
ছবি: সংগৃহীত
চার মাস চিকিৎসা শেষে লন্ডন থেকে ৫ মে দেশে ফিরছেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। শুরুতে ধারণা করা হয়েছিল তিনি বাংলাদেশ বিমানের একটি নির্ধারিত ফ্লাইটে ফিরবেন। তবে শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত বদল করে কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির পাঠানো বিশেষ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তার দেশে ফেরার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান এই তথ্য জানিয়ে বলেন, “ম্যাডাম কাতারের আমিরের পাঠানো এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করেই ৫ মে দেশে ফিরবেন। যাত্রার নির্দিষ্ট সময় এখনো নির্ধারিত হয়নি, তবে প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে।”
এর আগে গত ২ মে শুক্রবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সংবাদমাধ্যমকে জানান, “চার মাস পর ৫ মে লন্ডন থেকে দেশে ফিরছেন ম্যাডাম। ইনশাআল্লাহ সকালে ঢাকায় অবতরণ করবেন। তার সঙ্গে থাকবেন পুত্রবধূ জোবাইদা রহমান (তারেক রহমানের স্ত্রী) এবং সৈয়দা শর্মিলা রহমান (আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী)।”
খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে ফখরুল ইসলাম বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ, আগের তুলনায় অনেকটাই সুস্থ বোধ করছেন তিনি।”
তবে তার দেশে ফেরার পথ সহজ ছিল না। শুরুতে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সটি টেকনিক্যাল সমস্যার কারণে বিলম্বিত হচ্ছিল। এ অবস্থায় বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ফেরার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে কাতার থেকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্স উড়াল দেওয়ার অনুমতি মেলে, ফলে সেই ব্যবস্থাই চূড়ান্ত হয়। এ নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, “বাংলাদেশ বিমানে যাওয়ার জন্যও সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছিল, কিন্তু বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সটি পাওয়া যাওয়ায় সেই পথেই ফিরছেন ম্যাডাম।”
দীর্ঘদিন পর খালেদা জিয়ার প্রত্যাবর্তন ঘিরে গুলশানে তার বাসভবন ফিরোজা নতুন করে প্রস্তুত করা হয়েছে। শায়রুল কবির জানান, “বিএনপি চেয়ারপারসনের বাসভবন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও নিরাপত্তামূলক দিক দিয়ে প্রস্তুত রাখা হয়েছে।”
দীর্ঘ রাজনৈতিক ও আইনি বাধা অতিক্রম করে দেশে ফেরা খালেদা জিয়ার এই যাত্রা বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ২০১৮ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা দুটি মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে পাঠানো হয়। এরপর তাকে রাখা হয় পুরান ঢাকার পুরনো কারাগারে। ২০২০ সালে করোনা মহামারির সময় সরকার তাকে বিশেষ বিবেচনায় সাজা স্থগিত করে গৃহবন্দি অবস্থায় মুক্তি দেয়। তবে রাজনৈতিকভাবে তিনি ছিলেন নিষ্ক্রিয় এবং অবরুদ্ধ।
পুনরায় রাজনৈতিক উত্তেজনার কেন্দ্রে আসেন গত বছরের আগস্টে, যখন ছাত্র-জনতার এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয় এবং রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন একটি বিশেষ আদেশে খালেদা জিয়ার পূর্ণ মুক্তির নির্দেশ দেন। এরপর সুপ্রিম কোর্ট দুর্নীতির দুটি মামলার রায় বাতিল করে তাকে সকল ধরনের আইনি বাধা থেকে মুক্ত করে।
এই মুক্তির পথ সুগম হওয়ার পর গত ৮ জানুয়ারি উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে লন্ডনে পাঠানো হয়। সেখানে লন্ডন ক্লিনিকে ১৭ দিন চিকিৎসা নেন তিনি। এরপর তারেক রহমানের বাসভবনে গিয়ে বিশ্রামে ছিলেন। এ সময়ে তিনি পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দীর্ঘদিন পর ঈদ উদযাপন করেন—যা তার রাজনৈতিক জীবনের বাইরে ব্যক্তিগতভাবে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মুহূর্ত।
তার দেশে ফেরা নিশ্চিত করতে বিএনপি মহাসচিব সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনকে চিঠি দেন, যাতে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সেই নির্দেশ অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করে, যার অংশ হিসেবে লন্ডন ও দোহায় বাংলাদেশের হাইকমিশন সক্রিয়ভাবে প্রস্তুতি নেয়।
সব মিলিয়ে ৫ মে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক দিন হতে যাচ্ছে। ৭৮ বছর বয়সী এই নেত্রীর দেশে ফেরাকে ঘিরে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে যেমন উৎসাহ ও আবেগ দেখা যাচ্ছে, তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনেও নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। দীর্ঘ নির্বাসন ও অসুস্থতার পর কীভাবে সক্রিয় রাজনীতিতে তিনি ফিরবেন—তা এখন রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কৌতূহলের কেন্দ্রে।
বাংলাবার্তা/এমএইচ