
ছবি: সংগৃহীত
পাঁচ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শনিবার সকাল থেকে মহাসমাবেশ শুরু করেছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। সংগঠনটির ডাকা এই কর্মসূচিকে ঘিরে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশের এলাকায় ভোর থেকেই নেতাকর্মীদের ঢল নামে। ফজরের নামাজের পরপরই দেশের বিভিন্ন জেলা ও মহানগর থেকে ছোট-বড় বহর নিয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছাতে থাকেন হেফাজতের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক।
সকাল ৭টার আগেই মূল সমাবেশস্থলে কয়েক হাজার মানুষের সমাগম ঘটে। আয়োজকদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বেলা ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত চলবে এই মহাসমাবেশ। এর জন্য উদ্যানের দক্ষিণাংশে বিশালাকার মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে। মঞ্চটি সরাসরি কাবা ঘরমুখী করে নির্মাণ করা হয়েছে যাতে মুসল্লিরা জামাতে নামাজ আদায়েও সুবিধা পান।
সমাবেশের মূল দাবি চারটি:
১. নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশন ও তার প্রস্তাব বাতিল,
২. শাপলা চত্বরে সংঘটিত 'গণহত্যার' বিচার নিশ্চিত করা,
৩. হেফাজতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার,
৪. মুসলিম বিশ্বে বিশেষত ফিলিস্তিন ও ভারতে মুসলমানদের ওপর চলমান নিপীড়নের বিরুদ্ধে সরকারের কার্যকর ভূমিকা নিশ্চিত করা।
হেফাজত নেতারা বলছেন, এসব দাবি দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের দীর্ঘদিনের প্রত্যাশার প্রতিফলন। এ বিষয়ে সরকারের নিরবতা ও বিরূপ ভূমিকা ইসলামপ্রিয় জনতার মনে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
সমাবেশের মাঠ ও আশপাশে ঢিলেঢালা নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিবর্তে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ব্যাপক উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) ও র্যাব সদস্যরা সকাল থেকেই মাঠ ও আশপাশে টহল দিচ্ছেন। গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারাও অবস্থান করছেন বিভিন্ন পয়েন্টে।
ঢাকার বাইরে থেকে আগতদের জন্য তিনটি নির্ধারিত প্রবেশ পয়েন্ট নির্ধারণ করেছে হেফাজত কর্তৃপক্ষ—যাত্রাবাড়ী, গাবতলী ও মহাখালী। এসব স্থান থেকেই বহর ও মিছিল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রবেশ করছে। এতে সমাবেশস্থলে শৃঙ্খলা রক্ষায় বড় ধরনের বিশৃঙ্খলার আশঙ্কা নেই বলে মনে করছে পুলিশ।
শুক্রবার (২ মে) বিকেলে মঞ্চ ও সমাবেশস্থল পরিদর্শন করেন হেফাজতের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তারা দেশের মুসলমানদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই কর্মসূচি হবে শান্তিপূর্ণ, সুশৃঙ্খল ও শালীন। ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আইন মেনে প্রতিবাদ জানানোই আমাদের লক্ষ্য। কেউ যেন উসকানিমূলক আচরণ না করেন।”
তারা আরো বলেন, “দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষ ইসলাম অবমাননা ও নাস্তিক্যবাদী অপচেষ্টায় ক্ষুব্ধ। সরকার যদি এখনো সচেতন না হয়, তবে দেশের মানুষের ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করবে।”
মহাসমাবেশ উপলক্ষে গত কয়েকদিন ধরেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ, মাইকিং ও লিফলেট বিতরণ করেছে হেফাজতের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে বাইতুল মোকাররম এলাকায় একাধিকবার মিছিল ও পথসভা করেছে তারা। এসব মিছিল থেকে সরকারের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে জনগণকে সমাবেশে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, শাপলা চত্বরে ২০১৩ সালের ঘটনার এক দশক পর এই মহাসমাবেশ হেফাজতের রাজনৈতিক ও ধর্মীয় অবস্থান নতুনভাবে পুনঃপ্রতিষ্ঠার ইঙ্গিত দিচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে গণহত্যা ও ইসলামবিরোধী পদক্ষেপের অভিযোগ তুলে তারা আবারও এক ধরনের চাপ প্রয়োগের কৌশলে নামছে।
হেফাজতের নেতারা আশাবাদী, আজকের মহাসমাবেশ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কণ্ঠ হয়ে সরকার ও আন্তর্জাতিক মহলের কাছে একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠাবে। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রেখে ইসলামের পক্ষে দাঁড়ানোর এই কর্মসূচি যেন সহিংসতায় রূপ না নেয়, সে বিষয়ে সবারই সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ