
ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে বহুল আলোচিত ও চর্চিত একটি প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি চলছে—ফিরে আসছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দীর্ঘদিন লন্ডনে চিকিৎসা শেষে তিনি আগামী মঙ্গলবার, ৬ মে দেশে ফিরছেন। বিএনপি থেকে বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।
বেগম জিয়ার দেশে ফেরাকে কেন্দ্র করে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে এক ধরনের উদ্দীপনা। দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে বরণ করতে রাস্তায় নেমে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে এ অভ্যর্থনাকে কেন্দ্র করে যাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা বা নিরাপত্তা বিঘ্ন না ঘটে, সে বিষয়েও দলের হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে কড়া নজরদারির পাশাপাশি বিস্তারিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছেন, খালেদা জিয়ার আগমন উপলক্ষে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে শুরু করে গুলশানের বাসভবন ‘ফিরোজা’ পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে থাকবে নিরাপত্তার কঠোর বলয়। সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক সংস্থাগুলোর সঙ্গে দলীয় পর্যায়েও চলছে সমন্বয়।
বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, চেয়ারপারসনের গাড়িবহরের সঙ্গে কেউ যেন মোটরসাইকেল বা পায়ে হেঁটে চলাচল না করে, সে বিষয়ে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে, কেউ যেন বিমানবন্দর কিংবা চেয়ারপারসনের বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা না করেন। পরিবর্তে রাস্তার পাশে জাতীয় ও দলীয় পতাকা হাতে শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে তাকে অভ্যর্থনা জানানোর আহ্বান জানানো হয়েছে।
শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে এবং ভিড় সামাল দিতে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সাক্ষরিত একটি বিস্তারিত বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের জন্য নির্দিষ্ট এলাকাভিত্তিক অবস্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে:
উত্তর বিএনপি অবস্থান নেবে বিমানবন্দর থেকে লা মেরিডিয়ান পর্যন্ত, ছাত্রদল থাকবে লা মেরিডিয়ান থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত, দক্ষিণ বিএনপি রেডিসন হোটেল থেকে আর্মি স্টেডিয়াম পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবে।
এরপর যথাক্রমে:
স্বেচ্ছাসেবক দল থাকবে আর্মি স্টেডিয়াম থেকে বনানী কবরস্থান পর্যন্ত, কৃষক দল বনানী কবরস্থান থেকে কাকলী মোড় পর্যন্ত, শ্রমিক দল কাকলী মোড় থেকে বনানী শেরাটন হোটেল পর্যন্ত অবস্থান নেবে, ওলামা দল, তাঁতী দল, জাসাস ও মৎস্যজীবী দল শেরাটন হোটেল থেকে বনানী কাঁচাবাজার পর্যন্ত অবস্থান করবে।
এছাড়া:
মুক্তিযোদ্ধা দল ও পেশাজীবী সংগঠনগুলো বনানী কাঁচাবাজার থেকে গুলশান-২ পর্যন্ত থাকবে, মহিলা দল গুলশান-২ গোলচত্বর থেকে গুলশান অ্যাভিনিউ রোড পর্যন্ত থাকবে, জাতীয় স্থায়ী কমিটির নেতৃবৃন্দ গুলশান-২ গোলচত্বর থেকে গুলশান এভিনিউ রোডের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করবে।
বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে আগত নেতাকর্মীদের বলা হয়েছে, তারা যেন যাতায়াত সুবিধা অনুযায়ী নির্ধারিত এলাকায় থেকে দলের শৃঙ্খলা বজায় রেখে অংশ নেন।
দলের পক্ষ থেকে বারবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া হচ্ছে যে, খালেদা জিয়ার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা প্রকাশ করতে গিয়ে যেন কোনো নেতাকর্মী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা বা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করেন। দলীয় বিবৃতিতে বলা হয়, “অভ্যর্থনা হবে শান্তিপূর্ণ, শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং প্রতীকী, যেন দেশের জনগণের কাছে নেত্রীর জনপ্রিয়তা দৃশ্যমান হয়; কোনো সংঘাত বা অপ্রীতিকর ঘটনার সুযোগ কেউ যেন না পায়।”
বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য লন্ডনে অবস্থান রাজনৈতিক ও মানবিক দুই দিক থেকেই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই দীর্ঘ অনুপস্থিতির পর তার দেশে প্রত্যাবর্তন শুধু রাজনৈতিক নয়, দলের জন্য এক আবেগঘন মুহূর্ত হয়ে উঠেছে। অনেকেই বলছেন, এটি হতে যাচ্ছে একটি ‘রাজনৈতিক বার্তা বহনকারী প্রত্যাবর্তন’। খালেদা জিয়া কী বার্তা নিয়ে ফিরছেন, তা নিয়েও রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে আলোচনা।
এই প্রত্যাবর্তন ঘিরে যেমন প্রস্তুতি নিচ্ছে বিএনপি, তেমনি প্রশাসনও রয়েছে সতর্ক। এখন দেখার বিষয়—সব আয়োজনের পর মঙ্গলবারের দিনটি কীভাবে অতিবাহিত হয়। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—দলের নেতাকর্মীদের চোখে এখন শুধুই এক নেত্রী, যিনি দীর্ঘ অনুপস্থিতি শেষে ফিরে আসছেন নিজ মাতৃভূমিতে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ