
ছবি: সংগৃহীত
বিনোদন জগতের পরিচিত মুখ ও জনপ্রিয় কনটেন্ট ক্রিয়েটর তৌহিদ আফ্রিদি এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংঘটিত এক হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।
রোববার (২৪ আগস্ট) রাতে বরিশালে বিশেষ অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করে সিআইডি। পরে তাকে ঢাকায় আনা হয়। সোমবার সকালে আদালতে হাজির করা হবে বলে জানিয়েছেন সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার (মিডিয়া) জসীম উদ্দিন খান।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে ঘটে যাওয়া সংঘর্ষে আসাদুল হক বাবু নামে এক তরুণ নিহত হন। এ ঘটনায় যাত্রাবাড়ী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় মোট ২৫ জনকে আসামি করা হয়, যাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রধান আসামি, সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় আসামি এবং সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক আব্দুল্লাহ আল মামুন তৃতীয় আসামি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত।
তৌহিদ আফ্রিদিকে এই মামলায় ১১ নম্বর আসামি করা হয়েছে। একই মামলায় তার বাবা ও মাইটিভির চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন সাথীকেও আসামি করা হয়েছে (২২ নম্বর আসামি)। নাসির উদ্দিন সাথীকে গত ১৭ আগস্ট গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর পুলিশ। পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে ২৩ আগস্ট তাকে আদালত কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
সিআইডি বলছে, আন্দোলনের সময়কার ঘটনার সঙ্গে তৌহিদ আফ্রিদির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়ে তারা প্রাথমিক তথ্য পেয়েছে। তবে তদন্ত সম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত বিস্তারিত জানানো সম্ভব নয়।
সিআইডির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ মামলায় রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে শুরু করে প্রভাবশালী ব্যবসায়ী পরিবার পর্যন্ত অনেকেই জড়িয়ে আছেন। কারও জন্য ছাড় নেই। আদালতের নির্দেশে আমরা সবাইকে আইনের মুখোমুখি করছি।”
আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার সুমনা রহমান বলেন, “তৌহিদ আফ্রিদি বিনোদন জগতে সক্রিয় হলেও যদি তার বিরুদ্ধে সরাসরি প্রমাণ থাকে, তবে তাকে অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। এই মামলার বিশেষত্ব হলো—এখানে সাবেক প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে শোবিজ ব্যক্তিত্ব পর্যন্ত নাম এসেছে। এতে বোঝা যায় আন্দোলনকালে রাজনৈতিক, প্রশাসনিক এবং সামাজিক বিভিন্ন স্তরের ব্যক্তিরা একই মামলায় অভিযুক্ত হয়েছেন।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. তানভীর হাসান মনে করেন, “তৌহিদ আফ্রিদির গ্রেফতার দেখাচ্ছে যে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এখন আর কাউকেই অযাচিত ছাড় দিচ্ছে না। তবে মামলার তদন্ত যেন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে প্রভাবিত না হয়, সেটিই বড় চ্যালেঞ্জ।”
তৌহিদ আফ্রিদির বিপুল সংখ্যক অনুরাগী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গ্রেফতার ইস্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। কেউ কেউ তার মুক্তি দাবি করছেন, আবার অনেকেই বলছেন—আইনের চোখে সবাই সমান হওয়া উচিত।
একজন অনুসারী লিখেছেন, “আমরা তাকে কনটেন্ট ক্রিয়েটর হিসেবে জানি। কিন্তু যদি তিনি সত্যিই অপরাধে জড়িত থাকেন, তবে বিচার হওয়া উচিত।”
সব মিলিয়ে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সেই হত্যাকাণ্ড এখন দেশের অন্যতম আলোচিত মামলা। আর সেই মামলায় তৌহিদ আফ্রিদির নাম যুক্ত হওয়ায় বিষয়টি আরও বেশি সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচও