
ছবি: সংগৃহীত
আগামী আগস্ট মাসে বাংলাদেশ সফরে আসার কথা রয়েছে ভারতের জাতীয় ক্রিকেট দলের। সফরে তারা খেলবে দুটি সাদা বলের সিরিজ—একটি ওয়ানডে এবং একটি টি-টোয়েন্টি সিরিজ। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) এরই মধ্যে এই সিরিজের সম্ভাব্য সূচি প্রস্তুত করেছে এবং ভারতের ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) সঙ্গে আলোচনা করে সফরের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছে বলে জানানো হয়েছে। তবে সম্প্রতি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন ঘিরে সিরিজটি নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা ও সংশয়।
গত ২ মে (শুক্রবার) ভারতীয় প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি প্রতিবেদনে দাবি করে, ভারতের বাংলাদেশ সফর নিয়ে এখনো চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি এবং নির্ধারিত সময় অনুযায়ী সফর অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাও নাকি খুব একটা উজ্জ্বল নয়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিসিআই সংশ্লিষ্ট একটি সূত্রের বরাত দিয়ে পত্রিকাটি জানায়, আগস্টের সূচিতে ভারতের ব্যস্ততা ও অন্যান্য বিবেচনার কারণে সফর নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এই খবর প্রকাশের পরই বাংলাদেশি ক্রিকেটপ্রেমীদের মধ্যে উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। অনেকেই ভাবতে শুরু করেন, সিরিজটি হয়তো স্থগিত হতে যাচ্ছে কিংবা শেষ মুহূর্তে বড় কোনো পরিবর্তন আসতে পারে। তবে বিসিবির শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন যে এখন পর্যন্ত ভারতীয় বোর্ডের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের পরিবর্তনের আভাস দেওয়া হয়নি।
শনিবার (৩ মে) রাজধানীর মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় বিভাগ ক্রিকেট লিগের বাছাইপর্বের ফাইনালের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ। সেখানে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন,
“এই মুহূর্তে ভারতের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে সিরিজ নিয়ে তেমন কিছু জানানো হয়নি। একটি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে একটি খবর দেখেছি। তবে ভারত পুরো সফর কনফার্ম করেছে, সূচিও তৈরি হয়ে গেছে। আমি আইসিসির সভায় দুইবার গিয়েছি। জয় শাহের সঙ্গেও কথা হয়েছে, নতুন সেক্রেটারি দেবজিৎ সইকিয়ার সঙ্গেও আলোচনা করেছি। আমার মনে হয়, সেখান থেকেই আমরা একটি সূচি পেয়েছি। এখনো মনে করি, এই সিরিজটি নির্ধারিত সময়েই অনুষ্ঠিত হবে।”
ফারুক আহমেদ আরও যোগ করেন, সিরিজটি বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ এবং ক্রিকেটীয় ক্যালেন্ডারের মধ্যেই হিসেব করে এই সূচি তৈরি করা হয়েছে। ফলে, শেষ মুহূর্তে যদি ভারত সফর বাতিল করে, তাহলে সেটা বিস্ময়ের জন্ম দেবে বলেই তার মত।
এদিকে, বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স বিভাগের চেয়ারম্যান নাজমুল আবেদিন ফাহিমও ভারত সফর নিয়ে ইতিবাচক বার্তা দিয়েছেন। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “আমাদের কাছে এখনো সিরিজ স্থগিত হওয়ার কোনো আনুষ্ঠানিক খবর আসেনি। ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড বা তাদের পক্ষ থেকে কারো সঙ্গে আমাদের যোগাযোগে এমন কোনো ইঙ্গিত দেওয়া হয়নি। সুতরাং আমরা ধরে নিচ্ছি যে, সিরিজ যথাসময়েই অনুষ্ঠিত হবে।”
যদিও ভারতীয় বোর্ড (বিসিসিআই) এখনো পর্যন্ত টাইমস অব ইন্ডিয়া-র ওই প্রতিবেদন সম্পর্কে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি। তবে ক্রিকেট দুনিয়ায় অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলো অনেক সময় শেষ মুহূর্তে প্রকাশ পায়। এক্ষেত্রে সফরটি নিয়ে এখনো কিছুটা অপেক্ষা করেই থাকতে হচ্ছে। তবে বিসিবির পক্ষ থেকে বারবার আশ্বস্ত করা হয়েছে যে, তারা সিরিজ আয়োজনের জন্য প্রস্তুত এবং সব ধরনের আয়োজনও সম্পন্ন করা হয়েছে।
অন্যদিকে, এই সফরটি শুধু দুই দেশের ক্রিকেটীয় সম্পর্কের দিক থেকেই নয়, বাংলাদেশ দলের ভবিষ্যৎ প্রস্তুতির জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে ২০২৫ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিকে সামনে রেখে সাদা বলের এই সিরিজগুলোতে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে খেলার সুযোগ পাওয়াকে চূড়ান্তভাবে কাজে লাগাতে চায় টাইগাররা।
যদি ভারত সফরে আসে, তাহলে সম্ভাব্য সূচি অনুযায়ী আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে শেষ সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হতে পারে ম্যাচগুলো। সিরিজের ভেন্যু ও নির্দিষ্ট তারিখ ঘোষণা করা হবে দুই বোর্ডের চূড়ান্ত সম্মতির ভিত্তিতে। বিসিবি চাইছে, ঢাকা ও চট্টগ্রাম মিলিয়ে ম্যাচগুলো আয়োজন করতে।
ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ শুধু খেলোয়াড়দের অভিজ্ঞতা বাড়ায় না, বরং বাণিজ্যিক দিক থেকেও দেশের ক্রিকেট বোর্ডের জন্য আয়ের বড় একটি উৎস হয়ে দাঁড়ায়। তাই সফরটি স্থগিত হলে আর্থিক ও ক্রীড়াগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বাংলাদেশ।
সবকিছু মিলিয়ে এখন পুরো ক্রিকেটাঙ্গন তাকিয়ে আছে ভারতের সিদ্ধান্তের দিকে। তবে বিসিবি সভাপতি যেভাবে আশাবাদী বক্তব্য দিয়েছেন, তাতে করে আশা জাগছে—আগস্টে বাংলাদেশের মাটিতে আবারও ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেটের উত্তাপ দেখা যেতে পারে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ