
ছবি: সংগৃহীত
নারী সংস্কার কমিশনের বেশ কিছু সুপারিশকে ‘ইসলামি শরিয়াহবিরোধী’, ‘জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতকারী’ এবং ‘সংবিধানবিরোধী’ আখ্যা দিয়ে সেগুলো বাস্তবায়নের আগে উচ্চ আদালতের পর্যালোচনার আওতায় আনার দাবি উঠেছে। এ প্রেক্ষিতে হাইকোর্টে দায়ের করা হয়েছে একটি জনস্বার্থে রিট, যেখানে ওইসব সুপারিশ পর্যালোচনায় একটি স্বাধীন বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে।
রোববার (৪ মে) একজন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় এই রিট আবেদন দাখিল করেন। তিনি জানান, নারী সংস্কার কমিশনের প্রকাশিত চূড়ান্ত সুপারিশে এমন কিছু প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা দেশের ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংবিধানিক কাঠামোর সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
রিট আবেদনে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে কমিশনের ৩, ৪, ৬, ১০, ১১ ও ১২ নম্বর সুপারিশগুলো। আবেদনে বলা হয়, এ প্রস্তাবনাগুলো সরাসরি ইসলামি পারিবারিক ও উত্তরাধিকার আইন, প্রচলিত ধর্মীয় বিধান এবং জনগণের বিশ্বাসের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। ফলে এগুলোর বাস্তবায়ন সামগ্রিক সমাজে বিভ্রান্তি ও দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে।
সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে:
বিবাহ ও তালাকের ক্ষেত্রে নারীর সমান সিদ্ধান্ত গ্রহণের অধিকার
পুরুষ ও নারীর সমান উত্তরাধিকার
যৌতুক ও তালাকের পর সম্পত্তির বণ্টনে পরিবর্তন
অভিভাবকত্ব ও সন্তানের হেফাজতে সমতা
বহু বিবাহ নিষিদ্ধকরণ
ধর্মভিত্তিক পারিবারিক আইন সংস্কারের প্রস্তাব
এইসব সুপারিশের বাস্তবায়ন ইসলাম ধর্মের নির্ধারিত বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলেও আবেদনে উল্লেখ করা হয়।
রিট আবেদনে হাইকোর্টের কাছে দুটি প্রধান নির্দেশনা চাওয়া হয়েছে—
নারী সংস্কার কমিশনের বিতর্কিত সুপারিশগুলো পর্যালোচনায় ধর্মীয় ও আইনগত বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে একটি স্বাধীন কমিটি গঠনের নির্দেশ।
রিট নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন না করার জন্য সরকারের প্রতি অন্তর্বর্তীকালীন নিষেধাজ্ঞা।
আবেদনকারী আইনজীবী বলেন, “যেকোনো সংস্কার উদ্যোগ গ্রহণের আগে এটি নিশ্চিত করতে হবে যে তা জনগণের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত না করে, বরং সাংবিধানিক এবং সামাজিক কাঠামোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয়। একতরফা প্রস্তাব দিয়ে সমাজে অস্থিরতা তৈরি করা অনভিপ্রেত।”
নারীর অধিকার ও সমতা নিশ্চিত করতে গঠিত নারী সংস্কার কমিশন সম্প্রতি একটি সুপারিশনামা সরকারের কাছে হস্তান্তর করে। তবে তা প্রকাশিত হওয়ার পর থেকেই একাংশের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। বিশেষ করে ধর্মীয় সংগঠন ও কিছু নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এসব সুপারিশকে ‘শরিয়াবিরোধী’ বলে প্রতিবাদ জানায়।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছে, এ ধরনের সংস্কারই নারীর মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠার পথ সুগম করবে। আইনজীবীদের একাংশও মনে করে, সংবিধানের ২৭, ২৮ ও ৩১ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠা করতে গেলে পারিবারিক আইনেও ন্যায্যতার ভিত্তিতে কিছু সংস্কার প্রয়োজন।
রিটের বিষয়ে এখনো আদালত শুনানির দিন ধার্য করেনি। তবে আগামী সপ্তাহেই বিষয়টি হাইকোর্টের বেঞ্চে উত্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। হাইকোর্ট কী ধরনের অন্তর্বর্তী নির্দেশনা দেন, সেটিই আগামী দিনে কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের গতিপথ নির্ধারণ করবে।
নারী অধিকার নিশ্চিত করতে গঠিত কমিশনের সুপারিশ নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। ধর্মীয় ও আইনগত সংবেদনশীলতা বিবেচনায় এ বিষয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ ও সংবেদনশীল সমাধান প্রয়োজন বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন। আদালতের পর্যবেক্ষণ ও নির্দেশনাই হয়তো এই বিষয়ে পরবর্তী রাজনৈতিক ও সামাজিক সিদ্ধান্তে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ