
ছবি: সংগৃহীত
দেশজুড়ে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ুয়া এতিম, দুস্থ, প্রতিবন্ধী এবং প্রান্তিক পরিবারের মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য আশার আলো হয়ে এসেছে একটি নতুন সরকারি উদ্যোগ। সরকার ঘোষণা দিয়েছে, এসব শিক্ষার্থীদের মাধ্যমিক ও সমমান স্তরে ভর্তি নিশ্চিত করতে এবং তাদের শিক্ষাজীবনকে অব্যাহত রাখতে সহায়তা দেওয়া হবে শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের মাধ্যমে। এমন সিদ্ধান্ত অর্থনৈতিক সংকটে বিপর্যস্ত অনেক পরিবারের জন্য নিঃসন্দেহে বড় একটি স্বস্তির বার্তা।
২০২৫ শিক্ষাবর্ষে যারা নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছে বা এখনও অধ্যয়নরত রয়েছে, তাদের মধ্যে যোগ্য শিক্ষার্থীরা এই সহায়তার জন্য আবেদন করতে পারবেন। ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, অনলাইনের মাধ্যমে আবেদন করার সুযোগ থাকবে, এবং নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে—২০২৫ সালের ২২ মে’র মধ্যে—আবেদন সম্পন্ন করতে হবে।
কারা পাবেন এই সহায়তা?
এই সহায়তা কার্যক্রম মূলত নিম্ন আয়ের পরিবারভুক্ত এমন শিক্ষার্থীদের জন্য, যারা অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতার কারণে পড়াশোনার পথে বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সহায়তা দেওয়া হবে নিম্নোক্ত শ্রেণিভুক্ত শিক্ষার্থীদের:
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী
এতিম শিক্ষার্থী
ভূমিহীন পরিবারের সন্তান
নদীভাঙনের ফলে বাস্তুচ্যুত পরিবারের সন্তান
প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সন্তান
অসচ্ছল বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান
অতিদরিদ্র পরিবারের সন্তান
এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত শিক্ষার্থীদের আবেদনপত্র যাচাই-বাছাইয়ের সময় অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে নিশ্চিত করেছে ট্রাস্ট কর্তৃপক্ষ।
আবেদন প্রক্রিয়া ও প্রমাণপত্র
এই সহায়তার জন্য আবেদন করতে শিক্ষার্থীদের নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে আবেদনপত্র পূরণ করতে হবে এবং আবেদন করার সময় তাদের দাবির পক্ষে যথাযথ প্রমাণপত্র অনলাইনে আপলোড করতে হবে। যেমন:
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে মেডিকেল সনদপত্র
এতিমের ক্ষেত্রে অভিভাবকবিহীনতার প্রমাণ
ভূমিহীন বা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া সনদ
বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়ার ক্ষেত্রে মুক্তিযোদ্ধা সনদ
প্রাকৃতিক দুর্যোগের প্রমাণপত্র ইত্যাদি
এইসব নথিপত্র যাচাই-বাছাইয়ের পরই ট্রাস্ট উপযুক্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা চূড়ান্ত করবে এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তাদের সহায়তা প্রদান করবে।
শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট: উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট
বাংলাদেশ সরকার পরিচালিত শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্ট দীর্ঘদিন ধরে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের জন্য উপবৃত্তি, এককালীন অনুদান ও বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনার ব্যবস্থা করে আসছে। এবার সেই কার্যক্রমের আওতা বাড়িয়ে ভর্তি সহায়তাও যুক্ত করা হয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের শিক্ষা অব্যাহত রাখতে বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এই উদ্যোগ শিক্ষার সাম্য ও অন্তর্ভুক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশের এক বড় জনগোষ্ঠী এখনো অর্থনৈতিক কারণে শিক্ষার মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকার যদি এই সহায়তা যথাযথভাবে বিতরণ করতে পারে, তাহলে এটি শিক্ষার ঝরেপড়া রোধে বড় ধরনের ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
দুস্থ, এতিম ও প্রতিবন্ধী মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য এই সহায়তা কর্মসূচি একটি সময়োপযোগী এবং মানবিক পদক্ষেপ। আর্থিক সীমাবদ্ধতায় যারা শিক্ষাজীবন নিয়ে অনিশ্চয়তায় ছিল, তাদের জন্য এই সহায়তা হতে পারে এক নতুন আশার আলো। তবে আবেদন প্রক্রিয়াটি সহজ, স্বচ্ছ এবং শিক্ষার্থীবান্ধব করতে হলে অনলাইন প্ল্যাটফর্মের কার্যকর ব্যবস্থাপনা এবং তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করাও জরুরি।
বাংলাবার্তা/এমএইচ