
ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশের আইনি অঙ্গনে এক দীর্ঘ ও গৌরবময় অধ্যায়ের সমাপ্তি হলো। ক্যানসারের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই শেষে না ফেরার দেশে পাড়ি জমালেন দেশের প্রথিতযশা আইনজীবী এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
রোববার (৫ মে ২০২৫) বিকেল ৪টা ১০ মিনিটে রাজধানীর ধানমন্ডিস্থ ইবনে সিনা হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকা অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন সুপ্রিম কোর্টের অপর প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির।
বহু বছর ধরে ক্যানসারে আক্রান্ত ছিলেন ব্যারিস্টার রাজ্জাক। রোগটি ধরা পড়ার পর থেকে তিনি দেশ-বিদেশে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু সম্প্রতি শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে তাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে শেষ পর্যন্ত চলে গেলেন তিনি।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশের আইন অঙ্গনের একটি সুপরিচিত ও শ্রদ্ধাভাজন নাম। তিনি শুধু একজন আইনজীবী নন, বরং দেশের বিচার ব্যবস্থায় ন্যায়বিচার, মানবাধিকার ও সাংবিধানিক শাসনের পক্ষে সোচ্চার কণ্ঠ হিসেবে পরিচিত ছিলেন।
যুক্তরাজ্য থেকে ব্যারিস্টারি ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি বাংলাদেশে ফিরে এসে পেশাগত জীবনের শুরু করেন। আইনজীবী হিসেবে তার সফলতা ও সুনাম দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টে তিনি একাধিক যুগান্তকারী মামলার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, যার মধ্যে মানবাধিকার, সাংবিধানিক ব্যাখ্যা ও রাজনৈতিক মামলার জটিল সব প্রেক্ষাপটও ছিল।
আইনজীবী হিসেবে শুধু আদালতে নয়, সমাজে নৈতিক নেতৃত্ব প্রদানের ক্ষেত্রেও তার ভূমিকা ছিল গুরুত্বপূর্ণ। মানবাধিকার লঙ্ঘন, রাজনৈতিক নিপীড়ন, এবং সংবিধান পরিপন্থী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে তিনি বরাবরই সোচ্চার ছিলেন। বহু বিতর্কিত মামলায়ও তিনি আইনের ব্যাখ্যা ও যুক্তির মাধ্যমে ন্যায় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন।
একাধিক মানবাধিকার সংগঠনের সঙ্গে তিনি যুক্ত ছিলেন, এবং তরুণ আইনজীবীদের প্রশিক্ষণ ও নেতৃত্ব তৈরির ক্ষেত্রেও তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অতিথি বক্তা হিসেবে তিনি শিক্ষার্থীদের মাঝে আইন ও নৈতিকতা বিষয়ক চিন্তার বিকাশে কাজ করেছেন।
ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের মৃত্যুতে দেশের আইনজীবী সমাজে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সিনিয়র থেকে জুনিয়র—সব আইনজীবীর কাছেই তিনি ছিলেন সম্মানিত, নির্ভরযোগ্য ও নীতিনিষ্ঠ এক মানুষ। তার সহকর্মীরা বলছেন, তিনি ছিলেন একজন ‘বিচার ও সত্যের সৈনিক’।
অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, “ব্যারিস্টার রাজ্জাক শুধু একজন আইনজীবী ছিলেন না; তিনি ছিলেন এক বাতিঘর, যিনি পুরো প্রজন্মকে পথ দেখিয়েছেন।”
মরহুমের জানাজা ও দাফন বিষয়ে এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি। তবে জানা গেছে, তার পরিবারের পক্ষ থেকে জানাজার স্থান ও সময় শিগগিরই জানানো হবে। সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনসহ বিভিন্ন আইনজীবী সংগঠন তার মৃত্যুকে জাতীয় ক্ষতি হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং গভীর শোক প্রকাশ করেছে।
বাংলাদেশের বিচারাঙ্গনে ব্যারিস্টার আব্দুর রাজ্জাকের অবদান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে। পেশাদারিত্ব, সততা এবং ন্যায়ের প্রতি অটল বিশ্বাসের কারণে তিনি আজীবন সম্মানিত হবেন। তার মৃত্যুতে যে শূন্যতা সৃষ্টি হলো, তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়।
বাংলাবার্তা/এমএইচ