোগিতা করতে প্রস্তুত বলে জানান তার আইনজীবীরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যে মামলায় নুসরাত ফারিয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল তা মূলত একটি ব্যক্তিগত বিরোধের সূত্র ধরে দায়ের হয়। ওই মামলায় অভিযোগ ছিল, অভিযুক্ত দল নাকি ভিকটিমের প্রতি ‘হত্যা চেষ্টামূলক আচরণ’ করেছে। কিন্তু এ বিষয়ে নুসরাত ফারিয়ার সরাসরি সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি বলে দাবি করেছেন তার আইনজীবীরা।
নুসরাত ফারিয়ার গ্রেফতারের পর দেশের বিনোদন অঙ্গনেও তৈরি হয়েছিল উত্তেজনা ও উদ্বেগ। তার সহকর্মী, ভক্ত ও সিনেপ্রেমীরা বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার হয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট দিতে থাকেন। তাদের দাবি ছিল, একজন প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী, যিনি আন্তর্জাতিক সফরে ছিলেন, তার বিরুদ্ধে এমন আচরণ ‘অপমানজনক’ এবং ‘অন্যায্য’।
এই জামিন আদেশের মাধ্যমে আপাতত একটি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন নুসরাত ফারিয়া ও তার পরিবার। তবে মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আইনি প্রক্রিয়া চলমান থাকবে।
এই ঘটনার মাধ্যমে আবারো প্রশ্ন উঠেছে—বিদেশে থাকা অবস্থায় কারো বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ উঠলে তা কতটা গ্রহণযোগ্য এবং একজন নাগরিকের আইনগত অধিকার কীভাবে রক্ষা করা হবে? আইনজীবীরা মনে করছেন, এই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে ‘ইন্টারন্যাশনাল ট্রাভেল অ্যালিবাই’-এর গুরুত্ব দেশের বিচারব্যবস্থায় নতুন করে মূল্যায়নের দাবি রাখে।
এদিকে, জামিন আদেশের পর নুসরাত ফারিয়ার পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য না এলেও ঘনিষ্ঠ সূত্র জানিয়েছে, তিনি নিজেও আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি আস্থা রাখছেন এবং নিজের নির্দোষিতা প্রমাণে প্রয়োজনীয় সব কিছু করবেন।
এই মামলার শুরু থেকে আজকের জামিন পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে পুলিশের তৎপরতা, আদালতের বিচারিক প্রজ্ঞা ও আইনজীবীদের যুক্তিভিত্তিক লড়াই বিচারব্যবস্থার একটি উদাহরণ হয়ে থাকবে। নুসরাত ফারিয়া আপাতত মুক্ত, তবে মামলার পূর্ণ নিষ্পত্তি পর্যন্ত তার জীবনে অনিশ্চয়তা থেকে যাচ্ছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ